একটি ব্র্যান্ড যতই বিখ্যাত হয়ে ওঠে, তার প্রচার-প্রচারণার জন্য পরিচিত মুখের প্রয়োজন পড়ে। সহজ বাংলায় যাকে বলে ‘বিজ্ঞাপন’। তাই ২০০৯ সালে ভারতীয় ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিং ধোনি ম্যাক্স মোবাইলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হলেন, তখনই সকলে বুঝে ফেললেন প্রতিষ্ঠানটি প্রযুক্তি অঙ্গনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় আগ্রাসী ক্যাম্পেইনিং তারই অন্যতম নজির। এ সাফল্য তেমনই, যেমনটা ম্যাক্স মোবাইলের প্রতিষ্ঠাতা অজয় আগারওয়াল দেখতে চেয়েছিলেন। হ্যাঁ, সেই অজয় আগারওয়ালই, যিনি ১৪ বছর বয়সেই স্কুল ড্রপআউট হয়েছিলেন। খ্যাতনামা ব্যাবসায়ী এবং ম্যাক্স মোবাইলের প্রতিষ্ঠাতা কর্ণধার ১৯৯২ সালে চিলড্রেন একাডেমি স্কুলের স্ট্যান্ডার্ড নাইন থেকে ড্রপআউট হন, যখন তার বয়স মাত্র ১৪।
প্রথাগত শিক্ষা সম্পর্কে বিতৃষ্ণা থেকে যোগ দেন পিতার ইলেক্ট্রনিক ট্রেড ব্যবসায়। অর্থনৈতিক সংকটজনিত কোনো কারণে নয়, ব্যবসা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য। পিতার আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখার জন্য তিনি মাসে ৪০০০-৫০০০ রূপি পেতেন, যা তার প্রথম রোজগার। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তারা একটা প্রযুক্তি বিপ্লবের মুখোমুখি দাড়িয়ে আছেন। তাই তিনি এ ব্যাপারে বিশদ জ্ঞান অর্জনের জন্য মালয়েশিয়া এবং চীনে ভ্রমণ করেন।
২০০৪ সালে অজয় ব্যাটারী, চার্জার, ইয়ারফোনের মতো আনুষঙ্গিক সামগ্রী নির্মাণে আত্মনিয়োগ করেন। প্রথম বছরেই কোম্পানী ৫ লাখ টাকার মতো আয় করে, যা এ শিল্পের সম্ভাবনা উপলব্ধি করার জন্য যথেষ্ট ছিল। মূলত তিনি সে সকল লোকের মধ্যে অন্যতম, যারা আসন্ন টেলিকম বিপ্লবের সম্ভাবনা আঁচ করতে পেরেছিলেন। ২০০৬ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ প্রায় ৫০ কোটি রুপি ছাড়িয়ে যায়।
২০০৮ সালের আগস্টে ম্যাক্স মোবাইল ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অজয় বৃহৎ আন্তর্জাতিক মোবাইল বাজারে প্রবেশ করেন। প্রথম ছয় মাস নিজের বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল হতে ফিডব্যাক হতে উৎপাদিত ২০ টি সেলফোন মডেলের পরিবর্ধন-পরিমার্জন সাধন করেন। বর্তমানের এক হিসাব অনুযায়ী, ম্যাক্স মোবাইলের আয়ের ৮০ শতাংশই ফিচার সেলফোন থেকে উপার্জিত হচ্ছে।
‘কাজটা মোটেও সহজ নয়। অন্যান্য দ্রূত-বর্ধনশীল মোবাইল নির্মাতা কোম্পানি ও প্রযুক্তির সাথে আমাদের তীব্র পাল্লা দিয়ে চলতে হচ্ছে। একেকটা মডেল ছ’মাস যেতে না যেতেই পুরোনো হয়ে পড়ছে।’, অজয় বলেন। প্রথম কারখানাটি মুম্বাইয়ে, পরেরটি হরিদ্বারে, এরপরে ভারতীয় বানিজ্যের প্রাণকেন্দ্র মুম্বাইয়ে আরো একটি কারখানা স্থাপন করেছেন তিনি।
অজয় নিজ অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকে বুঝতে পেরেছিলেন, উৎপাদনজনিত খরচ কমানোর মাধ্যমেই বিনিময়ে লাভ আসবে। পূর্বে ম্যাক্স মোবাইল তাদের ব্যবহৃত কাচাঁমালের ৯৫ শতাংশই পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র থেকে আমদানি করতো। আর বর্তমানে স্বদেশে বিভিন্ন কারখানা স্থাপনার মাধ্যমে এটি ৪৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
বিক্রয় পরবর্তী সেবা ও অন্যান্য সুবিধার জন্য বর্তমানে ভারতের বাজারের একটা বিরাট অংশ ম্যাক্স মোবাইলের অায়ত্বে চলে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, খুব শীঘ্রই প্রতিষ্ঠানটি ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা মহাদেশে নিজেদের বাণিজ্য সম্প্রসারণ করবে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই চলমান টেলিকম বিপ্লবে ম্যাক্স মোবাইল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
কেনফোলিওস.কম অবলম্বনে