একের পর এক বিদেশি এয়ারলাইনস চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা গুটিয়ে নিচ্ছে। গত ১১ মাসে চার বিদেশি এয়ারলাইনস এই বিমানবন্দর ছেড়েছে। এখন সেখানে আছে মাত্র দুটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান। দুই যুগ আগে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর পর এ পর্যন্ত ১৪টি বিদেশি এয়ারলাইনস এই বিমানবন্দর ছেড়ে গেছে।
এয়ারলাইনস কর্মকর্তারা জানান, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে শাহ আমানত বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় এখান থেকে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো একের পর এক গুটিয়ে নিচ্ছে।
সর্বশেষ গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে আমিরাতভিত্তিক ফ্লাই দুবাই শাহ আমানত বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে। এর আগে ৮ মার্চ ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে ওমান এয়ার। গত অক্টোবরের শেষ দিকে ভারতভিত্তিক স্পাইস জেট এবং কুয়েতভিত্তিক জাজিরা এয়ারওয়েজ ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করেছে।
এর আগে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন সময় গুটিয়ে নিয়েছে থাই এয়ার, থাই স্মাইল এয়ার, কুয়েত এয়ার, ফুকেট এয়ার, মালিন্দো এয়ার, রোটানা এয়ার, হিমালয়ান এয়ার, রাস আল কাইমা (আরএকে) এয়ার, টাইগার এয়ারওয়েজ, সিল্ক এয়ার, ভারতভিত্তিক স্পাইসজেট বিমান, কুয়েতভিত্তিক জাজিরা এয়ারওয়েজ ও ওমান এয়ার।
তবে সিভিল এভিয়েশনের দাবি, কুয়েত এয়ার, ফুকেট এয়ার ও সিল্ক এয়ার কখনো চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করেনি।
বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট পরিচালনাকারী চারটি এয়ারলাইনসের মধ্যে দুটি বিদেশি সংস্থা হলো- এয়ার অ্যারাবিয়া ও সালাম এয়ার। আর দেশি দুটি এয়ারলাইনস হলো বিমান বাংলাদেশ ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস।
আমিরাতভিত্তিক ফ্লাই দুবাই এয়ারলাইনসের বিপণন বিভাগের কর্মকর্তা মো. মোরশেদ আলম চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘আপাতত আমরা চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রাখছি।’
বিমানবন্দরের তথ্য, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ২০০০ সালে বিদেশি ফ্লাইট সরাসরি চালুর পর যাত্রীর সংখ্যা বার্ষিক ৬ লাখ থেকে বেড়ে ১৬ লাখে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালে এই বিমানবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রী চলাচল বেড়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ। ২০২৩ সালে ৯ লাখ ৬৮ হাজার যাত্রী আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গন্তব্যে গেছেন। তার মধ্যে প্যাসেঞ্জার বিল্ডিংয়ের সক্ষমতা কম। ৬ লাখ যাত্রীর সক্ষমতা দিয়ে ১৬ লাখ হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে। ফলে অনেক ভোগান্তি তৈরি হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের রানওয়ে দিয়ে এখন বাংলাদেশে আসা সবচেয়ে বড় উড়োজাহাজ ‘বোয়িং ৭৭৭’ কিংবা ‘বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার’ এবং ‘এয়ারবাস এ-৩২০’ নামতে পারে। রানওয়ের সমস্যা নেই। তবে একসঙ্গে ৩০০-৪০০ যাত্রীর ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার জন্য পর্যাপ্ত কাউন্টার নেই।
ব্যাগেজ বেল্টও পর্যাপ্ত নেই। বিমানবন্দরে থাকা দুটি লাগেজ বেল্ট একসঙ্গে কাজে লাগিয়েও যাত্রী সামাল দেওয়া যায় না। বেল্ট কক্ষেই যাত্রীদের জটলা লেগে যায়। আর যাত্রী বেশি হওয়ায় একেকটি লাগেজ পেতে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এয়ারলাইনস কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে এখনো দিনরাত ২৪ ঘণ্টা যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচল করে না। সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ফ্লাইট চলে। কিন্তু আন্তর্জাতিক রুটের বেশির ভাগ বিমান সংস্থাই ২৪ ঘণ্টা ফ্লাইট চলাচলের ব্যবস্থা চায়। বিদেশি বিমান সংস্থার ফ্লাইট না থাকায় চট্টগ্রামভিত্তিক যাত্রীদের হয় ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশে যেতে হচ্ছে। অথবা সংযুক্ত আরব আমিরাত কিংবা ওমানের মাসকাট হয়ে ইউরোপ-আমেরিকা-চীনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। এতে আকাশপথে ভ্রমণ নিরবচ্ছিন্ন না হওয়ার পাশাপাশি বাড়তি সময় ও খরচ বেশি লাগছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আব্দুল্লাহ আলমগীর বলেন, ‘আমি বিমানবন্দরে নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। ফ্লাই দুবাইয়ের বিষয়ে তেমন কিছু জানতে পারিনি।’