জাপানের রাজধানী টোকিয়ো থেকে ফুকুওকা, দূরত্ব ১,০০০ কিলোমিটারেরও কিছু বেশি। উড়ানে সময় লাগে ২ ঘণ্টা। অথচ, এই যাত্রাই জাপানের ৩৩৫ জন যাত্রীর কাছে ৭ ঘণ্টার ভোগান্তিতে পরিণত হল। মাত্র ১০ মিনিট দেরির জন্য ফুকুওকাতে নামতে দেওয়া হল না জাপান এয়ারলাইন্সের বিমানটিকে। বাধ্য হয়ে সেটিকে ফিরে আসতে হয় টোকিয়োতে। সময়ানুবর্তিতার জন্য গোটা বিশ্বে বিশেষ পরিচিতি রয়েছে জাপানিদের। কিন্তু, এই ঘটনা নেট দুনিয়ায় হইচই ফেলে দিয়েছে।
১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় টোকিয়োর হানেদা বিমানবন্দর থেকে ফুকুওকা প্রদেশের হাকাতা-কুতে অবস্থিত ফুকুওকা বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা ছিল জাপান এয়ারলাইন্স কোম্পানির ফ্লাইট জেএল৩৩১-এর। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে বিমান বদল করতে গিয়ে প্রায় ৯০ মিনিট দেরি হয় টেকঅফে। সন্ধ্যা সাড়ে ছটার জায়গায় বিমানটি রওনা দেয় সন্ধ্যা আটটায়। এদিকে ফুকুওকা বিমান বন্দরে রাত ১০টার পরে আর কোনও বাণিজ্যিক বিমান অবতরণের অনুমতি দেওয়া হয় না।
বিমানবন্দরের আশেপাশে বসবাসকারীদের যাতে বিরক্তির উদ্রেক না হয়, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। বিমানটি ওড়ার সময় মনে করা হয়েছিল হাতে ৪ মিনিট সময় রেখেই সেটি ফুকুওকায় নামতে পারবে। কিন্তু, ফুকুওকার কাছাকাছি আসার সঙ্গে সঙ্গে পাইলটরা বুঝতে পেরেছিলেন, রাত ১০টার মধ্যে ফুকুওকাতে বিমানটির অবতরণ করা সম্ভব নয়।
ফুকুওকার এই রাত ১০টার নিয়মের কিছু ব্যতিক্রম আছে। খারাপ আবহাওয়া এবং অন্যান্য অনিবার্য কারণে বিমান উড়তে দেরি হলে তা বিবেচনা করে সময়সীমা বাড়ানো হয়। হানেদাতে প্রবল বাতাসের কারণে অনেক বিমানেরই উড়তে দেরি হয়েছিল। তাই সেগুলিকে রাত ১০টার পরও অবতরণ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, জেএল৩৩১-এর ক্ষেত্রে সেই অনুমতি দেওয়া হয়নি। কারণ, ফুকুওকা বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের মতে এই বিমানটির ক্ষেত্রে দেরি হওয়াটা ‘অনিবার্য’ ছিল না।
এরপর, বিমানটি নিকটবর্তী শহর কিটাকিউশুতে অবতরণের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু, ৩৩৫ জন যাত্রীকে নিয়ে যাওয়ার মতো কোনও বাস না থাকায় সেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। শেষ পর্যন্ত, ওসাকার কাছে কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাত ১০টা বেজে ৫৯ মিনিটে বিমানটি অবতরণ করে। কিন্তু, সেখানেও যাত্রীদের নিয়ে যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত বাস ছিল না, ছিল না হোটেলে থাকার মতো ব্যবস্থাও। ফলে ফের বিমানটি ওড়ে এবং সব মিলিয়ে প্রায় সাত ঘন্টা পর, সোমবার ভোর ২টো বেজে ৫০ মিনিটে ফের জাপানের রাজধানীতে ফিরে আসে।
এরপর এয়ারলাইনের পক্ষ থেকেই যাত্রীদের একটি হোটেলে রাখা হয়েছিল। ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে তাদের ফুকুওকা উড়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। বিমানের এক যাত্রী টুইটারে বিমানটির রুটের একটি ছবি পোস্ট করেছেন। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ফুকুওকার কাছে একটি বড় ইউ-টার্ন নিয়েছে বিমানটি। ওই যাত্রী জানিয়েছেন তাঁকে ২০,০০০ ইয়েন নগদ ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, “বিমানটি যে দুর্ঘটনার কবলে পড়েনি তাতেই আমি আনন্দিত।”