শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১১ অপরাহ্ন

হ্যানয়ের হাতছানি

  • আপডেট সময় শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

সুবিশাল ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারের তৃতীয় তলায় জাপানি ওষুধ কোম্পানি দাইচির স্টলে একটা লিফলেট উল্টেপাল্টে দেখছিলাম। নিজের নাম শুনে পেছনে ফিরে দেখি, সু হাসিমুখে তাকিয়ে আছে। জুতা জোড়া ঢেকে দেওয়া ঢোলা প্যান্টের সঙ্গে কালো শার্টে তাঁকে মানিয়েছে বেশ। বছর পাঁচেক আগের সেই রোগা-পাতলা মেয়েটার শরীরে মেদ জমে চেহারায় খানিকটা ভারিক্কি ভাব এসেছে।

‘আমি বেশ ভালো আছি বন্ধু। তোমার কী খবর?’
‘আমিও ভালো আছি। তুমি তো একদমই বদলাওনি। আগের মতোই আছ।’
‘আগের তুলনায় তোমার স্বাস্থ্য কিন্তু বেশ ভালো হয়েছে।’

মিয়ানামারের বন্ধু সু–এর সঙ্গে লেখকের দেখা অনেকদিন পর
মিয়ানামারের বন্ধু সু–এর সঙ্গে লেখকের দেখা অনেকদিন পর

‘হি হি। সোজাসাপটা বললেই হয় যে মোটা হয়েছি অনেক, কিচ্ছু মনে করব না। হয়েছে কি, বিয়ের পর থেকে খাওয়া একদমই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছি না। নিজে ডাক্তার হলেও নিজের ওপর ডাক্তারি নিয়মকানুন আরোপের ব্যাপারে আমি বড়ই উদাসীন।’
সুয়ের সঙ্গে পরিচয় ২০১৯ সালে, প্যারিসে। মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের ট্রেনিং ছিল স্যেরভিয়ের প্রধান কার্যালয়ে। সহকর্মী থান্ট কে নিয়ে সু এসেছিল মিয়ানমার থেকে। দুই সপ্তাহের ট্রেনিং শেষে আটজনের দলটির সবার মধ্যেই একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। ইন্টারনেটের কল্যাণে নিজেদের মধ্যে কদাচিৎ যোগাযোগ ঘটলেও সামনাসামনি দেখার সুযোগ তো আর মেলে না। হুট করে অনেক দিন পর দেখা হওয়ায় দুজনেই খুশি হয়েছি। আশিয়ান দেশগুলোর হৃদ্‌রোগবিশেষজ্ঞদের (আশিয়ান ফেডারেশন অব কার্ডিওলজি, সংক্ষেপে এএফসি) বাৎসরিক সম্মেলনের আসর বসেছে এ বছর ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে। সেটিতে যোগদানের উদ্দেশ্যেই আমাদের এখানে আসা।

বাংলাদেশ থেকে ভিয়েতনামের সরাসরি ফ্লাইট নেই। ঢাকা থেকে ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর কিংবা সিঙ্গাপুর হয়ে হ্যানয়ে আসতে হয়। ট্রানজিটের সময় অপেক্ষাকৃত সহনীয় মাত্রায় (তিন ঘণ্টা) হওয়ায় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের বিমানে চেপে এসেছি হ্যানয়ে। দুদিন আগে ঢাকা থেকে রাত ১২টায় রওনা দিয়ে নোই বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছি দুপুর ১২টায়। বাংলাদেশ থেকে ভিয়েতনামে ঘড়ির কাটা এক ঘণ্টা এগিয়ে থাকে। ইমিগ্রেশনে কোনো ঝামেলা না হলেও এক ঘণ্টার বেশি সময় লাইনে দাঁড়িয়ে একদম বিরক্তি ধরে গেছে। তাই বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে একমুহূর্ত অপেক্ষা না করেই আমাদের জন্য অপেক্ষমাণ বাসে উঠে পড়লাম। পৌনে এক ঘণ্টা পর বাস এসে নামিয়ে দিল ভিয়েতনামের দ্বিতীয় এবং দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার তৃতীয় সর্বোচ্চ স্থাপনা ল্যান্ডমার্ক ৭২ টাওয়ারে। ৩৩৬ মিটার উচ্চতার টাওয়ারটি ৭২ তলাবিশিষ্ট বলেই এমন নামকরণ।

নোই বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
নোই বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

৬৪ থেকে ৭২ তলা পর্যন্ত পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের জন্য বরাদ্দ। এএফসি কংগ্রেসে অংশগ্রহণকারী অতিথিদের বেশির ভাগই এই হোটেলে উঠেছেন। আমার জন্য বরাদ্দ করা কক্ষটির অবস্থান ৬৭ তলায়। কক্ষে প্রবেশের পর জানালার পর্দা সরিয়ে মনটা প্রসন্ন হয়ে উঠল। চোখের সামনে ভেসে উঠেছে পুরো হ্যানয় শহর। অনেক দূর থেকে চোখে পড়ে বিখ্যাত রেড রিভার, যেটির পাশে এই শহরের গোড়াপত্তন হয়েছিল খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে। ভিয়েতনামের তৃতীয় সর্বোচ্চ ভবন লোটে সেন্টারও দেখা যায় এখান থেকে। তবে থাইল্যান্ড কিংবা সিঙ্গাপুরে যে পরিমাণ বহুতল ভবন দেখা যায়, সে তুলনায় হ্যানয় অনেকখানিই পিছিয়ে। এমনকি ঢাকার সঙ্গে তুলনা করলেও বহুতল ভবনের আধিক্য এখানে কম।

ভিয়েতনামকে চোখ বন্ধ করে কোটিপতিদের দেশ বলা যায়। বিমানবন্দরে ১০০ ডলারের একটা নোট ভাঙিয়ে মাত্র ২৪ লক্ষ ভিয়েতনামিজ ডং পেয়েছি। শহরের মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে নিশ্চিতভাবেই আরও বেশি পাওয়া যাবে। হাফ লিটারের এক বোতল পানির দাম ৫ হাজার টাকা, এক কাপ কফির দাম ২০ হাজার টাকা। এক হাজার টাকার নিচে কোনো ব্যাংক নোটই নেই। সবচেয়ে বড় নোটটাও পাঁচ লাখ টাকার। মানিব্যাগে অর্ধকোটি টাকা নিয়ে ঘুরছি, এই ভাবনার মধ্যেও কিন্তু আনন্দ আছে।

ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে দর্শনার্থীদের ভিড়
ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে দর্শনার্থীদের ভিড়

সুয়ের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করে স্টলগুলো ঘুরে দেখলাম। বাংলাদেশে বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির সংখ্যা হাতেগোনা। ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা যায় ভারত-পাকিস্তান কিংবা দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। সে জন্যই কি না, সম্মেলনে নামীদামি ওষুধ কোম্পানির স্টলের আধিক্য বিরাজমান। প্রতিষ্ঠিত ওষুধ কোম্পানি হিসেবে সাধারণত আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে স্যেরভিয়ের জন্য স্টল বরাদ্দ থাকে। কিন্তু এখানে সেটি চোখে পড়ছে না বিধায় কিঞ্চিৎ অবাক হয়েছিলাম। আমার সেই বিস্ময়ভাব দেখেই কি না, ভিয়েতনামিজ সহকর্মী লি এগিয়ে এল। লির সঙ্গেও পরিচয় ঘটেছিল এমনই এক ট্রেনিংয়ের সুবাদে, ব্যাংককে। জানা গেল, খরচ কমানোর তাগিদে এ বছর স্টল দেওয়া হয়নি।

কোভিডের পর থেকে দুনিয়াজুড়েই বহুজাতিক কোম্পানিগুলো খরচ কমানোর ধান্দায় আছে। সামনে আরও কত কী দেখব, কে জানে। খরচ কমানোর কথায় মনে পড়ে গেল, আমার পুরোনো কোম্পানির কথা। বাংলাদেশের সেরা ১৫টি ফার্মা কোম্পানির একটিতে প্রায় ৬ বছর চাকরি করেছি। একদিন সকালে অফিসে ঢুকে শুনি, সেদিন থেকে দুধ–চা সরবরাহ বন্ধ। কারণ, ম্যানেজমেন্ট পরিচালন খরচ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এখন থেকে অফিসে চাহিবামাত্র দুধ–চায়ের বদলে রং–চা দেওয়া হবে। মাস কয়েক পর যদিও এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল, তবে ব্যাপারটা কর্মীদের মধ্যে একই সঙ্গে ক্ষোভ ও হাস্যরসের জন্ম দেয়।

ভিয়েতনাম সাংবিধানিকভাবে একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ। এই প্রথম কোনো সমাজতান্ত্রিক দেশে ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছি। পৃথিবীতে যে পাঁচটি দেশ এখনো মার্ক্সবাদ-লেলিনবাদকে তাদের শাসনের মূল ভিত্তি হিসেবে রেখেছে, তার একটি ভিয়েতনাম। বাকি চারটি দেশ চীন, লাওস, কিউবা ও উত্তর কোরিয়া। মনের গহিনে উত্তেজনার পারদ যে বেশ উঁচুতেই ছিল, সেটা অস্বীকারের উপায় নেই। সেই আগুনে ঘি ঢেলেছিল ভিয়েতনামের ইতিহাস। আমার কাছে ভিয়েতনাম মানেই হা লং বের সৌন্দর্য, ভিয়েতকং গেরিলাদের তৈরি মানুষ হত্যার অদ্ভুত সব ফাঁদ, নাপাম বোমায় ঝলসে যাওয়া কিশোরী কিম ফুকের নগ্ন দেহ কিংবা সাইগনের দূতাবাস থেকে পালিয়ে যাওয়া আমেরিকান আর তাদের দোসর ভিয়েতনামিজদের ভয়ার্ত মুখায়বব। ‘আমেরিকা যার বন্ধু, তার কোনো শত্রুর প্রয়োজন নেই’ প্রবাদবাক্যটির উৎপত্তিও কিন্তু ভিয়েতনাম যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতেই।
সবুজে ছাওয়া হ্যানয় শহর
সবুজে ছাওয়া হ্যানয় শহর

ভিয়েতনামের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। চীনের হান রাজবংশ খ্রিষ্টপূর্ব ১১১ সাল থেকে প্রায় হাজার বছর দেশটিতে রাজত্ব করেছে। এরপর ভিয়েতনামেরই বিভিন্ন রাজবংশ দেশটিকে আরও হাজার বছর শাসন করে। মাঝখানে দেশটি তিনবার মঙ্গলদের আক্রমণ থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করেছে। কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন দল-উপদল ও গোত্রে ভাগ হয়ে ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষায় নিজেদের মধ্যেই মারামারি শুরু করে দেশটির জনগণ। ১৬০০ সালের দিকে দেশটি উত্তর ও দক্ষিণ—এই দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। দুই শ বছর পর নগুয়েন রাজবংশ দেশটিকে একীভূত করতে সক্ষম হয়, যা কিনা অক্ষুণ্ন থাকে ১৮৮৩ সালে ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসনাধীন হওয়ার পূর্বপর্যন্ত।

ইউরোপীয় দেশগুলো এশিয়া, আফ্রিকা কিংবা ল্যাটিন আমেরিকায় উপনিবেশ স্থাপনের জন্য যেই দুটি প্রধান অস্ত্র ব্যবহার করেছিল, তার একটি হচ্ছে বাণিজ্য, অপরটি ধর্ম। পঞ্চদশ শতাব্দীর শুরু থেকেই ভিয়েতনামের দিকে নজর পড়েছিল ইউরোপীয় দেশগুলোর। পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ইংরেজরা খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও খেলার মাঠে ফরাসিদের আগমনের পরপরই পাশার দান উল্টে যায়। প্রথম দিকে ফরাসিরা বাণিজ্যের ছুতোয় দেশটিতে প্রবেশ করে। এরপর ফরাসি মিশনারিদের একের পর এক দলকে পাঠানো হয় খৃষ্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে। প্রথম দলটি ভিয়েতনামে প্রবেশ করে ১৬৬৬ সালে। ধর্মপ্রচার ও ধর্মান্তকরণের এই প্রক্রিয়া পরবর্তী দুই শ বছর ধরে চলতে থাকে। নিজেদের ধর্মীয় নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে, এমন বোধ থেকে শেষ পর্যন্ত ভিয়েতনাম কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটিতে বাধা প্রদান করে এবং কয়েকজন ধর্মপ্রচারককে গ্রেপ্তার করে, ঘটনাটি ১৮৪৩ সালের। এমন অজুহাতের অপেক্ষায়ই তো ছিল ফরাসিরা। এরই মধ্যে পুরো ইন্দোচীন অঞ্চল তাদের প্রভাব বলয়ে চলে এসেছে, এখন সময় ভিয়েতনাম দখলের, অতএব চালাও আক্রমণ। পরবর্তী ৪০ বছরের মধ্যেই পুরো ভিয়েতনাম তারা দখলে নিয়ে নেয়।

ঔপনিবেশিকতার এই মধু ফ্রান্স উপভোগ করতে পেরেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগপর্যন্ত। যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই জার্মান আক্রমণে ফ্রান্স বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সেটির প্রভাব পড়েছিল ফরাসি ইন্দোচীনেও। ১৯৪৫ সালের মার্চে জাপান পুরো ভিয়েতনামের দখল নিয়ে নেয়। তত দিনে অবশ্য বিপ্লবী নেতা হো চি মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামের স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। আগস্ট মাসে জাপানের পরাজয়ের পর তিনি রাজধানী হ্যানয়ের দখল নেন এবং সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। স্বাভাবিকভাবেই ফরাসিরা সেটি মেনে নেয়নি। দক্ষিণ ভিয়েতনামের গুরুত্বপূর্ণ শহর সাইগনকে কেন্দ্র করে তারা ভিয়েতনাম পুনর্দখলের পরিকল্পনা করে। ওদিকে হো চি মিনের বাহিনীও গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। শুরু হয় প্রথম ইন্দোচীন যুদ্ধ, যেটির ব্যাপ্তি ছিল আট বছর। যুদ্ধে পরাজয়ের মাধ্যমে এই অঞ্চলে ফ্রান্সের উপনিবেশবাদের পতন ঘটে। জন্ম নেয় তিনটি স্বাধীন দেশ—ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়া। জেনেভা চুক্তির মাধ্যমে ভিয়েতনামকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়। উত্তরে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব ভিয়েতনাম, যার রাজধানী হ্যানয়। দক্ষিণে সাইগনকে রাজধানী করে স্টেট অব ভিয়েতনাম।
কথা ছিল, ১৯৫৬ সালের জুলাই মাসে ভিয়েতনামে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর দুই ভিয়েতনাম এক হয়ে যাবে, আদতে সেটি হয়নি। বলা যায়, সেটি ঘটতে দেওয়া হয়নি। ১৯৫৫ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনামের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নো দিন দিয়েম এক গণভোটের মাধ্যমে দেশটির নাম পরিবর্তন করে রাখেন রিপাবলিক অব ভিয়েতনাম এবং নিজেকে নতুন দেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে পরবর্তী বছরের নির্বাচন বাতিল করেন। বলা চলে পুরো ব্যাপারটাই ছিল আমেরিকা ও ফ্রান্সের পরিকল্পনার ফসল। উদ্দেশ্য, ভিয়েতনামকে দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় রেখে এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব অক্ষুণ্ন রাখা।
ওল্ড কোয়ার্টারে চোখে পড়ে স্ট্রিট ফুডের সমারোহ
ওল্ড কোয়ার্টারে চোখে পড়ে স্ট্রিট ফুডের সমারোহ

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই শুরু হয় দ্বিতীয় ইন্দোচীন যুদ্ধের, ইতিহাসে যেটি বিখ্যাত কিংবা কুখ্যাত হয়ে আছে ভিয়েতনাম যুদ্ধ নামে। ২০ বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ আদতে রূপ নিয়েছিল ক্যাপিটালিজম আর কমিউনিজমের অঘোষিত শীতল যুদ্ধে, যেটির মূল্য চুকিয়েছিল ৩০ লক্ষের বেশি মানুষ নিজেদের জীবন দিয়ে। সোভিয়েত ইউনিয়ন আর চীনের সহায়তায় এই যুদ্ধ শেষ হয় উত্তর ভিয়েতনামের সৈনিকদের হাতে সাইগনের পতনের মাধ্যমে। ১৯৭৬ সালের জুলাই মাসে অবশেষে দুই ভিয়েতনাম আবারও একীভূত হয়ে সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক অব ভিয়েতনামে পরিণত হয়।

রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর নিজেদেরকে গোছাতে বেশ সময় লেগেছে ভিয়েতনামের জনগণের। বর্তমানে ভিয়েতনাম অর্থনৈতিকভাবে দ্রুতবর্ধনশীল এক রাষ্ট্র। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্ববাজারে দেশটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। যে আমেরিকা তাদের ওপর একসময় টনকে টন বোমা ফেলেছিল, সেই আমেরিকাই এখন তাদের অন্যতম মিত্রদেশ। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আসলে বন্ধু কিংবা শত্রু বলে কেউ নেই, সবই স্বার্থের খেলা। আফসোস হচ্ছে, বাংলাদেশ এই স্বার্থের খেলাটা ঠিকমতো খেলতে জানে না। আমরা এখনো ভারত-চীন বাইনারিতেই আটকে আছি। একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য পর্যটন চমৎকার ভূমিকা রাখতে পারে। পর্যটনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ভিয়েতনাম নিজেদের ভিসানীতি সহজ করেছে। সেই সঙ্গে নিজেদের পর্যটন স্থাপনাগুলোর চমৎকার ব্র্যান্ডিংও করছে, যার সুফল তারা ইতিমধ্যেই পাচ্ছে।

ভিয়েতনামের সহকর্মী লি অনেক তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছে
ভিয়েতনামের সহকর্মী লি অনেক তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছে

লির সঙ্গে গল্প করতে করতে ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারের চারপাশ ঘুরে দেখছিলাম। এক জায়গায় মুফতে ছবি তুলে প্রিন্ট করে দেওয়া হচ্ছে। পেছনে চমৎকার ব্যাকগ্রাউন্ডে হ্যানয় লেখা। স্মৃতিতে রাখার জন্য একটা ছবি তুলে রাখলাম। অফিসের টেবিলে ছবির ফ্রেমে সাজিয়ে রাখা যাবে। রাতে ডিনারের পর হোটেলের লবিতে আড্ডার আহ্বান জানিয়ে বিদায় নিল লি। আমরাও বেরিয়ে পড়লাম ওল্ড কোয়ার্টারের উদ্দেশে। সেখানকার একটা ভারতীয় রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খাওয়ার পরিকল্পনা আছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com