পাহাড় বরাবরই বেশ আকর্ষণীয় জায়গা। নিজস্ব ছন্দে মেনে চলা প্রাকৃতিক পরিবেশ, পাহাড়িদের উৎসব- জীবনাচরণ সবকিছুই আমাদের মুগ্ধ করে তোলে। এ সবকিছুর সাথে পাহাড়ি খাবারও তেমনি সুস্বাদু ও আকর্ষণীয়। বাঙালিদের খাদ্যাভ্যাসের সাথে অনেক পার্থক্য রয়েছে পাহাড়িদের খাবারের সাথে।
বাঙালিরা যেমন তেল ছাড়া খাবার রান্নাই করতে পারেনা, পাহাড়িরা অন্যদিকে একপ্রকার তেল ছাড়াই খাবার রান্না করে। তাছাড়া খাবার উপকরণ, রান্নার প্রক্রিয়া ইত্যাদিতেও রয়েছে আমূল পরিবর্তন। পাহাড়িদের এই ভিন্নধর্মী খাবারই আমাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করে। কিন্তু চাইলেই তো সবসময় এসব খাবার খেতে পাহাড়ে যাওয়া যায় না। আর তাই পাহাড়ি খাবারের স্বাদ সহজলভ্য করে দিতে চালু হয়েছে ‘হেবাং’ রেস্তোরাঁ। মিরপুরের কাজীপাড়ায় পথচারী সেতুটির উত্তর দিকের ভবনের তিন তলায় হেবাং রেস্তোরাঁ। চার বোনের উদ্যোগে হেবাং বাংলাদেশে প্রথম নারী পরিচালিত পাহাড়ি রেস্তোরাঁ। চাকমা ভাষায় হেবাং মানে হলও ভাপে রান্না করা খাবার। বাঁশের ভেতর মাংস বা মাছ বা অন্যান্য খাবার দিয়ে সেটি পুড়িয়ে খাওয়া পাহাড়িদের প্রিয় খাবার। পাহাড়িদের ঘরবাড়ির আদলে করা হয়েছে ‘হেবাং’-এর ইন্টেরিয়র ডিজাইন।
বিভিন্ন রকম সবজি দিয়ে তৈরি পাচন নববর্ষের দিনে পাহাড়িদের একটি মূল খাবার। ‘হেবাং’-এ পাচন প্রতিদিন পাওয়া যায়। বর্ষার সময়ে কচি বাঁশ দিয়ে তৈরি বাশঁকোড়লের বিভিন্ন পদ পাওয়া যায়। ‘সুমোত দি তোন’, ‘ বাচ্চুরিমালা’, ‘ব্যাম্বো চিকেন’-পাহাড়িদের এসব নিজস্ব খাবার এখানে প্রতিদিন পাওয়া যায়। এছাড়া বিন্নি চালের ভাত, শুটকি দিয়ে তৈরি নানা পদ, ছোট শামুকের নানা পদ, কাকড়া এমনকি বনমোরগের রান্নাও এখানে পাবেন। এছাড়া বাঙালি খাবার বলতে পাবেন বেলে মাছ, হাস, ব্রয়লার মুরগীর পদ। সেদ্ধ সবজিকে চাকমারা বলে ‘তাবা সবজি’। তাবা সবজিতে সিদল বা শুটকি ব্যবহার করা হয়। তেল ছাড়া মাছ রান্নাকে বলা হয় ‘ হলা’। বিভিন্ন পদের হলাও পাবেন ‘ হেবাং’-এ। এছাড়াও নাস্তা হিসেবে সকালে বা বিকালে থাকে বিভিন্ন পিঠা ও হরেক রকমের জুস। রয়েছে বিন্নি চালের পায়েস; পিঠার মধ্যে পাবেন বিন্নি চালের পিঠা, কলা পিঠা, বড়া পিঠা ইত্যাদি। সকল মৌসুমে পাওয়া ফলের তৈরি জুস ছাড়াও বিভিন্ন রকম চা পাওয়া যায়। যেমন তেঁতুল চা, পুদিনা পাতার চা, রোজেলা ইত্যাদি। এরমধ্যে রোজেলা চা ‘হেবাং’-এর নিজস্ব আবিষ্কার।
শুধু খাবারেই যে পাহাড়িয়ানা স্বাদ, তা নয় ; ‘হেবাং’-এর ইন্টেরিয়র ডিজাইনেও পাহাড় পাহাড় স্পর্শের অনুভব পাওয়া যায়। কংক্রিট আর যান্ত্রিকতার এই শহরে পাহাড়ের নির্মল ও শান্ত পরিবেশ ফুটিয়ে তুলতেই ভিন্নধর্মী ইন্টেরিয়র ডিজাইন। ‘হেবাং’-এর ভেতরে ঢুকতেই দেখা যাবে সবজায়গায় বাঁশের ব্যবহার। বাঁশ দিয়ে ছোট ছোট ঘর, দেয়ালে বাঁশের কারুকাজ, বাঁশের তৈরি চেয়ার -টেবিল ; সবকিছুতে বাঁশের ছোঁয়া। শুধু ইন্টেরিয়র ডিজাইনের মাধ্যমেই নয়, ‘হেবাং’ এর ভেতরে বাজতে থাকে পাহাড়ি বিভিন্ন গান। পাহাড়ি খাবারের পাশাপাশি নিজেদের সংস্কৃতির সাথে অন্যদের পরিচয় করিয়ে দিতেই এই আয়োজন। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ‘হেবাং’ খোলা থাকে। ঢাকায় বসেই পাহাড়ি খাবারের স্বাদ নিতে একবার ঘুরে আসতে পারেন ‘ হেবাং’ থেকে।