ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিম এর রাজধানী ‘গ্যাংটক’। হিমালয় পর্বতমালার সুউচ্চ শিখরগুলির মাঝখানে মনোরম ও আরামদায়ক পরিবেশে গ্যাংটকের অবস্থান। পর্বতশ্রেণির শিবালিক পর্বতে ১৪৩৭ মিটার উচ্চতায় এই গ্যাংটক শহর অবস্থান। এই শহরটিতে মাত্র ৩০ হাজার বাসিন্দা রয়েছে। শহরটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর।
মেঘের বাড়ি সিকিম ঘোরার সবথেকে সহজ উপায় হল গ্যাংটককে কেন্দ্র করে ঘোরা। সিকিম মানেই পাহাড়ি রাস্তায় ঘুরে ঘুরে যত উপরে উঠা। আলপাইন সৌন্দর্যের জন্য একে প্রায়ই “পূর্বের সুইজারল্যান্ড” বলা হয়।
গ্যাংটক ও এর আশে পাশের অঞ্চল পুরোটাই সুবিশাল ও দৃষ্টিনন্দন পাহাড়ে ঘেরা। বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ, সাথে বিচিত্র প্রাণিকুল মিলিয়ে গ্যাংটক হয়ে উঠেছে প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য। অর্কিডের ন্যায় ফুল, সাথে লাল পান্ডা, লাল রঙ্গিন পাখি এগুলো গ্যাংটকের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। গ্যাংটকে পর্যটকদের মন মাতানোর জন্য অনেক হ্রদ, ঝর্ণা ও পাহাড় রয়েছে। তবে এদের মধ্যে সোমগো ও মেনমেকো হ্রদই বেশি পরিচিত।
দার্জিলিং এ কাঞ্চনজঙ্ঘার যেই সৌন্দর্য দেখে থাকেন, সেই সৌন্দর্য থেকে আপনাকে বঞ্চিত করবে না গ্যাংটকও। বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার দর্শন আপনি পাবেন গ্যাংটক থেকেও। হট স্প্রিংগুলো সালফারের উচ্চ ঘনত্বের কারণে ভেষজ গুণের জন্য সুপরিচিত। পর্যটকদের মধ্যে জনপ্রিয় হত স্প্রিংগুলির মধ্যে রয়েছে ইউম সামডোং হটস্প্রিং, রেশি হটস্প্রিং ইত্যাদি।
এখানকার কয়েকটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হল- কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যান ও ফামবং লো বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য।
গ্যাংটক এর দর্শনীয় স্থানগুলো:
গ্যাংটক এর অন্যতম প্রধান দর্শনীয় স্থান হলো এম.জি মার্গ বা মহাত্মা গান্ধী মার্গ। সুন্দর সুন্দর ফুল দিয়ে সাজানো দারুণ দর্শনীয় জায়গা এই এম.জি মার্গ।
গ্যাংটক এর আরেকটি দর্শনীয় স্থান হল ছাঙ্গুলেক। ছাঙ্গু লেকের স্থানীয় নাম সোমগো। গ্যাংটক থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে ১২ হাজার ৪০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই লেক। শীতকালে ছাঙ্গুলেকের জল জমে বরফ হয়ে যায়। লেকের চারিদিকে বরফে ঢাকা পাহাড়ের সৌন্দর্যই অন্যরকম।
গ্যাংটকের আবহাওয়া বর্ষা ও শীতের মৌসুমে বেশ প্রকট হতে পারে। শরৎ ও বসন্তকাল হল গ্যাংটক ভ্রমণের সেরা সময়। এই শহরে মার্চ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বসন্তকাল বিরাজ করে অন্যদিকে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত শরৎকাল। এছাড়াও গ্রীষ্মকাল, গ্যাংটক ভ্রমণের জন্য একটি ভালো সময়।
কিভাবে যাবেন
বাংলাদেশ থেকে চ্যাংড়াবান্ধা-বুড়িমারি বর্ডার থেকে শিলিগুড়ি খুব সহজেই যাওয়া যায়। শ্যামলী পরিবহনের বাস কল্যাণপুর থেকে ছেড়ে যায়।
বিমান মাধ্যমে: গ্যাংটকের কাছে সিকিমের একমাত্র বিমানবন্দর পাকইয়োং বিমানবন্দর চালু হয়েছে যা সবচেয়ে নিকটবর্তী। কলকাতা থেকে সিকিমের ফ্লাইট চালু রয়েছে বর্তমানে। তবে বাংলাদেশসহ আরও বেশ কিছু দেশ থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালু হবার কথা চলছে।