শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫২ পূর্বাহ্ন

হিমালয় পর্বতমালা

  • আপডেট সময় সোমবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৪
হিমালয় পর্বতমালা বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণী। এটি প্রায় ২,৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার প্রশস্ত, উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্বে বিস্তৃত। এই বিশাল পর্বতমালা এশিয়ার পাঁচটি দেশের মধ্যে অবস্থিত এবং এটির শৃঙ্গগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গগুলোর মধ্যে গণ্য হয়।
ভৌগোলিক গঠন
হিমালয় তিনটি প্রধান অঞ্চলে বিভক্ত:
1. গ্রেট হিমালয়: এই অঞ্চলটি সবচেয়ে উঁচু এবং এতে মাউন্ট এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোৎসে, এবং মাকালুর মতো শৃঙ্গ রয়েছে। মাউন্ট এভারেস্ট, যার উচ্চতা ৮,৮৪৯ মিটার, পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হিসেবে পরিচিত।
2. মধ্য হিমালয়: এটি তুলনামূলকভাবে কম উঁচু, তবে এখানেও অনেক উঁচু শৃঙ্গ এবং উপত্যকা আছে। এই অঞ্চলে বিভিন্ন সুন্দর উপত্যকা এবং নদী প্রবাহিত হয়, যেমন কাশ্মীর উপত্যকা ও কাঠমাণ্ডু উপত্যকা।
3. বাইরের হিমালয়: এটির উচ্চতা তুলনামূলকভাবে কম, তবে এটি খুবই বিস্তৃত এবং এতে অনেক পাহাড়ি বনভূমি ও গিরিখাত রয়েছে।
টেকটোনিক প্লেটের প্রভাব
হিমালয় পর্বতমালার গঠন একটি জটিল প্রক্রিয়ার ফলাফল, যা প্রায় ৫০ মিলিয়ন বছর আগে শুরু হয়েছিল। ভারতীয় টেকটোনিক প্লেট ইউরেশিয়ান প্লেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উপরে উঠতে শুরু করে, যা হিমালয়ের জন্ম দেয়। এই প্রক্রিয়াটি এখনো চলমান, যার ফলে পর্বতমালার উচ্চতা প্রতি বছর কয়েক মিলিমিটার করে বাড়ছে।
জীববৈচিত্র্য
হিমালয়ের ভৌগোলিক ও জলবায়ুর বৈচিত্র্যের কারণে এখানে বিস্তৃত জীববৈচিত্র্য পাওয়া যায়:
উদ্ভিদকুল: হিমালয়ে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা রয়েছে, যা উচ্চতা এবং জলবায়ুর ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন। নিম্ন উচ্চতায় চিরসবুজ বন এবং উপরে তুষারাবৃত অঞ্চল রয়েছে যেখানে লিকার এবং মোস পাওয়া যায়।
প্রাণীকুল: তুষার চিতা, লাল পান্ডা, হিমালয়ী কালো ভাল্লুক, এবং মস্ক হরিণের মতো বিরল প্রাণী হিমালয়ে বাস করে।
হিমালয়ের নদীগুলি
হিমালয় পর্বতমালা এশিয়ার অনেক গুরুত্বপূর্ণ নদীর উৎস, যেগুলো কয়েক মিলিয়ন মানুষের জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয়। এর মধ্যে প্রধান নদীগুলি হলো:
গঙ্গা: ভারত ও বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী।
যমুনা: গঙ্গার একটি প্রধান উপনদী (ভারত) এবং এটি ব্রহ্মপুত্র নদের প্রধান শাখা (বাংলাদেশ)।
ব্রহ্মপুত্র: এটি তিব্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারতের আসাম ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।
ইন্দাস: পাকিস্তানের প্রধান নদী।
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
হিমালয় শুধু প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্যই নয়, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ:
হিন্দুধর্মে: হিমালয়কে দেবতা শিবের বাসস্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেদারনাথ, বদ্রিনাথ, এবং কৈলাস পর্বত হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থান।
বৌদ্ধধর্মে: হিমালয়ে অনেক বৌদ্ধ মঠ রয়েছে, যেমন লাদাখ ও ভূটানের মঠগুলো।
জৈনধর্মে: অনেক জৈন তীর্থস্থান হিমালয় অঞ্চলে অবস্থিত।
পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ
হিমালয় পর্বতমালা আজ জলবায়ু পরিবর্তন, হিমবাহ গলন, বন উজাড়, এবং ভূমিকম্পের মতো বিভিন্ন পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। হিমবাহ গলনের কারণে নদীগুলোর পানি প্রবাহে পরিবর্তন আসছে, যা নিম্ন অববাহিকায় বসবাসরত মানুষের ওপর প্রভাব ফেলছে।
হিমালয় একটি অনন্য প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, যা সারা বিশ্বের মানুষের কাছে বিস্ময় ও সম্মানের প্রতীক। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ এবং সবচেয়ে নাটকীয় পর্বতমালা, যা আমাদের পরিবেশ, সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে চলেছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com