শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪৬ পূর্বাহ্ন

হাসিনার সহযোগীদের সম্পদ তদন্তে যুক্তরাজ্যকে বাংলাদেশের অনুরোধ

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের সদস্যদের সম্পদের খোঁজ করতে যুক্তরাজ্যকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, হাসিনার শাসনামলে দেশের ব্যাংকিংব্যবস্থা থেকে কমপক্ষে দুই লাখ কোটি টাকা বা ১৭০০ কোটি ডলার বিদেশে সরানোর বিষয়ে তদন্ত করছে নতুন প্রশাসন।

গতকাল বুধবার ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফিন্যানশিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সংবাদপত্রকে আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, তিনি এ বিষয়ে যেসব দেশের সাহায্য চেয়েছেন, যুক্তরাজ্য তার একটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার খুবই সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব দেখিয়েছে। দেশটির হাইকমিশনার তাঁর অফিসে গিয়েছিলেন এবং তারা ব্যাপক প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।

ব্রিটিশ কর্মকর্তারাও বাংলাদেশ সরকারের সাহায্য চাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে তারা বিস্তারিত তথ্য জানাতে চাননি।

বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের পাশাপাশি বিভিন্ন গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে হাসিনা ও তাঁর সরকারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। যদিও বাংলাদেশের কঠোর মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ নীতি রয়েছে, যার অধীনে নাগরিকরা প্রতিবছর মাত্র কয়েক হাজার ডলার বিদেশে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। এ বিষয়ে গভর্নর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অজান্তে এত ব্যাপক আকারের চুরি সংঘটিত হতে পারে না। তবে এ বিষয়ে হওয়া তদন্তগুলো এখনো ‘প্রাথমিক পর্যায়ে’ রয়েছে।

ফিন্যানশিয়াল টাইমস বলছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আসা এসব অভিযোগ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নতুন লেবার সরকারের জন্য জটিল সমস্যা তৈরি করতে পারে।

কারণ, ব্রিটেনের নতুন এই লেবার সরকারের সিটি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক শেখ হাসিনার ভাগ্নি। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ফিন্যানশিয়াল টাইমসের অনুরোধের জবাব দেননি টিউলিপ।বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ বিষয়ে ব্রিটেনের সাহায্যের জন্য ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ এ দেশ থেকে চুরি করা এবং বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধার করতে যাচ্ছে। এটি এ সরকারের অগ্রাধিকারগুলোর একটি।

শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসনকালে ভোটে কারচুপি, অধিকার লঙ্ঘন এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। হাসিনার দল আওয়ামী লীগের মিত্রদের বৈদেশিক সম্পদের বিষয়টি বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপকভাবে চর্চিত। চলতি বছরের শুরুর দিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-ইউকে বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সঙ্গে যুক্ত কম্পানির মালিকানাধীন ব্রিটিশ রিয়েল এস্টেট পোর্টফোলিওকে ‘অঘোষিত সম্পদ’-এর উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছিল, কর্তৃপক্ষের বিষয়টি তদন্ত করা উচিত।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এই রাজনীতিবিদের অবৈধ সম্পদের বিশাল সাম্রাজ্যের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তি নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য। যুক্তরাজ্যে কম্পানি হাউসের করপোরেট অ্যাকাউন্ট, বন্ধকি চার্জ এবং এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে ব্লুমবার্গ সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদের এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছিল।

গত জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ বছর ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হলেও মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি। তবে ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদে ছিলেন তিনি।

সাইফুজ্জামান চৌধুরীর আইনজীবী আজমালুল হোসেন কেসি বলেন, তাঁর মক্কেলের ‘লুকানোর কিছু নেই’ এবং তিনি কিছু চুরি করেননি। আজমালুল হোসেন আরো বলেন, ‘সাইফুজ্জামান চৌধুরী একজন চতুর্থ প্রজন্মের ব্যবসায়ী, যিনি রাজনীতিতে আসার আগেই ১৯৯০-এর দশকে তাঁর সম্পদ অর্জন শুরু করেন।’  সাবেক এ মন্ত্রী চলতি বছরের শুরুর দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, বিদেশে থাকা তাঁর এসব সম্পদ এসেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্যাবসায়িক কর্মকাণ্ড থেকে।

শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ফিন্যানশিয়াল টাইমসকে বলেন, তদন্ত হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সহযোগীদের বিষয়ে তথ্য পরিষ্কার হবে। তিনি দাবি করেন, ‘(নতুন সরকার) সব কিছুতেই বিশাল দুর্নীতি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা এবং তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দোষারোপ করছে।’

যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে, নিজেদের দীর্ঘস্থায়ী নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পারস্পরিক আইনি সহায়তার অনুরোধ বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করবে না।

সূত্র : ফিন্যানশিয়াল টাইমস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com