হানিমুনের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে রোমান্টিক জায়গা কোনটি জিজ্ঞেস করলে অনেকেই প্যারিসের নাম নেবেন। হ্যা, প্যারিস হানিমুনের জন্য সুন্দর একটি জায়গা, কিন্তু তারচেয়ে সুন্দর জায়গা কোনটি জানেন? মালদ্বীপ। হ্যা, এই মুহূর্তে মালদ্বীপই বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ও রোমান্টিক হানিমুন ডেস্টিনেশন।
আজকাল বাংলাদেশ থেকে হানিমুনে মালদ্বীপ ভ্রমণ প্ল্যান করা অনেক সহজ। শুধু একটু টাকা খরচ করতে হবে কারণ মালদ্বীপ খুবই এক্সপেনসিভ। আসুন জেনে নেই বাংলাদেশ থেকে কিভাবে মালদ্বীপ যাবেন, মালদ্বীপ গিয়ে কোথায় থাকবেন ও কি কি করবেন এবং সব মিলিয়ে খরচ কত পড়বে।
তো শুরু করা যাক।
গ্রীষ্মকাল মালদ্বীপ ভ্রমণের জন্য সেরা সময়। মালদ্বীপে নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস গ্রীষ্মকাল চলে। এই সময়ে মালদ্বীপের আকাশ পরিষ্কার থাকে ও সমুদ্রের পানি অদ্ভুত সুন্দর গাড় নীল রঙ ধারণ করে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পিক সিজন চলে তাই এই সময়টায় বাংলাদেশীরা ঘুরতে চাইলে খরচ অনেক বেশি পড়বে। মালদ্বীপ ভ্রমণের জন্য মার্চ ও এপ্রিল মাস বেছে নেয়া উচিৎ কারণ এই সময়গুলোতে সবকিছুর দাম তুলনামূলক কম থাকে।
মালদ্বীপ ভিসা প্রসেসিং একদমই সহজ। প্রায় সব দেশ থেকেই মালদ্বীপে অন এরাইভাল ভিসা পাওয়া যায়। মালদ্বীপে অন এরাইভাল ভিসা’র জন্য যা যা ডকুমেন্টস লাগে তা হলোঃ
ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে মালদ্বীপের ভেলানা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট পর্যন্ত প্রতিদিন অনেকগুলো এয়ারলাইনের ডিরেক্ট ফ্লাইট রয়েছে। এর মধ্যে ইউ এস বাংলা, বিমান বাংলাদেশ, কাতার এয়ারলাইন্স, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, ভিসতারা, টার্কিশ এয়ারলাইন্স উল্লেখযোগ্য। মালদ্বীপের টিকেটের ব্যপারে একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যে যত আগেভাগে টিকেট কেটে রাখবেন ততই কমে টিকেট পাবেন। যাওয়ার কমপক্ষে এক মাস আগে টিকেট কেটে রাখলে ১৫,০০০-২০,০০০ টাকা পর্যন্ত বাঁচানো সম্ভব। আর টিকেট কাটার সময় দেখে নিবেন কোন এয়ারলাইন্স ডিসকাউন্ট অফার করছে কিনা।
ঢাকা থেকে মালে ফ্লাইটে যেতে ৪-৫ ঘন্টার মতো লাগে। এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর পর আপনাকে ইমিগ্রেশন পার হতে হবে। ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় উপরোক্ত ডকুমেন্টসগুলো আপনার সাথে রাখুন। মালদ্বীপের ইমিগ্রেশন পার হতে খুব বেশিক্ষণ লাগে না। অল্প সময়ের মধ্যেই ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে ফেলতে পারবেন। এরপর চলে যাবেন এয়ারপোর্টের সাথেই অবস্থিত ফেরী ঘাটে বা এয়ারপোর্টের বাইরে থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে সোজা হোটেলে।
মালদ্বীপকে বলা হয় হাজার দ্বীপের দেশ। প্রায় ১,২০০ দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ রাষ্ট্র। এর মধ্যে কিছু পাবলিক দ্বীপ আর কিছু প্রাইভেট দ্বীপ। পাবলিক দ্বীপগুলোতে ট্যুরিস্টদের পাশাপাশি মালদ্বীপের স্থানীয়রা বাস করেন। আর প্রাইভেট দ্বীপগুলোর বিলাসবহুল রিসোর্ট ট্যুরিস্টদের টার্গেট করে বানানো।
মালদ্বীপে পৌঁছানোর পর বেশিরভাগ পর্যটকই রাজধানী মালে থেকে ৪-৫ কি.মি. দূরে হুলহুমালে তে অবস্থান করেন। হুলহুমালের সেরা হোটেলগুলো নিম্নে দেয়া হলোঃ
হুলহুমালেতে ১-২ রাত থেকে চলে যান মাফুশি আইল্যান্ড এ। এটি একটি পাবলিক আইল্যান্ড যেখানে ট্যুরিস্টদের জন্য আছে বিকিনি বীচ আর লোকালদের জন্য লোকাল বীচ। বিকিনি বীচের সাথে সুন্দর সুন্দর বীচ ভিউ রুমওয়ালা অনেকগুলো হোটেল আছে। নিম্নের তালিকা থেকে যে কোন একটি হোটেল বেছে নিতে পারেনঃ
মালদ্বীপের সবচেয়ে আকর্ষনীয় অংশ এর অসংখ্য প্রাইভেট দ্বীপগুলোর মধ্যে একটিতে রাত্রিযাপন। এই দ্বীপগুলোর বিলাসবহুল ওভারওয়াটার বাংলোতে এক রাত থাকতে চাইলে আপনাকে গুণতে হবে প্রায় ১ লক্ষ টাকা। বাংলোগুলো সরাসরি সমুদ্রের ধার ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকে। সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের অসাধারণ ভিউ পাওয়া যায় বাংলো গুলো থেকে। আর সেই সাথে মালদ্বীপের সমুদ্রের পানির অপরুপ সৌন্দর্য্য তো আছেই। তো চলুন দেখি মালদ্বীপের সেরা বীচ রিসোর্ট কোনগুলোঃ
Spectacular Dining Experiences for Couples” title=”মালদ্বীপ পুলসাইড ব্রেকফাস্ট ” width=”624″ height=”451″ src=”https://lh4.googleusercontent.com/DWq1uT7I-jcAmMIwnTQnPCIU-DNDNzba47KbHqo6DjNLBGINDpPd_kV1MTg5roHd4rcg8gJ5btbzx7TbjaptmRUQM7bZj–0l-K8TYWxSd1szOBfC_rbTGho50vPWl-ry3ACbsVqyjSZvwJzUj9MZqTjtExBjns_-TBRwqIcHsY5trQCUH8xOzpBLQ” style=”box-sizing: border-box; vertical-align: middle; margin-left: 0px; margin-top: 0px;”>
মালদ্বীপের সব হোটেল/রিসোর্টে কমপ্লিমেন্টারি বুফে ব্রেকফাস্ট পাবেন। শুধু হুলহুমালেতে সকালের নাস্তার ব্যবস্থা নিজেদের করা লাগবে। হোটেলের আশেপাশে প্রচুর রেস্টুরেন্ট পাবেন খাওয়ার মতো। রেস্টুরেন্টগুলোয় সবরকম খাবার পাওয়া যায়।
মাফুশি আইল্যান্ডে বাঙালি রেস্টুরেন্ট/কুক খুঁজে বের করতে পারলে ভালো কারণ আমাদের কাছে ওদের স্থানীয় খাবার অতো ভালো নাও লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে যেকোন বাঙালি হোটেল স্টাফকে জিজ্ঞেস করলেই বলে দেবে কোথায় পাওয়া যাবে বাঙালি খাবার। তারা অনেকসময় হোটেল রুমেও খাবার পৌছে দেয়। স্থানীয় বাঙ্গালিদের কাছ থেকে খাবার নিলে লোকাল প্রাইস রাখে। ট্যুরিস্ট প্রাইস অনেক বেশি। খাবার সাধারণ ভাত, মাছ।
প্রাইভেট আইল্যান্ডে খাবারের দাম প্রচুর হলেও খাবারের মান সেরা। রিসোর্টের ইন-হাউজ রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে খেতে হবে। সবরকম খাবার পাবেন মেন্যু দেখে নিতে হবে। দুপুরে ব্যুফে খেতে দিবে।
মালদ্বীপ বেশ ব্যয়বহুল। তাই মালদ্বীপ ট্রিপ প্ল্যান করতে গেলে অবশ্যই টাকার কথা মাথায় রাখবেন। দুইজনের জন্য মালদ্বীপ যেতে কত লাগে নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলোঃ
বিমানের টিকেটঃ
ঢাকা টু মালদ্বীপের রিটার্ন টিকেটের মূল্য ৮৫,০০০-১,১৫,০০০ পর্যন্ত। টিকেট মূল্য কম-বেশি হওয়া নির্ভর করবে আপনি মালদ্বীপ ভ্রমণের কতদিন আগে টিকেট বুক করছেন তার ওপর। সর্বনিম্ন মূল্যে টিকেট পেতে কমপক্ষে এক মাস আগে টিকেট বুক করুন।
হুলহুমালেঃ
এয়ারপোর্ট থেকে হুলহুমালে যাতায়াত – ৪৫০ টাকা (ট্যাক্সিতে)
রুম রেন্ট (দুই রাত) – ১৫,০০০ টাকা
খাবার – ১০,০০০ টাকা
মালে শহর ঘুরে দেখা ও সিম কার্ড কেনা – ৮,০০০ টাকা
মাফুশি আইল্যান্ডঃ
হুলহুমালে থেকে মালে এয়ারপোর্ট যাতায়াত – ৪৫০ টাকা (ট্যাক্সিতে)
মালে থেকে মাফুশি আইল্যান্ড – ৫,০০০ টাকা (স্পীডবোট)
রুম ভাড়া (দুই রাত) – ১৬,০০০ টাকা
খাবার – ১০,০০০ টাকা
ওয়াটার অ্যাক্টিভিটি – ৩৫,০০০ টাকা
কোভিড টেস্ট (দুই জনের) – ৮,৫০০ টাকা
প্রাইভেট আইল্যান্ড রিসোর্টঃ
রুম ভাড়া (এক রাত) – ১,০০,০০০ টাকা (স্পীডবোটে যাতায়াত সহ)
খাবার – ৫০,০০০ টাকা
মাফুশি থেকে মালে এয়ারপোর্ট – ৫,০০০ টাকা (স্পীডবোট)
সুতরাং আপনার মালদ্বীপ ট্রিপে সবমিলিয়ে প্রায় ৪,০০,০০০ টাকার মতো খরচ হবে।
আশা করি আপনাকে মালদ্বীপ ভ্রমণ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পেরেছি। কোন প্রশ্ন থাকলে বা ঢাকা – মালদ্বীপ বিমান ভাড়া ও বুকিং পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে কল করুন +৮৮-০৯৬১৭-১১১-৮৮৮ নাম্বার এ বা ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট flightexpert.com।
এই ব্লগটি ভালো লাগলে ও আরো পড়তে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন আমাদের ব্লগ পেইজে।