বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

হাজারো অতি ধনী যুক্তরাজ্য ছেড়ে যাচ্ছেন কেন

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০২৪

যুক্তরাজ্যে পরবর্তী নির্বাচনে লেবার পার্টি জিতবে ও সরকার গঠন করবে—এমন সম্ভাবনা রয়েছে। লেবার পার্টির জমানায় করহার বাড়তে পারে—এমন আশঙ্কায় রেকর্ডসংখ্যক ধনী চলতি বছর যুক্তরাজ্য ছাড়তে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অভিবাসনবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের এক সাময়িক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, চলতি বছর যুক্তরাজ্যের প্রায় ৯ হাজার ৫০০ জন ধনী দেশ ছাড়তে পারেন, যাঁদের অন্তত ১০ লাখ পাউন্ড নগদ ও বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ আছে। গত বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালে এর প্রায় অর্ধেক মানুষ যুক্তরাজ্য ছেড়েছেন।

ইনস্টিটিউট ফর গভর্নমেন্টের প্রধান নির্বাহী হানা হোয়াইট বলেছেন, হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, নানাবিধি কারণে যুক্তরাজ্য আর ধনীদের জন্য আকর্ষণীয় থাকছে না। ব্রেক্সিটের জের এখনো চলছে; সেই সঙ্গে সিটি অব লন্ডনও আর বিশ্বের আর্থিক জগতের কেন্দ্র হিসেবে গণ্য হচ্ছে না।

নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েলথ নামের একটি বিনিয়োগ কোম্পানির তথ্য-পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছে হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স। বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী, প্রেসিডেন্ট, পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা অংশীদার—এ শ্রেণির মানুষেরা দেশটিতে এক বছরের বেশি সময় ধরে থাকলে তাদের বিবেচনার মধ্যে নেওয়া হয়।

তবে এ প্রবণতা নতুন কিছু নয়। বিশ্বজুড়ে ধনীদের গণহারে অভিবাসন করার যে ধারা তৈরি হয়েছে, এটি তারই অংশ। ২০১৭ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ১৬ হাজার ৫০০ ধনী যুক্তরাজ্য ছেড়েছেন। হেনলি প্রাইভেট ওয়েলথ মাইগ্রেশন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছর বিশ্বের ১ লাখ ২৮ হাজার ধনী অভিবাসন করতে পারেন, গত বছরের চেয়ে যা ৮ হাজার বেশি।

হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের ব্যক্তিশ্রেণির ভোক্তাবিষয়ক শাখার প্রধান ডমিনিক ভলেক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, পৃথিবীতে এখন ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার সঙ্গে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা চলছে; এ পরিস্থিতিতে ধনীরা রেকর্ড সংখ্যায় দেশ ছাড়ছেন।

বিশ্বের যে ১৫টি দেশে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ধনীর বসবাস, সেগুলোর মধ্যে অতি ধনীদের যুক্তরাজ্য ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। ২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যের চেয়ে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবে কেবল চীন, এ বছর ১৫ হাজার ২০০ অতি ধনী দেশটি ছেড়ে যেতে পারেন।

২০১৩ সালের পর যুক্তরাজ্য বাদে জাপান ও হংকংয়ের অতি ধনীর সংখ্যা কমেছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও ফ্রান্সে অতি ধনীর সংখ্যা বেড়েছে।

ব্রেক্সিটের কারণে যুক্তরাজ্যের মানুষের ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশে অবাধ যাতায়াত বন্ধ হয়েছে; সেই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন নতুন বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের সঙ্গে আছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা।

যুক্তরাজ্যে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচজন প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য শাসন করেছেন; এর মধ্যে ২০২২ সালে লিজ ট্রাসের ৪৫ দিনের সরকারও ছিল। তিনি কর হ্রাস করে আর সরকারের ঋণ বৃদ্ধি করে ব্যয় মেটাতে চেয়েছিলেন। এ সিদ্ধান্তে পাউন্ডের ব্যাপক দরপতন হয় এবং শেষমেশ ব্যাংক অব ইংল্যান্ডকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।

এ ধরনের অস্থিতিশীলতার কারণে নীতিপ্রণেতাদের পক্ষে দেশটির শ্লথ অর্থনীতির গতি বাড়ানো বা বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না।

আগামী মাসেই যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটারদের নিয়ে করা মতামত জরিপে দেখা গেছে, কির স্টারমারের লেবার পার্টি প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি সমর্থন পেয়ে এগিয়ে আছে। প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া লাগানো ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লেবার পার্টি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।

স্টারমার ও সম্ভাব্য পরবর্তী অর্থমন্ত্রী র‍্যাচেল রিভস নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে আয়কর ও বিক্রয়কর বৃদ্ধি করা হবে না। এ ছাড়া ঋষি সুনাকের সরকার যে রাজস্বনীতি প্রণয়ন করেছে, সেই নীতিতেও অটল থাকবেন বলে তাঁরা জানিয়েছেন।

কিন্তু নির্বাচিত হলে লেবার পার্টি সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে কর বৃদ্ধিতে অঙ্গীকারবদ্ধ, যেমন ধনীদের আয়কর। এমনিতেই ধনীরা যুক্তরাজ্যে ছেড়ে যাচ্ছেন; সেই সঙ্গে এমন নীতির কারণে ধনীদের দেশ ছাড়ার প্রবণতা আরও বাড়তে পারে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com