শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩২ অপরাহ্ন

হাঙ্গেরিতে উচ্চশিক্ষা

  • আপডেট সময় রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০২৪

চাকরি বা ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সহজলভ্যতার সঙ্গে শিক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল ও উন্নত ক্যারিয়ারের বিষয়টি সম্পৃক্ত। এই সুবিধা আরও বহুগুণে বেড়ে যায়, যখন একাধিক দেশে ভ্রমণের সুযোগ থাকে। মূলত এ কারণেই উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীরা পাড়ি জমান শেনজেনভুক্ত দেশ হাঙ্গেরিতে। গত কয়েক বছরে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অফুরন্ত সম্ভাবনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে দেশটি। জেনে নেওয়া যাক, হাঙ্গেরিতে কোন বিষয়ে চাকরির বাজার ভালো, আবেদনপদ্ধতি ও পড়াশোনার খরচ, বৃত্তিসহ যাবতীয় তথ্য।

হাঙ্গেরি ভাষা দক্ষতা বাধ্যতামূলক নয়। তবে পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি এবং পড়াশোনা শেষে ভালো চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়াবে। হাঙ্গেরি বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৬ বছরের স্টাডি-গ্যাপ পর্যন্ত অনুমতি দেয়। তবে কমপক্ষে ১২ বছরের অধ্যয়ন (উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত) সময়সীমা সম্পন্ন করা আবশ্যিক।

উচ্চশিক্ষায় কেন হাঙ্গেরি বেছে নেবেন

হাঙ্গেরিতে মেলে তুলনামূলক স্বল্প খরচে উচ্চমানের শিক্ষা লাভের সুযোগ। কিউএস র‌্যাংকিংয়ে দেশটির সেজেড ইউনিভার্সিটি আছে ৬০১ নম্বর অবস্থানে। ডেব্রেসেন ইউনিভার্সিটির অবস্থান ৬৭১, ইওত্ভস লোর‌্যান্ড ইউনিভার্সিটি ৭০১, বুদাপেস্ট ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যান্ড ইকোনমিকস ৭৪১ ও পেচ ইউনিভার্সিটি ৮০১-এ।

জীবনযাত্রার ব্যয়ভারের দিক থেকেও আধুনিক দেশটি ইউরোপের সবচেয়ে অল্প খরচের দেশগুলোর একটি। যেমন বুদাপেস্টে থাকার খরচ প্রাগ, জুরিখ, মাদ্রিদ ও এথেন্সের মতো শহরগুলোর তুলনায় কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কম। তাই বাজেট–সচেতন মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য হাঙ্গেরি সেরা বিকল্প। এ ছাড়া ক্রাইম ইনডেক্সে প্রতি লাখে ৩৩ দশমিক ৮ হওয়ায় নিরাপদ দেশ হিসেবে ইউরোপের সেরা দেশগুলোর মধ্যে হাঙ্গেরি একটি।

হাঙ্গেরিতে উচ্চশিক্ষার আবেদনের যোগ্যতা কী

উচ্চশিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের হাঙ্গেরিকে নির্বাচন করতে হলে কিছু পূর্বশর্ত পূরণ করতে হবে। সেগুলো হলো—

* আন্ডারগ্র্যাজুয়েশনের জন্য হাইস্কুল ডিপ্লোমা বা সমমানের একাডেমিক ডিগ্রি

* গ্র্যাজুয়েশনের জন্য স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি

* পিএইচডির জন্য স্নাতকোত্তর বা সমমানের ডিগ্রি

* মেডিসিন, ফার্মেসি, দন্তচিকিৎসা, প্রকৌশল, স্থাপত্য, আইন, মনোবিজ্ঞান এবং তথ্যবিজ্ঞানের মতো প্রোগ্রামগুলোর জন্য নির্দিষ্ট প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।

* ভাষাগত দক্ষতার ক্ষেত্রে, আন্ডারগ্র্যাজুয়েশনের জন্য টোয়েফলে স্কোর লাগবে ৭২, স্নাতকের জন্য ৭৯, এবং পিএইচডির জন্য ৯০। আইইএলটিএস স্কোর আন্ডারগ্র্যাজুয়েশনের জন্য ৫.৫, স্নাতকের জন্য ৬.০, এবং পিএইচডির জন্য ৬.৫।

হাঙ্গেরির সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্স কোনগুলো

* সেজেড ইউনিভার্সিটি

* ডেব্রেসেন ইউনিভার্সিটি

* ইওত্ভস লোর‌্যান্ড ইউনিভার্সিটি

* বুদাপেস্ট ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যান্ড ইকোনমিকস

* পেচ ইউনিভার্সিটি

* করভিনাস ইউনিভার্সিটি অব বুদাপেস্ট

* হাঙ্গেরিয়ান ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেস

* জ্যাকেনি ইসৎভান ইউনিভার্সিটি

* মিশকল্টস ইউনিভার্সিটি

* প্যানোনিয়া ইউনিভার্সিটি

এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন বিষয়গুলো হলো—

* তথ্যবিজ্ঞান

* তথ্যপ্রযুক্তি

* আইন

* ন্যাচারাল সায়েন্স

* চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞান

* ব্যবসা ও অর্থনীতি

* স্থাপত্য

* প্রকৌশল

* মেডিসিন

* দন্তচিকিৎসা

* ব্যবসায় প্রশাসন

আবেদন করবেন যেভাবে

অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় বছরের সাধারণত দুটি সময়ে ভর্তি নেওয়া হয়। একটি হচ্ছে সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া ফল সেমিস্টারে এবং আরেকটি ফেব্রুয়ারিতে স্প্রিং সেমিস্টারে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের পদ্ধতি ভিন্ন, যা ভর্তির মৌসুমগুলোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। নথি আপলোড এবং আবেদন ফি দেওয়ার মাধ্যমে আবেদনপ্রক্রিয়া এই অনলাইন পোর্টালগুলোর মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নথিপত্রগুলো নির্দিষ্ট সময়সীমার আগেই ডাকযোগে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসে পাঠাতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবেদনপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে স্কাইপে বা জুমের মাধ্যমে অনলাইনে সাক্ষাৎকার নেওয়াও হয়ে থাকে।

প্রয়োজনীয় নথিপত্র

অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় আবেদনের সময় আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের নিকট যে কাগজপত্রগুলো চেয়ে থাকে, তা হলো—

* অনলাইনে পূরণকৃত সম্পূর্ণ আবেদন

* ইংরেজিতে অনূদিত বিগত পরীক্ষার সনদের প্রতিলিপি

* মোটিভেশন লেটার

* ব্যক্তিগত আইডি বা পাসপোর্টের কপি

* ২ থেকে ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি

* ন্যূনতম ২ কপি একাডেমিক রেফারেন্স লেটার

* হালনাগাদ সিভি

এর বাইরেও সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামের ওপর নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নথি চাইতে পারে।

স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন যেভাবে

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অফার লেটার পাওয়ার পরই স্টাডি ভিসার কাজ শুরু করতে হবে। হাঙ্গেরির দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় ভিসা (টাইপ ডি)-ই মূলত এখানে স্টুডেন্ট ভিসা। এই ভিসায় শুধু হাঙ্গেরিতে একবার প্রবেশে ৯০ দিনের বেশি থাকার অনুমতি পাওয়া যায়।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

* কমপক্ষে দুটি ফাঁকা পৃষ্ঠাসহ ন্যূনতম ছয় মাসের মেয়াদ সম্পন্ন বৈধ পাসপোর্ট

* সম্পূর্ণ এবং স্বহস্তে স্বাক্ষরিত ভিসা আবেদনপত্র

* সদ্য তোলা ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি

* হাঙ্গেরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার, যেখানে নির্বাচিত প্রোগ্রামের নাম, সময়কাল, শুরুর তারিখ এবং টিউশন ফি উল্লেখ থাকবে

* টিউশন এবং জীবনযাত্রার খরচের জন্য পর্যাপ্ত তহবিলের প্রমাণপত্র (৩ থেকে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৮০০ ইউরো)।

* ন্যূনতম ৩০ হাজার ইউরোর (৩৮ লাখ ১৪ হাজার ৩৪৬ টাকা) চিকিৎসাবিমা

* হাঙ্গেরি ফ্লাইটের টিকিট

* শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র

* সিভি

* মোটিভেশন লেটার চিঠি

নথিগুলো সব একসঙ্গে নিয়ে সরাসরি চলে যেতে হবে হাঙ্গেরি কনস্যুলেট অফিসে। বর্তমানে বাংলাদেশের এই কনস্যুলেট অফিস থেকেই ভিসা প্রক্রিয়াকরণ করা যায়।

অফিসের ঠিকানা: লেভেল-৬, কনকর্ড আই-কে টাওয়ার, প্লট নং ২, ব্লক সিইএন (এ), মাদানি অ্যাভিনিউ, ঢাকা। এখানেই ভিসার ইন্টারভিউ নেওয়া হয় সংঘটিত হয় এবং এখান থেকে পরবর্তী সময়ে ভিসা সংগ্রহ করতে হয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com