বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটি দেশের প্রধান বিমানবন্দরও। এর পূর্বনাম ছিল জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ২০১০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। দেশের বৃহত্তম শাহজালাল বিমানবন্দর ১৯৮০ সালে তার যাত্রা শুরু করে।
এই বিমানবন্দরটি ঢাকার কুর্মিটোলায় অবস্থিত। ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে এটি ১৮ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। বিশাল এই বিমানবন্দরটি ১,৯৮১ একর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত।
এই বিমানবন্দর বাংলাদেশের সব এয়ারলাইন্সের হোম বেস। এটি দেশের প্রধান চারটি এয়ারলাইন্সের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। এই এয়ারলাইন্সগুলো হল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, জিএমজি এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ এবং রিজেন্ট এয়ারওয়েজ।
এছাড়াও ৩৫টির বেশি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স তাদের ফ্লাইটগুলো এই বিমানবন্দরের মাধ্যমে পরিচালনা করে আসছে। এই বিমানবন্দরে বাংলাদেশের অধিকাংশ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট উঠা-নামা করে। যাত্রীবাহী ও মালবাহী বেশিরভাগ এয়ারলাইন্সই এই বিমানবন্দরে এসে নামে ও গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
এই বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিশ্বের বিভিন্ন শহরে চলাচল করে। এছাড়া এই বিমানবন্দরের সাথে দেশের প্রধান শহরগুলোর সংযোগ রয়েছে। এই বিমানবন্দরে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী ও কার্গো এয়ারলাইন্স উঠা-নামা করে। বছরে প্রায় ৪০ লক্ষ আন্তর্জাতিক যাত্রী এবং ১০ লক্ষ অভ্যন্তরীণ যাত্রী এই বিমানন্দরটি ব্যবহার করে থাকে।
পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যায় ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার যুদ্ধবিমান উঠানামার জন্য তেজগাঁওয়ে একটি রানওয়ে নির্মান করেন। এই বিমানবন্দরটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের সিভিল এ্যাভিয়েশন কার্যক্রমের প্রথম বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে উঠে এবং এটি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর স্টেশনও ছিল।
এরপর ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কুর্মিটোলার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নতুন আরেকটি বিমানবন্দর নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে। ফরাসি বিশেষজ্ঞরা টার্মিনাল এবং রানওয়ে নির্মাণের পরামর্শ দেন। এরপর আস্তে আস্তে এই নতুন বিমানবন্দরের কাজ আগাতে থাকে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই বিমানবন্দরটির নির্মান কাজ অর্ধসম্পন্ন অবস্থায় থেমে যায়। এছাড়া যুদ্ধের ফলে এই কুর্মিটোলা বিমানবন্দরের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতিও সাধন হয়। স্বাধীনতা লাভের পর সরকার কর্তৃক এই বিমানবন্দরের পড়ে থাকা কাজ আবার শুরু করা হয়।
সেসময়ই এটিকে দেশের প্রধান বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। ১৯৮০ সালে এর রানওয়ে ও কেন্দ্রীয় অংশ চালু করার মাধ্যমে এই বিমানবন্দরটি তার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর শুভ উদ্বোধন করেন। আর তখনই তেজগাঁও বিমানবন্দরের সকল কার্যক্রম এই বিমানবন্দরে স্থানান্তর করা হয়। আর এটি হয়ে উঠে দেশের প্রধান বিমানবন্দর।
উদ্ভোধনের পরও এর কিছু কাজ বাকি থেকে যায়। এর সম্পূর্ণ কাজ শেষ হতে আরও তিনবছর সময় লেগে যায়। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার পর অবশেষে ১৯৮৩ সালে রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসাবে এর উদ্বোধন করেন।
এই বিমানবন্দরে যেসকল এয়ারলাইন্সের বিমান চলাচলা করে তা হল :-
• এয়ার আরাবিয়া এয়ার এশিয়া • এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস • বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স
• চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স • চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স • ড্র্যাগন এয়ার হংকং
• ড্রুক এয়ার • এমিরেটস • এত্তিহাদ এয়ারওয়েজ • গাল্ফ এয়ার
• জেট্ এয়ারওয়েজ • কুয়েত এয়ারওয়েজ • কিংফিশার এয়ারলাইন্স
• মালেশিয়া এয়ারলাইন্স • মালদিভিয়ান এয়ারওয়েজ • কাতার এয়ারওয়েজ
• রাখ এয়ারওয়েজ • সৌদি আরাবিয়ান এয়ারলাইন্স • সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স
• থাই এয়ারওয়েজ ইন্টারন্যাশনাল • টার্কিশ এয়ারলাইন্স • ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ
এই বিমানবন্দরটিতে রয়েছে রানওয়ে, দুটি টার্মিনাল বিল্ডিং (আরও একটি নির্মানাধীন অবস্থায় আছে), হ্যাঙ্গারস, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রাডার, গুদামঘর এবং এয়ারক্রাফট ব্যবস্থাপনা এবং পরিচালনার অত্যাধুনিক সকল যন্ত্রপাতি। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এই বিমানবন্দরে যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও সেবা রয়েছে।
এখানে উন্নত গাড়ি পার্কিং সুবিধা, পেসেঞ্জার লাউঞ্জ, লাগেজ ট্রলি,লাগেজ র্যাপিং, কার্গো সার্ভিস, হুইল চেয়ার, প্রাথমিক চিকিৎসা, ব্যাংকিং সেবা, শুল্ক-মুক্ত কেনাকাটা,খাবারের সুবিধা, হোটেল বুকিং সার্ভিস, নামাজের ঘর, বিশুদ্ধ পানি, ওয়াইফাই,ফ্লাইট ইনফোরমেশন ডিসপ্লে সিস্টেম (এফআইডিএস), লস্ট এন্ড ফাউন্ড, টিকেট সেলস কাউন্টারসহ আরো নানা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।