হাজার হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মার্কিন দূতাবাসে ভিসা সংক্রান্ত অ্যাপয়েন্টমেন্টের স্লটের জন্য অপেক্ষা করছেন। দূতাবাসে অনেক বেশি আবেদনপত্রের কাজ জমা পরার কারণে শিক্ষার্থীরা তাদের সেশন পিছিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে সুযোগ পেয়েছেন অনিল (ছদ্ম নাম)। দূতাবাসে তার ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ২২ অক্টোবর। আশা করা হচ্ছে দুই মাস পর তার সেশন শুরু হবে।
তিনি ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “আমি ভয় হচ্ছে আমার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পিছিয়ে যেতে পারে। আমি এখানে আসার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। শেষ পর্যায়ে এসে ভিসা সংক্রান্ত সমস্যার কারণে আটকে যাব কখনো ভাবিনি।” তবে অনিল ভাগ্যবানদের একজন। কারণ ২০২৩ সালে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হয়েছে।
ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস প্রায় ৮,৮০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে নন-ইমিগ্র্যান্ট এফ-ওয়ান ক্যাটাগরির ভিসা দিয়েছে, এটি একটি রেকর্ড সংখ্যা। যদিও, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং দূতাবাস এখনও প্রক্রিয়াধীন আবেদনগুলো নিয়ে কাজ করছে।
বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় থাকা সত্ত্বেও মার্কিন দূতাবাস শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য স্লট খুলতে পারছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাষ্ট্রের একজন শিক্ষা কর্মকর্তা ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “দূতাবাসের অভ্যন্তরে সংস্কার, কর্মীর ঘাটতি এবং করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে আগের আবেদনগুলো জমে আছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এত বিপুল পরিমাণ আবেদন সামলানোর চেষ্টা করছে দূতাবাস।”
অনিলের মতো আরেক শিক্ষার্থী শায়লা আরা (ছদ্ম নাম) জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির সুযোগ হারানোর ভয়ে আছেন। তিনি ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “আমি একজন চাকরিজীবী, কিন্তু এখন সবকিছুর পাশাপাশি আমি সবসময় ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেজ চেক করি। স্লট খোলার জন্য দিন গুনছি।”
তিনি আরও বলেন, “শুধু আমি না; ভিসা না পাওয়ার আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী। অন্যদিকে, গত মাসে ভারতের মার্কিন দূতাবাস আনুষ্ঠানিকভাবে স্টুডেন্ট ভিসাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং অবিলম্বে কাজ শুরু করে দিয়েছে।”
ভিসার জন্য অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীদের মতে, এডুকেশন ইউএসএ গত ১১ মে এফ-ওয়ান ভিসাসংক্রান্ত একটি সেমিনারের আয়োজন করে, সেখানে কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের আরও ভিসা দেওয়ার আশ্বাস দেন। পরের দিন, দূতাবাস অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের জন্য প্রচুর পরিমাণে ভিসা জারি করলেও তা কোনো কাজে আসেনি। কারণ দুই মাস আগেই ক্লাস শুরু হয়ে গেছে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে, মার্কিন দূতাবাস তাদের কাছে অস্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে। তাদের একজন মাহবুবুল হক ভূঁইয়া। তিনি বলেন, “যোগাযোগের অভাবের শিক্ষার্থীরা তাদের করণীয় সম্পর্কে জানে না। গত বছরের জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি ভিসা দিয়েছিল দূতাবাস। তখন শিক্ষার্থীরা শেষ মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে।”
তিনি আরও বলেন, “ওই দুই বছর করোনাভাইরাস প্রধান সমস্যা ছিল। কিন্তু আমরা ভেবেছিলাম অন্তত এখন এই প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। আমরা তাদের কাছ থেকে স্পষ্ট যোগাযোগ ব্যবস্থা চাই। তারা ভিসা দিতে না পারলেও আমাদের জানানো উচিত। আমরা আক্ষরিক অর্থে এখানে একটি সুতোর মধ্যে ঝুলন্ত অবস্থায় আছি।”
আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত ১৩ মে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের উদ্বেগগুলো জানাতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান।
এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন এমন ৩৫০ শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর করা একটি চিঠি তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জমা দেন। প্রতিনিধিরা জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের কষ্টের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন এবং প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য মার্কিন দূতাবাসকে চিঠি দেওয়ার আশ্বাস দেন।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক এমদাদুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই জটিলতার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।