রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন

স্বর্গসুখ পেতে চাইলে ঘুরে আসুন শিমলা-মানালী-লাদাখ

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৩

দুর্গাপুজোর সময় নিশ্চয়ই রাজ্যের বাইরে যেতে চান না? পুজোর সময় অনেকেই নিজের বাড়ির এলাকায় থাকতে চান। কিন্তু ঘুরতে যেতেও ইচ্ছা করছে। অফিসে কথা বলে দেখেছেন যে পুজোর আগে কয়েকদিন ছুটিও পেয়ে যাবেন। তবে সেটা খুব বড় ছুটি হবে না। বড়জোর ১০ দিন ছুটি পাবেন। যে কটা দিন ছুটি মিলবে, তাতে পাহাড়ে যেতে চাইলে মেরেকেটে দার্জিলিং-সিকিম হবে। কিন্তু ইতিমধ্যে একাধিকবার দার্জিলিং-সিকিম ঘোরা থাকলে কী করবেন? সেই উপায় বাতলে দিল ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা’। আর তাতে দার্জিলিং-সিকিমের ছুটিতেই অনায়াসে শিমলা-মানালিতে ঘুরে আসতে পারবেন। তাতে সময় যেমন কম লাগবে, তেমন খরচও কম পড়বে। কীভাবে মাত্র ওই কয়েকদিনে শিমলা-মানালি ঘুরবেন, কোন ট্রেন ধরবেন, কোথায়-কোথায় যাবেন, সেই পুরো ট্যুর প্ল্যান করে দিল হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা।

ট্যুরের সময়

এবার দুর্গাপুজো শুরু হচ্ছে ২০ অক্টোবর থেকে। আপনি সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরের শুরুতেই ঘুরে আসতে পারেন। তাহলে মহালয়াও (১৩ অক্টোবর পড়েছে) নিজের বাড়িতে কাটাতে পারবেন। আবার পুজোর আগে মনটা একেবারেও ফ্রেশ হয়ে যাবে।

ট্যুরের প্ল্যানিং

১) প্রথম দিন: হাওড়া থেকে রাত ৯ টা ৫৫ মিনিটে ছাড়বে আপ হাওড়া-কালকা নেতাজি এক্সপ্রেস। বর্ধমানে ঢুকবে রাত ১১ টা ৩ মিনিটে (পাঁচ মিনিট দাঁড়াবে)। রাত ১২ টা ১ মিনিটে ঢুকবে দুর্গাপুরে (দু’মিনিটের স্টপেজ)। রাত ১২ টা ৩২ মিনিটে আসানসোলে ঢুকবে (পাঁচ মিনিট দাঁড়াবে। অর্থাৎ ওই তিনটি স্টেশন থেকে আপনার বাড়ি খুবে দূরে না হলে, যেদিন ট্রেন আছে, সেদিন অনায়াসে অফিসের কাজ করে নিতে পারবেন। সেদিন ছুটি নিতে হবে না।

২) দ্বিতীয় দিন: পুরো দিন ট্রেনে কাটবে।

৩) তৃতীয় দিন: একেবারে গভীর রাতে কালকায় নামবেন (রাত তিনটে)। অর্থাৎ বুধবার রাতে হাওড়া থেকে ট্রেনে উঠলে শুক্রবার (ইংরেজি মতে) রাত তিনটেয় কালকায় পৌঁছে যাবেন।

তারপর সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। কালকা-শিমলা কালকা টয় ট্রেন পাবেন। সকাল ৬ টার আশপাশে যে টয় ট্রেন থাকবে, সেটার টিকিট কাটলে ভালো হবে। তার আগের টয় ট্রেন ধরলে অন্ধকার থাকার কারণে প্রথমে কিছুটা প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন না।

মোটামুটি ৬টা নাগাদ কালকা থেকে টয় ট্রেন ধরলে বেল ১২টা নাগাদ শিমলায় পৌঁছে যাবেন। শিমলা স্টেশন থেকে বিভিন্ন হোটেলের দূরত্ব তেমন বেশি নয়। তাই বড় গ্রুপ গেলে কয়েকজন মিলে আগে হোটেল দেখে আসতে পারেন। সেই হোটেল থেকেই স্টেশনে গাড়ি পাঠিয়ে বাকিদের নিয়ে যাবে।

<p>কালকা-শিমলা টয় ট্রেন। (ছবি সৌজন্যে পিটিআই)</p>
কালকা-শিমলা টয় ট্রেন। (ছবি সৌজন্যে পিটিআই)

হোটেলে পৌঁছ একটু ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিতে পারেন। দীর্ঘযাত্রার ধকলের কারণে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে পারেন সকলে। বিকেলের দিকে শিমলার ম্যালে ঘুরতে যেতে পারেন। সেই ফাঁকেই শিমলার আশপাশ (কুফরি, হনুমান মন্দিরের মতো জায়গা) ঘুরে দেখার জন্য গাড়ি বুক করে রাখা যেতে পারে।

৪) চতুর্থ দিন: চতুর্থ দিন একেবারে সকাল-সকাল বেরিয়ে পড়ুন। প্রথমেই শিমলা কালীবাড়ি থেকে ঘুরে আসুন। তারপর শিমলার আশপাশ দেখতে বেরিয়ে পড়ুন। ঘুরে-টুরে এসে মানালি যাওয়ার জন্য গাড়ি বুকিং বা বাসের টিকিট বুকিং করে ফেলুন। সরকারি বাসও যায়। যা শিমলার বাস টার্মিনাল থেকে ছাড়বে।

৫) পঞ্চম দিন: সকাল-সকাল শিমলা থেকে মানালির উদ্দেশে রওনা দিন। সকাল ৮টা ৩০ মিনিট নাগাদ যাত্রা শুরু করলে মানালিতে পৌঁছাতে বিকেল-সন্ধ্যা হয়ে যাবে। মাঝপথে খাবার জায়গা আছে। তাই খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। বিশেষত মাণ্ডিতে প্রচুর খাবার দোকান আছে।

বিকেল-সন্ধ্যায় মানালি পৌঁছে হোটেল দেখে নিন। তারপর ফ্রেশ হয়ে ম্যালে ঘুরে নিন। ম্যালে প্রচুর খাবার দোকান পাবেন। তারইমধ্যে মানালির আশপাশ এলাকা (রোটাং পাস, মণিকরণ, কাসোল) ঘুরে দেখার জন্য গাড়ির সঙ্গে কথা বলে রাখুন। পরের দু’দিন সকাল আটটা-ন’টার মধ্যে গাড়িকে চলে আসতে বলুন।

৬) ষষ্ঠ দিন: সকাল-সকাল রোটাং পাস, অটল টানেল এবং সোলাং ভ্যালির উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ুন। খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কোনও চিন্তা নেই। সকাল ন’টা নাগাদ ম্যালের কয়েকটি রেস্তোরাঁ খুলে যাবে। সেখানে আলুর পরোটার মতো খাবার পেয়ে যাবেন। নাহলে রোটাংয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় খাবার দোকান পেয়ে যাবেন। সেখানেও খেয়ে নিতে পারেন। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে গেলে রোটাংয়ে নেমেই বরফ পাবেন না। চার কিলোমিটার মতো হেঁটে গেলে বরফ পাবেন। রোটাংয়ে যাওয়ার সময় বিশেষ বুট ও জামা নেওয়ার জন্য জোরাজুরি করা হতে পারে। তবে ঠিকঠাক বুট ও সোয়েটার থাকলে সেগুলি লাগবে না।

<p>রোটাংয়ের পথে। </p>
রোটাংয়ের পথে।

রোটাং পাস থেকে অটল টানেলে যেতে পারেন। সেখান থেকে যেতে পারেন সোলাং ভ্যালিতে। তবে ওই সোলাং ভ্যালিতে একেবারেই বরফ পাবেন না। সময় থাকলে সিশু ঘুরে আসার পরিকল্পনা করে আসতে পারেন। বিকেল-সন্ধ্যার মধ্যে মানালিতে নিজেদের হোটেলে পৌঁছে যাবেন। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ম্যালে ঘুরতে বেরিয়ে পড়তে পারেন। সেদিন কিছু কেনাকাটিও করে নিতে পারেন আপনি।

৭) সপ্তম দিন: আবারও সকাল-সকাল কাসোল এবং মণিকরণের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ুন। প্রথমেই কাসোলে চলে যান। পার্বতী নদীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দারুণ লাগবে। পার্বতী নদীর ধারে কিছুক্ষণ বসে উপভোগ করতে পারবেন। মন জুড়িয়ে যাবে। তারপর মণিকরণ চলে যান। মণিকরণের উষ্ণ প্রস্রবণ দেখতে পাবেন। সেখানে গুরুদোয়ারার লঙ্গরেও খেতে পারেন।

দিনভর ঘুরে নিয়ে মানালিতে ফিরে আসুন। কিছু কেনাকাটি বাকি থাকলে আরও করে নিন। শেষ সন্ধ্যায় মানালি আরও একটু উপভোগ করার সুযোগ মিস করবেন না। তারইমধ্যে পরদিন মানালি থেকে দিল্লি যাওয়ার বাসের টিকিট কেটে নিন। অনলাইনে আইআরসিটিসির অ্যাপে টিকিট বুকিং করতে পারবেন (তবে আগেরদিনও টিকিট কেটে রাখতে পারেন)। সেইসঙ্গে সব লাগেজ গুছিয়ে ফেলুন। শেষদিনের জন্য ফেলে রাখবেন না। কারণ পরদিন সকালে ঘোরার প্ল্যান থাকছে।

৮) অষ্টম দিন: সকাল-সকাল ঘুম উঠে পড়ুন। বেলা ১২টায় হোটেল থেকে চেক-আউট করতে হবে। তাই সকাল সাতটার মধ্যে বেরিয়ে পড়লে ভালো হয়। তারপর হেঁটে-হেঁটে হিড়িম্বাদেবী মন্দিরে চলে যান। অটো করেও যেতে পারবেন। সেখানে কিছুক্ষণ থেকে হোটেলে ফিরে আসুন। বেলা ১২টার মধ্যে চেক-আউট করে নিন।

বাস মোটামুটি বিকেল ৩টে ৩০ মিনিট নাগাদ থাকবে। তাই হোটেল থেকে চেক-আউটের পর মধ্যাহ্নভোজ সারতে পারেন। ম্যালে অনেক দোকান পাবেন। তবে ম্যালের সামনে যে বাসস্ট্যান্ড আছে, সেখান থেকে দিল্লি যাওয়ার বাস পাবেন না। ভলভো বাসস্ট্যান্ডে যেতে হবে। ম্যাল থেকে সেটার দূরত্ব বেশি নয়। ম্যালের সামনে কোনও সরকারি বাস ধরে ভলভো বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে যেতে পারবেন। সেখানে বাসে উঠে পড়ুন। রাতে মাণ্ডিতে একবার বাস দাঁড়াবে। সেখানে নৈশভোজ সেরে নিতে পারবেন।

৯) নবম দিন: সকাল আটটার মধ্যে দিল্লিতে নেমে যাবেন। সেখান থেকে অটো বা অ্যাপ ক্যাব করে নয়াদিল্লি স্টেশনে পৌঁছে যান। রাজধানী এক্সপ্রেস বিকেলে থাকায় ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করতে পারবেন। এসি থাকবে। ফার্স্ট-ক্লাস ওয়েটিং রুমে খরচও বেশি পড়বে না। তারপর নির্দিষ্ট সময় নয়াদিল্লি-শিয়ালদা বা নয়াদিল্লি-হাওড়া রাজধানী এক্সপ্রেসে উঠে পড়ুন।

১০) দশম দিন: সকাল ১০টা নাগাদ শিয়ালদা বা হাওড়ায় পৌঁছে যাবেন।

(বিশেষ দ্রষ্টব্য: শিমলায় পৌঁছে কোনও গাড়ির সঙ্গে প্যাকেজ নিতে পারেন। যা শিমলা থেকে মানালি পর্যন্ত ঘুরে দেখাবে। অর্থাৎ চতুর্থ দিন থেকে সপ্তম দিন পর্যন্ত পুরো প্যাকেজ করে নিতে পারবেন।)

কী কী জিনিস নিয়ে যাবেন?

সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরের শুরুতে তেমন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তাও ছাতা নিয়ে যাওয়া ভালো। শীতের জামাকাপড় খুব বেশি কিছু লাগবে না। ওই সময় যেরকম আবহাওয়া থাকবে, তাতে সবথেকে বেশি ঠান্ডা লাগতে পারে রোটাং পাসে। সেখানে একটি সোয়েটারেই কাজ চলে যাবে। তবে সুরক্ষার জন্য বাড়তি একটি সোয়েটার নিয়ে নিন। আর মোটামুটি ভালো বুট থাকলেই হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com