স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া স্বপ্নটা সবারই থাকে। উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনা শেষে সব শিক্ষার্থীর আশা থাকে ভালো ক্যারিয়ার গড়ার। অনেকের ভাবনায় থাকে বিদেশে পড়াশোনা করার। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে বিদেশে উচ্চশিক্ষার এই স্বপ্ন অধরা থেকে যায়। আর যদি দেশটা আমেরিকা হয় তাহলে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাওয়া কেমন হবে? উচ্চশিক্ষা পেতে শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ আমেরিকা। কেননা, দেশটিতে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের সুযোগও মেলে।
ফল ২০২৪ সালের আবেদন শুরু হবে মোটামুটি নভেম্বর-২০২৩ থেকে। যারা এটা ধরতে চাও তাদের জন্য কিছু পরামর্শ। সঠিক তথ্য ও প্রস্তুতির অভাবে অনেক সময় জীবন থেকে মূল্যবান সময় হারিয়ে যায়।
১। IELTS/TOEFL/GRE এর প্রিপারেশান নেওয়ার সময় এখনই
যারা অনার্স ফাইনাল ইয়ার/ফাইনাল সেমিস্টারেও আছো, তারা এখন থেকেই IELTS এর প্রিপারেশান শুরু করে দাও। মনে রাখবা, এপ্লিকেশন দেওয়ার পরেও স্কোর পাঠানোর সুযোগ থাকে। তাই এখনো সময় বাকি আছে। আমি এমনও দেখেছি যে, জানুয়ারিতে পরীক্ষা দিয়ে, একদম শেষ সময়ে স্কোর পাঠাইছে (কিছু ইউনিভার্সিটির এপ্লিকেশান ডেডলাইন থাকে জানুয়ারি ৩১ পর্যন্ত)। তবে ভালো হয়, যদি অক্টোবর-২০২৩ এর মাঝেই পরীক্ষা দেওয়া যায়। কারণ তাহলে স্কোর অনুযায়ী আবেদন করা যেতে পারে।
সামনে নির্বাচন থাকার কারণে কেউ যদি মনে করে যে এখন নতুন শহরে মুভ করা কঠিন, তাহলে মনে রাখা দরকার যে এখন অনেক পরীক্ষা অনলাইনেও দেওয়া যায়। তবে তার জন্য নিজেকে একটু অন্যভাবে প্রস্তুত করতে হবে (যেমন কাগজে-কলমে লেখা প্র্যাকটিস না করে, কি-বোর্ডে টাইপ করতে হবে)। তারপরেও, এই মানসিকতার কারণে অন্যদের চেয়ে তুমি একবছর এগিয়ে থাকতে পার।
৩। টাকা-পয়সার ব্যবস্থা রাখা
এখন IELTS/TOEFL/GRE পরীক্ষা দিতে প্রায় ২১/২২ হাজার টাকা লাগে। তাই, এটার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা। মনে রাখতে হবে, প্রয়োজনে একাধিক পরীক্ষা দেওয়া লাগতে পারে। একবারে ভালো স্কোর নাও আসতে পারে। তুমি যদি মাত্র ২২ হাজার টাকার জন্য আর একবার পরীক্ষা না দিয়ে, যা স্কোর আছে তাই নিয়ে এপ্লাই করো, তাহলে পরে আফসোস করতে হতে পারে। কারণ, একবার আমেরিকায় আসতে পারলে এখানকার একমাসের টাকায় তোমার সকল খরচ উঠে আসতে পারে। তাই লাগলে একাধিকবার চেষ্টা করা দরকার এবং তার জন্য টাকার ব্যবস্থা করতে হবে। মোটামুটি যেকোনো একটা ইউনিভার্সিটিতেও আবেদন করার জন্য ৬.৫/৭ স্কোর লাগে IELTS এ, ৩০০-৩১০ GRE তে।
৪। আবেদন করার জন্য কিছু খরচ হাতে রাখা
অনেক সমর কিছু ইউনিভার্সিটি এপ্লিকেশন ফিস নেয় ৫০-১৫০ ডলার, মানে ৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। তাই মোটামুটি ৫ টি ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করার জন্য ৫০ হাজার টাকা হাতে রাখা ভালো। কখনো কখনো ইউনিভার্সিটি আবেদন খরচ না নিলেও, অনেক ডকুমেন্ট পাঠানো লাগে DHL/FedEX এগুলোতে। তাই তার জন্যেও প্রস্তুত থাকা দরকার। সাধারণত একটা ইউনিভার্সিটিতে ডকুমেন্টস পাঠাতে ২.৫ হাজার টাকা লাগে।
৫। আগেভাগে কাঙ্ক্ষিত ইউনিভার্সিটির ব্যাপারে খোঁজ-খরব নেওয়া
US News Ranking নামে একটা ওয়েবসাইট আছে, যেখান থেকে কোন ইউনিভার্সিটিতে কেমন কি লাগে (সিজিপিএ, IELTS/TOEFL/GRE স্কোর) তার ধারণা পাওয়া যায়। তাই নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী ইউনিভার্সিটির একটা শর্টলিস্ট তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে। লিংক নিচে দেওয়া হলো:
https://www.usnews.com/education/best-global-universities/
৬। প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ করা
আগে থেকে প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ করলে, তারা অনেক সময় সিভি দেখে কিছু ধারণা দেয়। যদি পজেটিভ কিছু বলে, তাহলে সে-সমস্ত ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করলে ফান্ডিং পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাই এখন থেকে ইমেইল-এ যোগাযোগ করা দরকার। সাথে সাথে নিজের দেশের, নিজের ইউনিভার্সিটির প্রফেসরদের থেকেও যোগাযোগ করা দরকার। কারণ প্রত্যেকটি আবেদনের সাথে ৩ টি করে রেফারেন্স লেটার দিতে হয়। তাই প্রফেসরদের যদি আগে থেকেই আইডিয়া দেওয়া থাকে, তাহলে উনারা তোমার জন্য আলাদা একটা সময় বরাদ্দ রাখবেন।
৭। আগে-ভাগে আবেদন শেষ করা
প্রস্তুতি শেষ হওয়ার সাথে সাথে যত দ্রুত সম্ভব আবেদন করে ফেলা দরকার, ডেডলাইন এর অপেক্ষায় না-থেকে। কারণ, একটা ইউনিভার্সিটি হয়তো এক বছরে একটি সাবজেক্টে ৩-৫ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে থাকে (ফান্ডেড)। তাই তারা যদি অন্য কাউকে কথা দিয়ে ফেলে আর এরপর তুমি আবেদন কর, তাহলে সেটা বৃথা। তবে হ্যাঁ, প্রস্তুতি না শেষ হলে তো আর কিছু করার নেই। সেক্ষেত্রে প্রফেসরদের সাথে ইমেইল করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রফেসর কথা দিলে তোমার আবেদন করার অপেক্ষায় থাকবেন। এখানে মিথ্যা ওয়াদা বলে কিছু নাই, প্রফেসর যদি ইয়েস বলেন তো ইয়েস।