ট্রাম্প প্রশাসন কিছু শরণার্থী ও আশ্রয়প্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য গ্রিনকার্ড আবেদন পর্যালোচনার বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। অতিরিক্ত যাচাই-বাছাইয়ের জন্য অভিবাসী ও শরণার্থীদের গ্রিনকার্ডের আবেদন প্রক্রিয়া সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দুটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এই দুই শ্রেণির গ্রিনকার্ড আবেদনের প্রক্রিয়া ঝুলে গেছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। এর ফলে কয়েক হাজার বাংলাদেশিসহ ১০ লাখের বেশি বিদেশির নিরাপদে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হতে চলেছে। কারণ এমন আদেশ রদ না হলে চলমান অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর অভিযান থেকে এসব আবেদনকারী রেহাই পাবেন না বলে অভিজ্ঞজনরা মন্তব্য করেছেন।
ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়প্রাপ্ত শরণার্থীদের এই প্রক্রিয়ায় ব্যাপকভাবে যাচাই করা হয়েছে। যাচাইয়ের পর ইতিবাচক সাড়া পেলে গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করার আগে তাদের (শরণার্থী) অবশ্যই এক বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে হবে বলেও নির্দেশনা রয়েছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। তাই সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমলে বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়া অনেক সন্ত্রাসী, খুনি, দাগী আসামি ও মাদক পাচারকারী আমাদের সমাজে মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে। এসব অবৈধ অভিবাসীর অনেকে ইতিমধ্যে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। চুরি-ছিনতাই-রাহাজানিতেও জড়িত থাকার অভিযোগে অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছে।
ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন জাস্টিস সেন্টারের পরিচালক আজাদেহ ইরফানি বলেছেন, সব অভিবাসীকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে ট্রাম্প প্রশাসন ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থী।
এর ফলে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের স্বাভাবিক অপেক্ষার সময় ৮ থেকে ১০ মাসের চেয়ে অনেক বাড়বে। এভাবে তারা ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অভিযানের শিকারও হতে পারেন। যদিও ট্রাম্প অঙ্গীকার করেছেন, কেবল গুরুতর অপরাধী অবৈধ অভিবাসীরা তার টার্গেট। কিন্তু ইতিমধ্যে অনেক গ্রিনকার্ডধারী এবং ভিসাধারীকেও গ্রেপ্তারের পর বহিষ্কার করা হয়েছে।
গাজায় আগ্রাসনের নিন্দা ও প্রতিবাদ সমাবেশে নেতৃত্ব দেওয়ায় গ্রিনকার্ডধারী ছাত্রীসহ ভিসাধারী শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার ছাড়াও ইতিমধ্যে ৩ শতাধিক ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টের ভিসা বাতিলের তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিয়ো।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরে অর্থাৎ বাইডেনের শেষ সময়ে ৭৬ হাজার ৮০০ বিদেশি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। একই সময়ে রিফিউজি হিসেবে গ্রিনকার্ডের আবেদন করেছেন ৪০ হাজার বিদেশি। এগুলো শুনানির অপেক্ষায় ছিল। এখন তা অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে গেল।
ইউএসসিআইএস সূত্রে জানা গেছে, গ্রিনকার্ডধারীদেরও গ্রেপ্তারের পর বহিষ্কারের ঝুঁকি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় সিটিজেনশিপের আবেদনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন বিদ্যমান সব রীতি উপেক্ষা করে এহেন বহিষ্কারের পন্থা অবলম্বন করায় গ্রিনকার্ডধারীদের মধ্যে সিটিজেনশিপের আবেদনের হিড়িক পড়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিনকার্ডধারীর সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি। আর গ্রিনকার্ড পাওয়ার অর্থই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজের আইনগত অধিকার পাওয়া। গ্রিনকার্ডধারীকেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের বিধি আছে, যদি তারা গুরুতর কোনো অপরাধে দণ্ডিত হন, তাহলে সেই দণ্ডিত ব্যক্তির গ্রিনকার্ড কেড়ে নেওয়া হয়। কেড়ে নেওয়ার নির্দেশটি জারি করেন একজন ইমিগ্রেশন জজ। একইভাবে গুরুতর কোনো অপরাধে লিপ্ত ন্যাচারালাইজড সিটিজেনের সিটিজেনশিপও বাতিলের বিধি রয়েছে, তবে সেটি খুব কম সময়ই ঘটে থাকে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা শিক্ষাঙ্গনে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভকারীদেরও টার্গেট করেছেন, যা নিয়ে তুমুল বিতর্ক চললেও ধরপাকড় এবং ভিসা বাতিলের উদ্যোগ থেকে বিন্দুমাত্র পিছপা হয়নি ইমিগ্রেশন বিভাগ।
সরকারি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে গ্রিনকার্ডধারী ১৩ মিলিয়ন অভিবাসীর মধ্যে অন্তত ১০.৮ মিলিয়ন তথা ১ কোটি ৮ লাখের মতোই সিটিজেনশিপের আবেদনের যোগ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাস করছে অ্যারিজোনা স্টেটে, ১ লাখ ৯৩ হাজার।