আফ্রিকার দেশ সেনেগাল থেকে স্পেনে এসেছেন ব্লায়ে, উসমান ও বাবাকার৷ এই তিন জন জানিয়েছেন দেশটিতে অনিয়মিত অভিবাসী হিসেবে তাদের টিকে থাকার সংগ্রামের কথা৷
২০২৪ সালে ৬৩ হাজারেরও বেশি অভিবাসী এসেছেন স্পেনে৷ সংখ্যাটি দেশটির অভিবাসন পরিসংখ্যানের ইতিহাসে রেকর্ড৷ স্পেনে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে যাদের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়, তারা ‘আরাইগো’ নামের বিশেষ অনুমোদনের অপেক্ষা থাকেন৷
এই ক্যাটাগরির পারমিটের চারটি ধরন রয়েছে—আরাইগো সোস্যাল বা সামাজিক ক্যাটাগরিতে বৈধতা, আরাইগো দে ত্রাবাখো বা কাজের আওতায় বৈধতা, আরাইগো ফর্মাসিয়ন বা প্রশিক্ষণ শেষে কাজের মাধ্যমে বৈধতা, আরাইগো ফামিলিয়ার বা পারিবারিক ক্যাটাগরিতে নিয়মিত হওয়া৷
প্রতিটির জন্য আবেদনকারীদের কমপক্ষে দুই থেকে তিন বছর অনিয়মিতভাবে স্পেনে বসবাসের প্রমাণ দিতে হয়৷
সরকার এসব প্রক্রিয়ায় অনিয়মিত অভিবাসীদের বৈধতা দিতে উদ্যোগ নিলেও, ‘আরাইগো ফর্মাসিয়ন’ অর্থাৎ প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামগুলোতে যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে মাত্র এক হাজার ৩৪৭ জন শেষ পর্যন্ত কাজ পেয়েছেন৷
যদিও মোট আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার৷ আবেদনকারীর সংখ্যার তুলনায় কাজ খুঁজে পাওয়ার হার নগণ্য৷
৩৫ বছর বয়সী ব্লায়ে প্রতিদিন মাদ্রিদের রাস্তায় বিভিন্ন কোম্পানির নকল ব্যাগ বিক্রি করেন৷ তিনি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন,
আমি শুধু খাওয়া এবং বাসা ভাড়া দেওয়ার মতো আয় করি৷ এই আয়ে অন্য কিছু করার উপায় নেই৷ এখানে আসার পর প্রতিদিন একই কথা বলতে বলতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি৷ এমন কাজ করি, পুলিশ এলেই দৌড়াতে হয়৷
সেনেগালের কাসামান্স অঞ্চল থেকে আসা অভিবাসী উসমানও আশ্রয় আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন৷ তিনি জানান, “এই অপেক্ষাটা খুব কঠিন৷ আমার আর কিছুই নেই৷’’
আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর উসমানকে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে হয়৷ কিছুদিন কাঠের কারখানায় কাজ করলেও পরবর্তীতে আবারও রাস্তায় ঘুমাতে বাধ্য হন৷
উসমান বলেন, “আমি তিন মাস রাস্তায় ছিলাম৷ শরীর-মন দুইটাই ভেঙে পড়েছিল৷ এক পর্যায়ে না পেরে কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হই৷’’
তিনি এখন রেড ক্রস পরিচালিত একটি কেন্দ্রে শিক্ষানবিস হিসাবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন৷ বলেন, “এখন আমার একটি দক্ষতা সার্টিফিকেট আছে৷ কিন্তু কাজ পাওয়া অসম্ভব৷ কারণ অনিয়মিতদের কেউ কাজে নিতে চায় না৷’’
উসমান যোগ করেন, “আমি প্রতিদিন শহরে ঘুরি, বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলি৷ অত্যন্ত কঠিন সময় পার করছি৷ মাঝে মাঝে মনে হয় এখানে আসাটাই ভুল ছিল৷’’
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সেনেগাল থেকে যাত্রা শুরু করে তেনেরিফে আসেন সেনেগালের নাগরিক বাবাকার৷ পরবর্তীতে তিনি বার্সেলোনা হয়ে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে পৌঁছান৷
বাবাকার ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, “মাদ্রিদে আমি তিন মাস রাস্তায় ছিলাম৷ দুই মাস প্লাসা এলিপটিকা এলাকায় এবং এক মাস লাভাপিয়েসে৷ এই সময়গুলো খুবই কঠিন সময় ছিল৷ তখন দেশে আমার বাবা মারা গেছেন৷’’
বাবাকার এখন একটি ক্যাথলিক সংগঠনের সহায়তায় একটি অ্যাপার্টমেন্টে অন্য অভিবাসীদের সঙ্গে থাকছেন৷ তিনি ইতিমধ্যে রংয়ের কাজ, বিদ্যুৎ এবং রান্না নিয়ে তিনটি প্রশিক্ষণ কোর্স শেষ করেছেন৷
তিনি বলেন,
আমি এখন প্রতি সোমবার, বুধবার ও শুক্রবার স্প্যানিশ শিখি৷ ক্লাসের সব কাগজপত্র সাজিয়ে রাখি৷ আমি তৈরি হচ্ছি যেন বৈধতার জন্য আবেদন করতে পারি৷ চলতি বছরের ২২ অক্টোবর স্পেনের আমার দুই বছর পূর্ণ হবে৷ যদি কেউ আমাকে কাজে নেয় সেক্ষেত্রে কাজের আওতায় অর্থাৎ আরাইগো দে ত্রাবাখো’র জন্য আবেদন করতে পারবো, করবো৷
অপরদিকে অভিবাসী উসমান এখন ‘আরাইগো দে সেগুন্দা অপরতুনিদাদ’ নামের আরেকটি প্রক্রিয়ার জন্য জন্য অপেক্ষা করছেন৷ এটি চলতি বছরের ২০ মে থেকে চালু হওয়ার কথা রয়েছে৷
উসমান বলেন, “আমার সামনে এটি ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই৷ আরাইগোই আমার বৈধতা পাওয়ার শেষ সুযোগ৷’’
স্পেনে অনিয়মিতদের বৈধতাকরণ নিয়ে অনেক মুখরোচক গল্প শোনা গেলেও প্রকৃতপক্ষে প্রশিক্ষণ কিংবা অন্য কোন ক্যাটাগরি শেষে কাজের চুক্তি পাওয়া কঠিন হয়৷ একটি বৈধ কাজ ছাড়া বৈধতার সুযোগ নেই৷
ইনফো মাইগ্রেন্টস