শিক্ষা, যোগাযোগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থায় উন্নত বিশ্বের মতো প্রযুক্তিনির্ভর করে তোলা, যাকে এক কথায় ডিজিটালাইজেশন বলা হয়ে থাকে। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তিনির্ভর ডকুমেন্টের গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি। একটা সময় আমাদের দেশের পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা অনেক দেশেই কম ছিল। সেই পাসপোর্ট যখন সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে রূপান্তর করা হলো তখন এর গ্রহণযোগ্যতাও অনেক গুণ বেড়েছে।
আর এজন্য সরকার ২০৪১ সালের মধ্যেই দেশকে রূপান্তরিত করতে চায় একটি উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকল্পনা এই শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত। কেননা উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তো এরই মধ্যে স্মার্ট দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। এমনকি অনেক উন্নয়নশীল দেশও স্মার্ট দেশে রূপান্তরের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তাই দেশের উন্নতি এবং অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে দেশকে অনেকটাই উন্নত বিশ্বের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে চারটি মূলভিত্তি নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এগুলো হচ্ছে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি, বর্তমান সরকার তাদের ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে চলেছে।
সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে যে চারটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে অগ্রসর হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন, তাতে স্পষ্টই বোঝা যায় যে দেশের এই চারটি খাতকে সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট খাত হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
আর এজন্য সরকার বিশ্বে সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নে অগ্রসর হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কোর্সসমূহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসহ উন্নত বিশ্বের কাছে সেরা ও সাশ্রয়ী হিসেবে স্বীকৃত। অথচ এই কোর্সগুলো উন্নত বিশ্বে বেশ ব্যয়বহুল।
এজন্য বাংলাদেশে স্বল্প খরচে মেডিকেল ও ডেন্টাল কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার পাশাপাশি উন্নত বিশ্বের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেডিকেল শিক্ষার উন্নত মান, তুলনামূলক কম কোর্স ফি এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রদেয় বৃত্তি এ কোর্সকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
বাংলাদেশে স্পেনের শিক্ষার্থীদের প্রণোদনার সহিত দীর্ঘমেয়াদি ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ রূপান্তরে সরকারের স্মার্ট এই সিদ্ধান্তে বেশ উচ্ছ্বাসিত স্পেনে বসবাসরত ৭০ হাজার বাংলাদেশি।
তাদের বিশ্বাস এই গোষণার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতা এবং সদিচ্ছার।
এ বিষয়ে স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ, স্পেন বাংলাদেশের চতুর্থ রপ্তানি গন্তব্য উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি ‘বাংলাদেশে সরকার-অনুমোদিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য স্পেনের শিক্ষার্থীদের আন্তরিকতার সহিত ভিসা দেওয়ার জন্য দূতাবাসে স্মার্ট সার্ভিস চালু এবং স্পেনে স্মার্ট বাংলাদশকে তুলে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হবে বলে জানান।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা কোনও ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামে স্পেনের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ কোর্সের পুরো সময়ের জন্য তাদের ভিসা দেবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দূতাবাসের দূতালয় প্রধান এ টি এম আবদুর রউফ মণ্ডল বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকারের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশে অধ্যয়নের জন্য স্পেনের শিক্ষার্থী ও ইন্টার্নদের ভিসা ব্যবস্থা স্মার্ট এবং দ্রুত করা। এছাড়া ভবিষ্যতে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে স্পেনের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে।
দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর রেদোয়ান আহমেদ, ব্যবসা-বাণিজসহ দুই দেশের মধ্যে উচ্চ-পর্যায়ের সফর বিনিময় ও সরকারি যোগাযোগের ইতিবাচক প্রতিফলন হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্ত দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদারে আরও সহায়ক হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।