সবুজ শ্যামলের দেশ বাংলাদেশ। এ দেশে রয়েছে কত কত সৌন্দর্যের প্রতীক পাহাড় পর্বত, ঝর্ণা আরও কত কিছুই।
বিদেশি পর্যটকদের মন কাড়ছে বাংলাদেশের এসব জায়গায়। শুধু পাহাড় পর্বতেই পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে না, করছে উপকূলীয় অঞ্চলেও। তাইতো সারা বছরই উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটায় দেখা যায় পর্যটকদের ভিড়।
সাগরের জলরাশি ছুঁয়ে এসে শরীরের প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেয় নির্মল বাতাস। বিকেল নামলে দর্শনার্থীদের সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে বাঁধের পারের চরাঞ্চল। সৌন্দর্যপিপাসুরা দিগন্তবিস্তৃত উদার প্রকৃতির দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকতে থাকতে বিমোহিত আবেশে প্রায় যেন হারিয়ে যায় আকাশের নীলিমায়।
বিষখালীর জলধারা বিলীন হয়েছে বঙ্গোপসাগরের মোহনায়। নদীর বাঁধের পারে দাঁড়ালে যতদূর চোখ যায়—গহিন জলরাশি ছুঁই ছুঁই সুনীল আভা ছড়ানো আকাশে শোভন মেঘের ধীর লয়ের মিছিল। নদীতীরের চরে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল। চরভূমিতে জোয়ারের জলে দোদুল্যমানতায় ভেসে থাকে দৃষ্টি সুখকর সবুজ প্রকৃতি।
বরগুনার উপকূলীয় পাথরঘাটা পৌর শহরের পূর্ব অংশের বিষখালী নদীতীরের শহর রক্ষা বাঁধ ও তার আশপাশের এলাকা এখন পর্যটন সম্ভাবনায় উজ্জ্বল হয়ে উঠছে দিন দিন। সুনীল আকাশ আর বিশাল জলরাশি এখানে মিলেমিশে একাকার যেন-আর তাই এ স্থানের নামকরণ করা হয়েছে ‘নীলিমা পয়েন্ট’।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বরগুনা জেলা প্রশাসন পর্যটন সম্ভাবনার দিকটি মাথায় রেখে নীলিমা পয়েন্ট নামের এই চিত্তকর্ষক পর্যটন স্পটটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরিকল্পনা নেয়। পাথরঘাটা পৌর শহরের দক্ষিণ ২ নম্বর ওয়ার্ডে বিষখালী নদীর পাড়ে অবস্থিত নীলিমা পয়েন্ট।
দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের মোহনা। সব সময় থাকে মৃদুমন্দ বাতাস। সব সময় কানে প্রশান্তির পরশ বোলায় নদীর বহমান পানির ছন্দ। নৌকায় জেলেদের আনাগোনায় গোধূলীতে নীল আকাশ মিতালি করে বিষখালীর পূর্ব তীরের সবুজ-শ্যামল গাছগাছালির সঙ্গে।
বাঁধে নির্মিত ব্লকে বসে সন্ধ্যায় দেখা যায় পূর্ব দিক থেকে চাঁদ ওঠার দৃশ্য। চাঁদের আলো পড়ে শান্ত নদীতে এক অপার্থিব নয়নাভিরাম দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
দুপুরের সূর্য ক্রমে পশ্চিমে হেলে পড়লে এখানে এক-দুজন করে শুরু হয় লোকসমাগম। মেঘের আভা যেন আছড়ে পড়ে। মনে হয় হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। নির্মল প্রকৃতির পরশে অবসর, বিনোদনে মশগুল লোকজন এখানে অবস্থান করে রাত অবধি। দৈনন্দিন কাজের চাপে কান্ত-পরিশ্রান্ত শহুরে মানুষগুলো কোলাহলমুক্ত এই পরিবেশে কংক্রিটের ব্লকের ওপরে বসে থেকেও খুঁজে প্রশান্তির পরশ। এখানে এসে তাদের হয়তো মনে পড়ে নিজ ঘরে দখিনের জানালা খুলে বসে থাকার কথা।
শহরের ঈমান আলী সড়কের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে শুরু করে বেড়িবাঁধটি যেখানে শেষ হয়েছে, তার নাম স্থানীয়ভাবে পুতাভাঙ্গা, কোথাও আবার মুতানিয়া বলে পরিচিত। এ ছাড়া সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে বাঁধটি বারবার ভেঙে যায় বলে অনেকের কাছে এলাকাটি ‘ভাঙন’ নামেও পরিচিত।
স্থানীয় প্রবীণরা বলেন, একসময় সুন্দরবনগামী বাওয়ালিরা বিষখালীর তীরে তাদের নৌকা নোঙর করত। জীবিকার তাগিদে বিপদসংকুল সুন্দরবন অভিযানে যাওয়া-আসার সময় বাওয়ালিরা এই এলাকাকে নিজেদের পছন্দমতো নামে নামকরণ করলেও কাগজপত্রে এসবের কোনো তথ্য নেই। লোকমুখে প্রচলিত সেই নামগুলোও অনেকের কাছেই তেমন শোভনীয় নয় বিধায় এখন এর নামকরণ করা হয়েছে নীলিমা পয়েন্ট।
নীলিমা পয়েন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ বলেন, শহরের দক্ষিণ অংশে সমৃদ্ধ বিষখালী নদী যা গিয়ে মিশেছে সাগর মোহনায়। এখানকার প্রকৃতি ও বহমান বাতাস মনে প্রশান্তি এনে দেয়। নদী তীরের সুউচ্চ ঢাল বেয়ে চরভূমিতে ছড়িয়ে আছে নানা বৃক্ষ। বাঁধ থেকে যত দূর চোখ যায় বিশাল জলরাশি আর সুনীল শোভন নীলাকাশ।
তিনি আরও বলেন, পাথরঘাটা পৌর শহরের জানালাখ্যাত নীলিমা পয়েন্টের নাম করণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম খোকন, মেহেদী শিকদার। নাম করণে আমাদের রোষানলেও পড়তে হয়েছিল। আজ প্রতিষ্ঠিত এবং স্বীকৃত। যথাযথ পরিকল্পনা নিয়ে উন্নয়ন ঘটাতে পারলে এখানে পর্যটন সম্ভাবনা রয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, পাথরঘাটা পর্যটন সম্ভাবনাময় উপজেলা। শহরের মানুষের সময় কাটানোর জন্য ভালো স্থান নীলিমা পয়েন্ট। এর আরও উন্নয়ন দরকার। নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির বলেন, নীলিমা পয়েন্টকে শহরের উৎকৃষ্ট আকর্ষণ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হবে।