যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অনেক নারী শ্রমিক। বছরে গড়ে তিন থেকে চার হাজার নারী ফিরতে বাধ্য হন। প্রবাসফেরত এসব নারীদের মুখে নির্যাতনের ভয়ঙ্কর বর্ণনা শুনে আতঙ্ক জাগে মনে।
নির্যাতিত যেসব নারী পালিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন, তাদের শরীরেও নির্যাতনের ছাপ স্পষ্ট রয়েছে। যদিও অনেকেই দেশে ফিরে তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খুলেন না।
সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে নিয়োগকর্তার নির্যাতনে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে দেশে ফিরেছেন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার রাবিয়া খাতুন (৩৮)। অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ রাবিয়া দেশে ফেরার পর পরিবারকে খুঁজে পাওয়া দুস্কর হয়ে দাঁড়ায়।
রাবিয়া খাতুনের পরিবার ও ব্র্যাক সূত্রে জানা যায়, পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে ২০২২ সালে রিক্রুটিং এজেন্সি দ্য ইফতি ওভারসিজ (আরএল-৮৯৪) মাধ্যমে সৌদি আরবে গৃহপরিচারিকার ভিসায় পাড়ি জমান রাবিয়া খাতুন। সেখানে যাওয়ার পর রাবিয়া খাতুনের জীবনে নেমে আসে দুর্বিষহ নির্যাতন। প্রতিনিয়ত নিয়োগকর্তার নির্যাতনে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন রাবিয়া। বন্ধ হয়ে যায় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ।
বুধবার (৩ এপ্রিল) রাতে সৌদি আরব থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশে ফেরেন রাবিয়া খাতুন। রাতে বিমানবন্দরের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছিলেন রাবিয়া।
বৃহস্পতিবার সকালে রাবিয়াকে ক্যানপিতে লক্ষ্যহীন চলাফেরা করতে দেখে এপিবিএন সদস্যরা তাদের অফিসে নিয়ে যান। তবে তার কাছে কারও মোবাইল নম্বর বা কোনো তথ্য না থাকায় পরিবার খুঁজে নিরাপদে হস্তান্তরের জন্য এপিবিএন সদস্যরা তাকে ঢাকার আশকোনার ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে পাঠান।
রাবিয়ার পরিবারের সন্ধান পেতে ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার মো. আল আমিন নয়ন গণমাধ্যমকর্মীদের সহায়তা চান। পরে হবিগঞ্জের স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী-জনপ্রতিনিধিদের ও সচেতন কিছু যুবকের প্রচেষ্টার ফলে রাবিয়া খাতুনের পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার মো. আল আমিন নয়নের সঙ্গে যোগাযোগ হয় রাবিয়া খাতুনের পরিবারের। মায়ের সন্ধান পেয়ে শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রাতেই রাবিয়া খাতুনের মেয়ে তাছলিমা আক্তার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। শনিবার (৬ এপ্রিল) সকালে ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের কর্মকর্তারা রাবিয়া খাতুনকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। শনিবার বিকেলে সৌদিফেরত রাবিয়া খাতুনকে (৩৮) নিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলার সদরাবাদ গ্রামে নিজ বাড়িতে ফেরে তার পরিবার।
তিনি জানান, রাবিয়া প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তার চিকিৎসা প্রয়োজন। কাজল উল্লাহ তার স্ত্রীর ওপর ঘটে যাওয়া অমানুষিক নির্যাতনের বিচার দাবী করে নারীদের প্রবাসে পাড়ি জমাতে সতর্ক হওয়ার অনুরোধ জানান।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার মো. আল আমিন নয়ন বলেন, রাবিয়া আমাদের বলেছেন তিনি সৌদিতে নিয়োগকর্তার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বর্তমানে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ। তাই তাকে একা বাড়ি পাঠাতে পারিনি। গণমাধ্যমকর্মীদের সহায়তায় তার পরিবারের সন্ধান পাই। পরে শনিবার রাবিয়ার পরিবারের কাছে তাকে হস্তান্তর করি।