বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৭:৪৬ অপরাহ্ন
Uncategorized

সে এক নতুন দেশ

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২২

সে এক নতুন দেশ। বহু বছর আগে গিয়েছিলাম বেড়াতে। দেশ বলতে স্পেনের অধীনে আটলান্টিক সাগরের মধ্যে কয়েকটি আইল্যান্ড, যা স্পেনে ক্যানেরি আইল্যান্ড বলে পরিচিত। আফ্রিকান কন্টিনেন্টের মধ্যে পড়া সত্ত্বেও আইল্যান্ডগুলো স্পেনের অধীনে।

অতীতে ব্রিটিশদের মতো ফ্রান্স এবং স্পেনও বিশ্বের অনেক দেশ দখল করে। গড়ে তোলে তাদের কলোনি। সেভাবে আইল্যান্ডগুলোর মালিক এখনো স্পেন। মূলত মোট সাতটি বড় আইল্যান্ডের সমন্বয়ে এই ক্যানেরি আইল্যান্ড গঠিত। অন্যান্য আইল্যান্ডের মধ্যে রয়েছে গ্রান ক্যানেরি, লানসারটে, লা পালমা, লা গোমেরা, ফিউরেতেভেন্টুরা ও এল হিয়েরো। এছাড়াও আরও ছোট ছোট ছয়টি আইল্যান্ড রয়েছে এখানে।

১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে গিয়েছিলাম বেড়াতে টেনেরিফ আইল্যান্ডে। ল্যান্ড করেছি অনেক রাত তখন। প্লেন থেকে নেমেই সরাসরি ট্যাক্সি নিয়ে সমুদ্রের তীরে হোটেলে। রাত বেশি। দ্রুত ঘুম চেপে বসে দুই চোখে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দ্বীপের সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ, বিমোহিত। আহ্ কী অপরূপ সৌন্দর্য!

আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে অবস্থিত স্পেনের দক্ষিণ টেনেরিফ। স্রষ্টার সৃষ্টি কতো বৈচিত্র্যময় তা সরাসরি না দেখলে বোঝা যাবেনা। সাগরের নীল পানি। তার কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে জনবসতি, নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি। টেনেরাইফের দক্ষিণে উপকূল রেখার বেশিরভাগ অংশ বালুকাময়। দ্বীপের সৈকতগুলো কে কতটা সুন্দর, তার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। সুন্দর মনোরম আবহাওয়া এবং সারাবছর রোদ জলের উষ্ণতা।  ছুটি কাটানোর এটি এক চমৎকার জায়গা। যারা জলকেলি খেলতে পছন্দ করে তারা তো একেবারে মেতে ওঠে।

টেনরিফের দক্ষিণে ল্যান্ডস্কেপগুলি পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ জোগায়। বেড়াতে যাওয়া, সমুদ্রের ধারে রেস্তোঁরায় খাওয়া, রাতে নানা ধরণের বিনোদন আরো কতো কী! সময় কাটানোর জন্য এর থেকে সুন্দর জায়গা আর কী হতে পারে!

দেখার মতো একটি শপিং মল লাস ভেগাস সাফারি। অন্যদিকে নৌকা ভ্রমণে দেখা যায় তিমি ও ডলফিনের খেলা। সবকিছু মিলে দ্বীপটির সৌন্দর্য অপূর্ব। সমুদ্র সৈকতটি রোদের জন্য উপযুক্ত একটি স্থান, রয়েছে কিছু ঐতিহ্যবাহী টেনেরিফ রেসিপির স্বাদ। বছরের যে কোনও সময় সাগরে সাঁতার কাটা যায় এখানে। পারিবারিক পরিবেশে ঘেরা টেনেরিফ দ্বীপ। অন্যান্য বিশাল জনপ্রিয় সৈকতের মধ্যে রয়েছে প্লেয়া দে লস ক্রিশ্চিয়ানোস এবং লস তারাজলেস। লস ক্রিশ্চিয়ানোস বন্দরটি সমুদ্র সৈকতের ঠিক পাশে অবস্থিত। প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে বিলিয়ে দিতে হলে টেনেরিফ দক্ষিণ দ্বীপের সৌন্দর্য একবার হলেও দেখা উচিত। অর্থ, প্রাচুর্য সবই তো মানবজাতির ভোগ- বিলাসের জন্য।

ভোগ-বিলাসের মধ্যেই পার হয়ে গেছে দুই দিন। তৃতীয় দিন শহরে আড্ডা দিতে দিতে বেশ রাত হয়েছে, হোটেলে ফিরতে হবে। ট্যাক্সি মিলেছ না, কী করি! হঠাৎ আকাশে মেঘ। সেখানকার লোকজন বলাবলি করছে, তারা এমনটি কখনও কেউ দেখেনি। দ্বীপটির পাহাড়ের উপর তুষারের দেখা মেলে এ সময়, যদিও ঠাণ্ডা টের পাওয়া যায়না এখানে। আমার হোটেল শহর থেকে বেশ দূরে, হবে দুই থেকে তিন কিলোমিটার। ভাবলাম সাগরের পাড় দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হোটেলে চলে যাব। হাঁটা শুরু করেছি, হঠাৎ প্রচণ্ড ঝড়। রাস্তার বাতিও নিভে গেল। বৃষ্টি পড়া শুরু হলো। কোথাও কেউ নাই, গাঢ় অন্ধকার। মুহূর্তেই এক ভীতিকর অবস্থা। গা খানিকটা ছমছম করছে। দ্রুতগতিতে একটি কুকুর আমাকে অতিক্রম করে পাশ দিয়ে চলে গেল। দিনে রাস্তায় কুকুর দেখিনি কিন্তু অন্ধকারে কুকুর পাশ দিয়ে চলে গেল।

কিছুক্ষণ পরই চোখে পড়ল সাদা কাপড়ে কেউ হেলেদুলে চলছে, মাত্র ১৫-২০ মিটার দূরে। যাক একজনকে পাওয়া গেল এই দুঃসময়ে। ভয়ের জায়গায় সাহস সঞ্চার হলো। বেশ জোরে হাঁটতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু এ কী, দূরত্ব বেড়েই চলেছে! এদিকে দেখি লোকটি রাস্তা ছেড়ে সাগরের দিকে রওয়ানা দিল। তাহলে কি লোকটি মানুষ নয়? মানুষ না হলে কী? সাহস যেটুকু পেয়েছিলাম সেটুকু উধাও। চল্লিশ বছর আগে শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত উপন্যাসে পড়েছিলাম। গভীর রাতে শ্রীকান্ত শ্মশানের পাশ দিয়ে যাবার সময় যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিল আমি কি তাহলে সেই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি?

আমাকে জানতে হবে ওটা কি মানুষ না অন্য কিছু? চিৎকার করে ভয়ার্ত কণ্ঠে বললাম, হ্যালো ক্যান ইউ প্লিজ ওয়েট ফর মি? উত্তর নেই। আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত ছমছম করছে। আরো চিৎকার করে একই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম। এবার উত্তর পেলাম এবং সেইসাথে স্বস্তি। উত্তরে বললো, ওকে। গলার স্বরে মনে হলো সে মানুষ এবং মেয়ে মানুষ।

এদিকে বৃষ্টি থেমেছে, ঘোলা আকাশ খোলা হতে শুরু করেছে। মেয়েটি কাছে এগিয়ে এলো। ওমা এ কী? মেয়েটির গায়ে কোনো কাপড় নেই, সম্পূর্ণ বিবস্ত্র, উলঙ্গ! ঝড় কমেছে। বৃষ্টি থেমেছে। বাতাস বইছে। তবে বাতাস খুব ঠাণ্ডা নয়, বরং চমৎকার, তাই শরীরে কাপড় না থাকায় কোনো সমস্যা নেই। তবে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র একটি মেয়ে, অপরূপা সুন্দরী, এই জোছনা রাতে টগবগে এক যুবকের সামনে দাঁড়িয়ে। আমি অসাড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। তাহলে কি মেয়েটি মানুষরূপী অন্য কিছু?

আমি সুইডেনে থাকি। উলঙ্গ মেয়ে সামারে দেখেছি অনেক। তারপর সাগরের পাড়ে একটি উলঙ্গ মেয়ে দেখা নতুন কিছু না। তবুও অবাক! প্রথম দেখলাম একটি কুকুর, পরে সাদা কাপড়ে কাউকে, এখন আবার হঠাৎ বিবস্ত্র নারী! বললাম, সরি তোমাকে বিরক্ত করার জন্য। আমার হোটেল আরেকটু সামনের দিকে। হঠাৎ লাইট চলে যাওয়ায় একটু ভয় করছে। এত রাতে একা একা তাই…. কথা শেষ না করতেই মেয়েটি বেশ সুন্দর ইংরেজিতে উত্তর দিতে শুরু করলো। বললো, ঠিক আছে সমস্যা নেই। ভোর রাতে সাগরে গোসল করেছ? আমতা আমতা করে বললাম, না, মানে…..কেন বল তো? সে বললো, চলো গোসল করি, পরে তোমাকে হোটেলে পৌঁছে দিব। নিজেকে সবসময়ই বেশ সাহসী মনে করি। কিন্তু এখন তা মনে হচ্ছে না। মনে মনে আল্লাহকে ডাকছি।

আমি ভীত নই, এমন মুড নিয়ে স্মার্টলি বললাম, তুমি কিভাবে আমার হোটেল চিনবে? বললো, আমিও সেই একই হোটেলে থাকি। উত্তরে বললাম, তা আমি যে সেই হোটেলে থাকি, কী করে জানলে? বললো, এখন জানলাম। বললাম, কিভাবে? উত্তরে বললো, তোমাকে দেখে এখন চিনতে পেরেছি। আমি তোমাকে প্রতিদিন সকালে হোটেলে ব্রেকফাস্টে দেখি। হোটেলে ব্রাউন রঙয়ের তুমি ছাড়া আর কেউ নেই। তাই চিনতে সমস্যা হয়নি।

যাক বাবা! মনে মনে বললাম, কখনো ভয় আমি পাইনি, ভয় পাওয়ার লোকও আমি নই। মানুষ সম্ভবত এমনই। বিপদে সৃষ্টিকর্তার শরণাপন্ন হয়। বিপদ কেটে গেলে আবার যা তাই।

পুরো স্বাভাবিক হয়ে গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, তা তোমার কাপড় কই? কিছুক্ষণ আগে সাদা কাপড়ে তোমাকে না হেঁটে যেতে দেখলাম? উত্তরে বললো, হাঁটতে পথে কাপড় খুলে ফেলেছি। এক হাতে ধরে থাকা কাপড় দেখিয়ে বললো, ভাবলাম হোটেলে যাবার আগে একটু গোসল করে যাই। তা তুমি কি আমার সঙ্গে গোসল করবে? বললাম এই রাতে? সে বললো, রাত কোথায়, এখন ভোর ৪টা বাজে একটু পরে সূর্য উঠবে, চলো গোসল করবে।

পুব আকাশ ফর্সা হয়ে উঠছে। তার প্রতি সব আশঙ্কা কাটতে শুরু করেছে, এবার পুরোপুরি কেটে গেছে। হঠাৎ চেনা এই সুন্দরী ইউরোপিয়ান মেয়ের সাথে নগ্ন শরীরে গোসল করলে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা যুবকটির স্মৃতির ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে, এটি একটি সুযোগ, হাতছাড়া করা উচিত হবে না। বললাম, চলো যাই। কি আছে জীবনে, যেই ভাবনা সেই কাজ। তার মতো শতভাগ নগ্ন না হলেও প্রস্তুত হয়ে গেলাম। মনে হলো তার পছন্দ হলো না এটা। আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র হওয়ার আমন্ত্রণ জানালো। আমি ইশারায় সঙ্কোচবোধ করলাম। সে আর জোরাজুরি করলো না। পরস্পরের প্রতি রেস্পেক্টের অভাব নেই। এখানেও তার প্রতিফলন ঘটতে দেখলাম।

পানির দিকে হেঁটে চলেছি। যেতে যেতে পথে বাকি পরিচয়ও শেষ হলো। মেয়েটির নাম হেলেনা, দেশের বাড়ি সুইজারল্যান্ড, সমবয়সী হবে। সেও এসেছে ছুটিতে বেড়াতে। সোনালি রঙয়ের চুল, নীল রঙয়ের চোখ, তারপর সূর্যের রশ্মি গায়ে এমনভাবে লেগেছে, সানবাথের কারণে, দেখে মনে হচ্ছে কাঁচা সোনার রঙে তৈরি বিধাতার আপন হাতে গড়া এক অপরূপা রমণী। পানিতে নেমে ছিলাম একসাথে, গোসল শেষে উঠলাম একসাথে, হোটেলের দিকে হাঁটতেও শুরু করলাম একসাথে। অন্তত আধা ঘণ্টা হাঁটার পর হোটেলে পৌঁছলামও একসাথে। তারপর যার যার রুমে। ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিতেই ঘুম।

ঘুম থেকে যখন উঠেছি, তখন দুপুর গড়িয়ে বিকাল। তাড়াহুড়ো করে কাপড় পরে লবিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, হেলেনা কি তার রুমে আছে? রিসিপশনিস্ট চেক করে বললো, না, তবে একটি নোট রেখেছে তোমার জন্য। “ডিনার করবা রাতে এক সঙ্গে? আমি ঠিক ৮টার সময় লবিতেই থাকব।” ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সন্ধ্যা ৭টা বাজে।

এসেছি ছুটিতে, হেলেনা একা আমিও একা। গতকাল পরিচয় হয়েছে আকস্মিকভাবে, রাজি হয়ে গেলাম। রুমে গিয়ে নিজেকে গুছিয়ে ঠিক ৮টার সময় এসে দেখি, হেলেনা বসে আছে পথ চেয়ে আমার অপেক্ষায়। হঠাৎ দেখে চমকে নির্বাক হয়ে গেছি থমকে, মনে হলো সে যেন অনেক দিনের চেনা।

হোটেলের লবি থেকে বের হতেই হেলেনা আমার হাত ধরে দিব্যি হাঁটতে শুরু করল। আমার পুরো শরীরটা কেমন অবশ মনে হলো। একদিকে জড়তা অন্যদিকে আবেগ। হৃদয়ে দোলা লেগেছে। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই দুজনে আটলান্টিক সাগরের পাড় দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম টেনরিফ শহরে।

হেলেনা বললো, ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে চলো, তোমার সঙ্গে ইন্ডিয়ান খাবার খেতে চাই। রেস্টুরেন্টে ঢুকেই বুঝতে পারলাম বাংলাদেশি, তবে ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট হিসেবেই পরিচিত। এ শুধু এখানে নয়, সারা ইউরোপে একই অবস্থা। আমার লাল-সবুজের বাংলাদেশিরা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট হিসেবেই পরিচিত। বাংলাদেশে যেমন ছোট গ্রামের লোকেরা দূরে কোথাও গিয়ে যেমন পার্শ্ববর্তী বড় গ্রামের পরিচয়ে নিজেকে তুলে ধরে, ইউরোপ- আমেরিকায় বাংলাদেশীরাও বাধ্য হয়ে নিজেদেরকে ইন্ডিয়ান বলে পরিচয় দেয়। যাই হোক, ওয়েটার টেবিলে এসে জিজ্ঞেস করল কি খেতে চান- উত্তরে বললাম বাংলাদেশি কিছু তৈরি করতে পারবেন। বাংলা কথা শুনে ভদ্রলোক বললেন আপনি বাঙালি? বললাম হ্যাঁ। তিনি বললেন, ঠিক আছে ভাই আমিই রেস্টুরেন্টের মালিক। ডিনারের ব্যবস্থা করছি; তবে মেডাম কি ঝাল খেতে পারবেন? হেলেনাকে জিজ্ঞেস করলাম কেমন ঝাল হবে জিজ্ঞেস করছে। হেলেনা বলল- তুমি যেভাবে পছন্দ কর সেভাবে দিতে বল। হোটেল মালিক বাংলাদেশি। ইতোমধ্যে তার পরিচয় পেয়েছি। নাম চেঞ্জ করে তিনি নিজের নাম ডেভিড রেখেছেন। ডেভিড ভাই কিছুক্ষণ পরে দেখি বেগুন ভাজি, মুরগির ঝোল এবং ডালের ব্যবস্থা করেছেন। চমৎকার, আমি নিজেও বহুদিন এমনটি বাংলা খাবার খাইনি, তো মনে মনে ভীষণ খুশি হলাম।

হেলেনা কাটা চামচ রেখে দিব্যি হাত দিয়ে খাবার খেতে শুরু করেছে। আমি তো অবাক! কিছুই তো বুঝে উঠতে পারছি না! গতকাল থেকেই সন্দেহ ঢুকেছে মাথায়, কার সঙ্গে ঘুরাঘুরি করছি? সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম, বাংলা খাবার হাত দিয়ে এর আগে কি খেয়েছ? উত্তরে বললো না, তবে টিভিতে তোমাদের দেশে খেতে দেখিছি। অনেক দিনের শখ হাত দিয়ে খাওয়ার কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি এর আগে কখনো হয়নি। আজ যখন সুযোগ হয়েছে তোমার সঙ্গে বাংলা খাবার খাওয়ার, তাই হাত দিয়ে না খেলে এ সুযোগ জীবনে হয়তো আর নাও আসতে পারে।

হেলেনার সব কিছু যে আমার ভালো লেগেছে তা নয়। তারপরও এ স্বল্প সময়ের মধ্যে আমাকে ঘিরে যা যা ধারাবাহিকভাবে ঘটে চলেছে তাতে ভালো না লেগে কি উপায় আছে? ডিনার শেষে বাংলা চা পান করে রেস্টুরেন্ট থেকে বিদায় নেবো। এমন সময় ডেভিড ভাই হেলেনাকে ছোট্ট একটি বাংলা গিফট দিয়ে বললেন- “আমরা আপনার বাঙালি স্টাইলে খাবার খেতে দেখে মুগ্ধ হয়েছি। আপনি বাংলাদেশে গেলে মানিয়ে নিতে পারবেন নিশ্চিত।”

ডেভিড ভাই ধরে নিয়েছেন হেলেনা আমার একান্ত আপনজন। বিদায় পর্ব শেষ করে গেলাম ডিস্ক থেকে। বয়স আমার বেশি না তখন, আলোর চেয়ে বেশি গতিতে হেলেনার সাথে আমার সময় ছুটতে শুরু করেছে। গতকাল অন্ধকারে একাকী হাঁটার সময়টুকু ছিল এক যুগ, আজ সন্ধ্যার সময়টুকু সেকেন্ডের মধ্যে শেষ হতে চলেছে। ছোটবেলায় গরমে এক মিনিট আগুনের সামনে যখন বসতাম মনে হতো এক ঘণ্টা ধরে বসে আছি, আর আজ হেলেনার সাথে  ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করার পরও মনে হচ্ছে মাত্র কিছুক্ষণ হলো তার সাথে আছি। কারও সাথে সময় কাটাতে বিরক্ত লাগে আবার কারও সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে- এটাই সত্য।

যাই হোক- হলো কিছুক্ষণ বিনোদন, হলো নাচ গান। হঠাৎ ১৯৯০ সালের নির্মিত ভীষণ সাবলীল সুন্দর এক প্রেমের ছবি “প্রিটি ওম্যান” ছবির গান বাজতে লাগলো। প্রিটি ওম্যান ছবিটির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিচার্ড গিয়ার এবং জুলিয়া রবার্ট। গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুজনে দুজনাকে জড়িয়ে ধরে নাচার সময় কানের পাশে হেলেনা গুণ গুণ করে গেতে লাগল—-It must have been love, But it’s over now, It was all that I wanted, Now, I’m living without..

রাতের আড্ডা শেষে জোসনা রাতে আমরা হাঁটতে হাঁটতে হোটেলে ফিরে এলাম। রাত তখন শেষের পথে। ঘুম নেই চোখে। হোটেলের লবিতে বসে আছি দুজনে। গল্পের শেষ নেই। হেলেনা নানা বিষয়ের ওপর কথা বলতে বলতে এক সময় বললো যে তার বাবা-মা সুইডিশ। আমি নতুন করে অবাক হলাম! জিজ্ঞেস করলাম তাহলে তো তুমিও সুইডিশ? উত্তরে বললো হ্যাঁ, তবে আমি সুইজারল্যান্ডের জুরিখে বসবাস করছি কয়েক বছর ধরে। আমার ভিতর কৌতূহল একটু বেশি বেড়ে গেল। জিজ্ঞেস করলাম- জুরিখে বসবাস করার কারণ কী? এতক্ষণে আমি রীতিমতো ইংরেজি ছেড়ে সুইডিশে কথা বলতে শুরু করলাম। হেলেনা সুইডিশ কলেজ শেষ করে জুরিখে মূলত চাকরির কারণে বসবাস করছে। গল্প বেশ জমে উঠেছে। হঠাৎ হেলেনা বললো যে, চল দুটো টাওয়াল নিয়ে সাগর পাড়ের বালুতে যাই, সেখানে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে যাব, পরে রৌদ্র যখন চড়া হবে দেখবে ঘুম ভেঙে যাবে।

মনে মনে ভাবছি, মেয়েটির মাথায় হঠাৎ হঠাৎ এসব উদ্ভট আইডিয়া কোত্থেকে এসে হাজির হয়? গত দিন ভোররাতে সাগরে গোসল, আজ আবার হোটেল ছেড়ে সাগর পাড়ে বালুতে ঘুমানো, আগামীকাল আবার কী বায়না করে বসে তাইবা কে জানে! এদিকে আমি নিজেও একা, তারপর এসেছি ছুটিতে। কী আছে জীবনে, সারাজীবন তো খাটেই ঘুমিয়েছি, এবার আটলান্টিক সাগরেরপাড়ে সুন্দরী রমণীর সঙ্গে এক সকাল কাটানোর অনুরোধ, বললাম চল যাই।

বলতেই ভীষণ খুশির সাথে লবি থেকে দুটো টাওয়াল নিয়ে আমার হাত নয় এবার কোমর ধরে হাঁটতে শুরু করল। হেলেনার সাথে সময় পার করা এবং ঘুরাঘুরি করা, সব মিলে মনে হচ্ছে যেন সে অনেক দিনের চেনা। হৃদয়ে-হৃদয়ে চেনা। এ চেনা অনুভবের, এ অনুভব কেবলই অনুভব করা যায়, ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। দুটি প্রায় অচেনা অজানা মানুষের হৃদয়ের বন্ধনের অনুভব।

তখনো অন্ধকার কাটেনি, পুবের আকাশ ফর্সা হতে শুরু করেছে। সাগরের পাড়ে টাওয়াল বিছিয়ে শুয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কখন ঘুমিয়ে গেছি জানি না। হঠাৎ গায়ের উপর গরম বালু পড়ছে, ঘুম ভেঙে গেল। চেয়ে দেখি হেলেনা বালু দিয়ে আমার পুরো শরীর ঢেকে ফেলেছে। কী ব্যাপার কখন জেগেছ? বললো বেশ কিছুক্ষণ। এতক্ষণে তোমার ঘুম দেখছি আর দেখছি তোমাকে। ভোরের নরম আলোয় তোমার শরীরটা দেখছি। প্রাণ ভরে দেখছি। নীরবে ঘুমিয়ে থাকা মানুষটাকে দেখার পর এবার বিরক্ত করে দেখতে চাই। বললাম তা এখন আমাকে কীভাবে বিরক্ত করে দেখতে চাও? উত্তরে বললো অনেকভাবে বিরক্ত করতে চাই, যেমন খুশি তেমন করে বিরক্ত করতে চাই, বিরক্ত করতে করতে অস্থির করে তুলতে চাই। কিন্তু সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিরক্ত করার আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণই থেকে যাক। চলো হোটেলে ফিরে যাই।

দুজনে সাগর ছেড়ে হোটেলে ফিরে এলাম। লাঞ্চ সেরে নিলাম। তখন দুপুর একটা। আমাদের ভ্রমণের সময় শেষ, আজ রাতেই ফিরতে হবে যার যার দেশে। রুমে গিয়ে সব কিছু গুছিয়ে সন্ধ্যায় রওনা দিলাম এয়ারপোর্টের উদ্দেশে। বিদায় বেলা শুধু বলেছিল চিঠি দিও মোরে।
সুইডেনে ফিরে আসার পর মনে হলো “life is never be the same life is changing”. ক্যানেরি আইল্যান্ডের স্মৃতিগুলো মনের মাঝে সকাল, বিকেল এবং সন্ধ্যায় বেশ নাড়া দিয়ে চলছে। কাজ শেষে বাসায় এসে স্মৃতিচারণ করি প্রতিদিনের ঘটনাগুলো। আমি কী কারো প্রেমে পড়েছি তাহলে? কয়েকদিন এভাবে কাটতে থাকে। আজ সকাল সকাল ঘুমোতে হবে। কাল জব ইন্টারভিউ নিতে হবে কয়েক জনের। আমার ডিপার্টমেন্টে দুজন কেমিস্ট নিয়োগ দিব।

সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজে এসেছি। যারা ইন্টারভিউ দিতে আসবে তাদের সিভি দেখছি। কফি রুমে গিয়ে সবাইকে হাই হ্যালো বলে বসে গেলাম ভাইভা বোর্ডে। ভাইভা শেষে যাকে মনোনীত করলাম নাম মারিয়া। মারিয়া চাকরি পেয়েও নিজ থেকে না করল আমার ডিপার্টমেন্টে কাজ করতে। একটু অবাক হলাম তারপরও বুঝতে পারলাম কেন সে না করেছে। মারিয়া ফার্মাসিয়ার অ্যানালিটিক্যাল ডিপার্টমেন্টে কাজ নিয়েছে। আমি অন্য দুইজনকে আমার ডিপার্টমেন্টে কাজ দিয়েছি।

সময় চলছে তার গতিতে, এর মাঝে প্রায় দুই মাস পার হয়ে গেছে আমার সঙ্গে হেলেনার শেষ দেখা। এদিকে আমার কোম্পানিতে বড় পার্টি। বড় জাহাজ ভাড়া করেছি স্টকহোম ট্যু হেলসিংকি। আমাদের স্টকহোমের ইমপ্লাইমেন্টের সংখ্যা নয়শ। পুরো জাহাজে শুধু ফার্মাসিয়ার ইমপ্লাই।

রাতের ডিনার শেষে বিনোদনের পালা। নাচগান চলছে। এ সময় বস বা কর্মীদের মধ্যে তেমন জড়তা থাকে না। সবাই বেশ মন খুলে মেলামেশা করার একটি ভালো সুযোগ পায়, যাকে আমরা বলে থাকি ‘টিম বিল্ডিং’। হঠাৎ মারিয়া এসে পরিচয় দিল, আমি তাকে চিনতে পেরেছি কি? বললাম হ্যাঁ চিনেছি, তুমি আমার ডিপার্টমেন্টে কাজ পেয়েও না করেছিলে। মারিয়াকে বেস রিলাক্স মনে হলো, দিব্যি এ কথা সে কথা বলতে বলতে হঠাৎ বললো চলো একটু ডান্স করি। বেশ কিছুক্ষণ একসঙ্গে নাচগান করতে করতে সময় পার করার পর বেশ জড়িয়ে একটু হ্যাগ দিল। বুঝতে সমস্যা হয়নি যে এ হ্যাগ সাধারণ হ্যাগ নয়, এর মধ্যে ‘কিন্তু’ আছে। আমি তার ম্যাসেজ বুঝতে পেরেছি। হঠাৎ গুড নাইট বলে সে তার রুমে চলে গল, আমি তাকিয়ে রইলাম, আমার বলার কিছু ছিল না। আমিও কিছুক্ষণ পরে ঘুমাতে গেলাম, সকালে উঠতে হবে। হেলসিংকিতে ল্যান্ড করলাম পর দিন সকালে। সবাই বেশ মনের আনন্দে ঘুরছে, মজা করছে।

সারাদিন ঘুরাঘুরির পর ফিরে এলাম জাহাজে। রাতের ডিনার জাহাজে, ডিনার শেষে আবার পার্টি। মারিয়ার সঙ্গে বেশি সময় দিয়েছি, বেশ কাছের মানুষ বলে মনে হয়েছে। তারপরও কেন যেন ভাবনায় হেলেনার কথা আসছে, এটাই জীবন। কথায় বলে ‘show must go on.’ খুব দ্রুততার সাথে আমার সঙ্গে মারিয়ার একটি ইন্টিমেট সম্পর্ক হতে চলেছে।

একদিন সন্ধ্যায় সিনেমা দেখার পর সুইডিশ ফিকায় (কফিশপে আড্ডা) মারিয়া তার পরিবার সম্পর্কে বলতে হঠাৎ বললো যে তার এক বোনের মেয়ে থাকে সুইজারল্যান্ডে, নাম হেলেনা। হেলেনা মারিয়ার দুই বছরের ছোট, সম্পর্কে ভাগ্নি হলেও তাদের মধ্যে সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতো। আমি হঠাৎ থমকে গেলাম, কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে ভরাট গলায় বলে উঠলাম, ‘হেলেনা’? সুইজারল্যান্ডের কোন শহরে? তোমার কাছে কি তার কোনো ছবি আছে? মারিয়া আমার কিউরিসিটি দেখে কোনোরকম সন্দেহ করেনি বরং বেশ আগ্রহের সঙ্গে ওয়ালেট থেকে একটি ছবি বের করে দেখাল। ছবি দেখার পর মারিয়া আমাকে প্রশ্ন করল কী ব্যাপার তুমি হঠাৎ এমন আনমনা হয়ে গেলে কেন? কোনো সমস্যা? আমি কোনোরকম জড়তা ছাড়া মারিয়াকে ক্যানেরিয়ার পুরো ঘটনা তুলে ধরলাম। মারিয়া শুধু জিজ্ঞেস করল- আমাদের মধ্যে ইন্টিমেট কিছু ঘটেছে কি? বললাম, না, দৈহিক কিছু ঘটেনি, তবে অনুভবে হৃদয়ের মাঝে তাকে নিয়ে ভেবেছি। মারিয়া বললো তার কী অবস্থা? উত্তরে বললাম- সেটা দেখা বা জানার সুযোগ হয়নি। হেলেনার বিষয়ে আর কোনো কথা হয়নি সেদিন।

আমার সঙ্গে বেশ কিছুদিন হলো হেলেনার কোনো যোগাযোগ নেই- মারিয়ার সঙ্গে পরিচয় হবার পর। হেলেনাও আর ফোন করে না। মনে মনে ভাবলাম তাহলে মারিয়া কী হেলেনাকে আমার কথা বলেছে! যাই হোক, আমি কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। জিজ্ঞেস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করিনি।

দিন চলে যাচ্ছে। ডিসেম্বর মাস, খ্রিস্ট মাসের ছুটি। হঠাৎ মারিয়া বললো চলো সুইজারল্যান্ড ঘুরে আসি। হেলেনার সঙ্গে কয়েক দিন ঘুরব। আমার বুকের ভিতর একটু ধড়পড় শুরু হলো। কিছু না হলেও মনে মনে তো সে আমার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। কীভাবে এমন একটি ঘটনাকে ফেস করব! মারিয়া কী তাহলে সত্যের সন্ধানে আমাকে হেলেনার মুখামুখি করতে চায়, নাকি সত্যি বেড়ানোর জন্যই সেখানে যেতে চায়! সবকিছুর পর সান্ত্বনা একটাই- ছুটিতে এক সঙ্গে ঘুরেছি, মজা করেছি, প্রেমপ্রীতি মনে মনে হলেও তার বহিঃপ্রকাশ কেউ করিনি। সব ভেবেচিন্তে শেষে রাজি হয়ে গেলাম সুইজারল্যান্ডের জুরিখে যাওয়ার জন্য।

এদিকে তিন-চার মাস হয়েছে হেলেনার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। জানিনে কেমন আছে সে! আমি এবং মারিয়া স্টকহোম আরল্যান্ডা এয়ারপোর্ট থেকে রওনা দিলাম, ডাইরেক্ট ফ্লাইট ট্যু জুরিখ। হেলেনা এয়ারপোর্টে আসবে আমাদের রিসিভ করতে। বুক ধড়পড় করছে, মাঝে-মধ্যে উথাল-পাথাল, জানি না কী অবস্থা হবে! শেয়ার করতেও পারছি না মারিয়ার সঙ্গে। স্কুলজীবনে বাংলা ব্যাকরণে এক কথায় প্রকাশ পড়েছি, কী করিতে হইবে তাহা বুঝিতে না পারা-কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এই জটিল শব্দটার বাস্তব অর্থ পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করলাম।

মারিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি কি বলেছ যে আমিও তোমার সাথে আসছি? মারিয়া উত্তরে বলল, না- তাকে সারপ্রাইজ দিব। হঠাৎ মনে হচ্ছে পৃথিবীটা সত্যি কত ছোট? পৃথিবীটা সত্যিই সূর্যের চারদিকে ঘুরছে, সাথে ঘুরছে আমার মাথা। যাই হোক ল্যান্ড করলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি দাঁড়িয়ে আছে শান্ত হয়ে আমার মনের বুলবুলি। একদিকে অনেক বছর পর মারিয়ার সঙ্গে তার দেখা, তারপর আমি। বেচারা কী করবে, কী বলবে, কীভাবে বিষয়টি নেবে বুঝতে পারছে না। রীতিমতো সে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মারিয়া হেলেনার এমন একটি মুহূর্তকে সহজ করে দিল অল্প সময়ে। বললো রহমান আমাকে বলেছে তোমার সঙ্গে তার ক্যানেরিয়ায় দেখা হয়েছে। হেলেনা সঙ্গে সঙ্গে বললো তা আমার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক তা কীভাবে রহমান জানল? মারিয়া পরে সব ঘটনা বলল হেলেনাকে। কেন যেন মনে হয়েছিল হেলেনা আমাকে মারিয়ার মাঝে খুঁজে পেয়েছে এটাই ছিল তার মধ্যে এক আনন্দঘন সময়। দেশে থাকতে সিনেমা হলে ত্রিভুজ প্রেমের বাংলা ছবি দেখেছি। আর বিদেশে এসে নিজেই হয়ে গেলাম সেই ত্রিভুজ প্রেমের বাংলা ছবির বাস্তব নায়ক।

আমি মারিয়ার সঙ্গে সংসার করে চলছি সেই থেকে। আমাদের পরিচয়, পরিণয় সে আরেক বিশাল ঘটনা; যা আমার একটি লেখা “প্রেম করেছি বহুবার বিয়ে করেছি একবার” পড়লে জানা যাবে। জীবনে কাউকে মনে মনে ভালোবাসার পরও না পাওয়ার মাঝে যে আনন্দ থাকতে পারে তা বুঝতে পেরেছিলাম সেদিন। সে এক নতুন দেশে, অনেক বছর আগের কথা। হেলেনা সেই আগের মতোই আছে। ফেসবুকে মাঝে মধ্যে কথা হয়। হেলেনা বাংলা জানে না, তবে তাকে বলেছি “আমি তোমাকে নিয়ে লিখছি এত বছর পর। তোমার সেই পুরনো ছবিটি লেখায় ব্যবহারও করেছি।”

সে সব জেনেও সম্মতি দিয়েছে। জীবনে এমন অনেক ভালোবাসা রয়েছে যা মুকুলেই ঝরে যায়, তারপরও কেন যেন মনে হয় ভালোবাসার মধ্যে রয়েছে শুধুই ভালোবাসা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com