সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে এতো বেশি সুযোগ সুবিধা আছে যে, যাত্রী হিসেবে ভ্রমণের সময় আপনি টিকিটের মূল্যের পুরোটাই উশুল করে নিতে পারবেন। বিশ্বের স্বনামধন্য সেফদের হাতের রান্না থেকে শুরু করে বিনোদনের নানা সুবিধা রয়েছেসিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে।
প্রশিক্ষিত কেবিন-ক্রু
সাধারণ কেবিন-ক্রু থেকে একজন যাত্রীর প্রত্যাশা মিষ্টি হাসি আর গ্লাসে একটু পানীয় ঢেলে দেয়া পর্যন্তই। তবে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে প্রথমবার উঠলে আপনি কিছুটা অবাকই হবেন কেবিন-ক্রুদের আতিথেয়তায়।
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের কেবিন-ক্রু হিসেবে নিয়োগের আগে ৪ মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ পেরিয়ে আসতে হয়। বিশ্বে দীর্ঘতম কেবিন-ক্রু প্রশিক্ষণ গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এদের বাচনভঙ্গি, চলন, আতিথেয়তা দেখে যে কেউ নিজেকে পাঁচ তারকা হোটেলের অতিথি মনে করতে শুরু করবে।
ধারণ ক্ষমতার থেকে কম আসন বিন্যাস
B777 ও A350 এর মত একটি বিমানে পৃথিবীর সকল এয়ারলাইন্স যেখানে প্রতি সারিতে ১০টি করে আসন ব্যবস্থা রেখেছে সেখানে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে রাখা হয়েছে ৯টি। যাত্রীদের চলাফেরার স্বাচ্ছন্দ্য, বিশেষ করে লম্বা মানুষদের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত আয়ের কথা না ভেবে যাত্রীদের সুবিধার দিকটায় বেশি মনোযোগ দেয়া হয়েছে আসন বিন্যাসে।
জিন জ্যাকুইস কোস্টা ও পল্টনা ফ্রাউ
খুব বেশি ধনী মানুষ না হলে এদের নাম আপনার শোনার কথা না। কোস্টা হচ্ছেন ব্যয়বহুল ইয়ট নৌকার ডিজাইনার। কোস্টাকে দিয়েই করানো হয়েছে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ইন্টেরিয়র ডিজাইন। অন্যদিকে পল্টনা ফ্রাউ হচ্ছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আসবাবপত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান থেকেই বানানো হয়েছে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে স্থাপিত চেয়ারগুলো। প্রতিটি চেয়ারের পেছনেই লাগানো রয়েছে ২৩ ইঞ্চি আকৃতির বিশাল স্ক্রিন।
খাবার
এয়ারলাইন্স গুলোতে সাধারণত মামুলি একটা ব্রেড, রোল আর সস্তা প্যাকেটের কমলার জুস পরিবেশন করা হয়। নিম্নমানের প্যাকেজিং হওয়ায় এই কমলার জুস অনেক সময় প্যাকেট ছিঁড়ে যাত্রীর গায়ের উপর পড়লে খুব অবাক হবার কিছু নেই। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে এমন হবার সম্ভাবনা নেই।একটা কথা প্রচলিত আছে – বিমানে ৩০,০০০ ফুট উচ্চতায় মানুষের স্বাদ গ্রন্থি ঠিক মত কাজ করে না। তাই বিমানে খাবার সুস্বাদু করা বেশ কঠিন কাজ। সেটা মাথায় রেখেই পৃথিবীর সেরা ৮ জন সেফ দিয়ে প্রস্তুত করা হয় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের যাত্রীদের খাবার।
আপনি আগে থেকে অর্ডার করে রাখলে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে উপভোগ করতে পারবেন লবস্টার, থারমিডোর বা প্যাড থাইয়ের মত উন্নতমানের খাবার। এমনকি একোনমি ও প্রিমিয়াম ইকোনমি ক্লাসেও আপনি চমৎকার সব ফ্রি মিল উপভোগ করতে পারবেন।
পছন্দ অনুসারে ওয়াইন
সাধারণত পত্রিকায় আপনি এমন পেশার বিজ্ঞাপন হয়তো দেখতে পাবেন না। তবে এমন পেশাজীবী লোক আছে যারা গবেষণা করে বের করেন যে মেঘের উপরে ভেসে যাওয়া বিমানে কোন খাবারের সাথে কোন ওয়াইনের স্বাদ ভাল লাগে। এমনই কিছু বিশেষজ্ঞ দিয়ে নির্ধারণ করা হয় আপনার খাবারের সাথে কোন ওয়াইন পরিবেশন করা হবে। আপনি চাইলে নিজেও একাধিক ওয়াইন থেকে পছন্দ করে নিতে পারবেন আপনারটি।
ঘুমানোর সুযোগ
বিমানে একটু ঘুমিয়ে নিতে পারলে কিন্তু মন্দ হয় না। এমনকি অনেক ব্যস্ত যাত্রী আছেন যারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন বিমানে পুরো পথ নিরবিচ্ছিন্ন একটা ঘুম দেয়ার। মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো রুটে ভ্রমণ না করে সিঙ্গাপুর রুটে ভ্রমণ করলে আপনি বেশি ঘুমানোর সুযোগ পাবেন।
সিনেমা ও টিভি সিরিজ
আপনার সামনে থাকা ২৩ ইঞ্চি আকৃতির স্ক্রিনে অপেক্ষা করছে শত শত সিনেমা ও টিভি সিরিজ। এই স্ক্রিনে সংরক্ষিত সিনেমা ও টিভি সিরিজ টানা ৮০ দিন দেখেও শেষ করতে পারবেন না। তাই যাত্রাপথে বিরক্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। অনেক যাত্রীই উল্টো রেগে যান তার সিনেমা শেষ হবার আগেই ফ্লাইট শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে। ২০০১ সালেই সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স প্রথম সকল শ্রেণীর যাত্রীদের জন্য ভিডিও বিনোদনের ব্যবস্থা করে।
চাঙ্গি বিমানবন্দর
পৃথিবীর অন্য যেকোনো বিমানবন্দরের থেকে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর অনেক বেশি পুরস্কার অর্জন করেছে। এর থেকেও আনন্দের ব্যাপার হল, এই বিমানবন্দরে রয়েছে প্রজাপতির প্রদর্শনী। হাতে সময় থাকলে যাত্রীদের জন্য রয়েছে সুইমিংপুল, সিনেমা হল, বিশ্রাম নেয়ার বিশেষ ব্যবস্থা।
নতুন বিমান
যখন আপনি মাটি থেকে ৩০,০০০ ফুট উপর দিয়ে ভ্রমণ করবেন আপনি নিশ্চয়ই যান্ত্রিক গোলযোগের ঝুঁকি নিতে পছন্দ করবেন না? সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের প্রায় সব বিমান ৭ বছর বা তার কিছু বেশি পুরনো। বলতে গেলে তরুণ বয়সী সব বিমান দিয়ে পরিচালিত হয় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স।
একেবারে নতুনের মধ্যে রয়েছে A350 মডেলের বিমান। যা অনেক বেশি কার্যক্ষম, পরিবেশ বান্ধব ও নির্ভরযোগ্য আধুনিক বিমান। তাই যথা সময়ে উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের বিশেষ খ্যাতি রয়েছে।
ডায়মন্ড, লেজি জি, সানডেক
না! এগুলো কোন র্যাপ গায়কের নাম নয়। এগুলো আসলে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের বিজনেস ক্লাস সিট সম্পর্কিত কথাবার্তা। বিজনেস ক্লাস সিটগুলো স্কটিশ লেদার দিয়ে হাতে তৈরি করা। ডায়মন্ড স্টিচ নামের বিশেষ উপায়ে সেলাই করা হয়েছে এই স্কটিশ লেদার। এই সিট গুলোতে রয়েছে নতুন ২ ধরনের বসার পজিশন। লেজি জি পজিশনে আপনার শরীরের ওজন ঠিক মাঝামাঝি অবস্থানে নিয়ে আসে যা বেশ আরামদায়ক। অন্যদিকে সানডেক পজিশন অনেকটা সমুদ্র সৈকতে শোয়ার চেয়ারের মত।
আকাশে পাঁচ তারকা হোটেল
আকাশপথে সম্পূর্ণ পাঁচ তারকা হোটেলের স্বাদ পেতে চাইলে আপনার উচিৎ সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে ভ্রমণ করা। এমনকি আপনার যদি কোথাও ভ্রমণ করার ইচ্ছা নাও থাকে শুধুমাত্র সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের আতিথেয়তা উপভোগ করার জন্য হলেও আপনার এই বিমানে উঠা উচিৎ।