জাপানের নারিতায় পাখা মেলতে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ শুরু হতে যাচ্ছে কাঙ্খিত এ ফ্লাইট। প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে ঢাকা-নারিতা রুটে তিনটি করে ফ্লাইট রেখে সূচি সাজিয়েছে বিমান। সোম, বুধ ও শুক্রবার মিলবে বিমানের ফ্লাইট।
বিমানের ঢাকা-নারিতা ফ্লাইট শুরু হলে জাপান হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং এশিয়ার অন্য অঞ্চলগুলোর সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগের পথ খুলবে বাংলাদেশের। অবশ্য আগেও জাপানের সাথে আকাশপথে যুক্ত ছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু ২০০৬ সালে নারিতা রুট বন্ধের মধ্য দিয়ে বিচ্ছিন্ন হয় সে যোগাযোগ।
জাপানের নারিতায় ফ্লাইট চালু করতে কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা চালিয়ে আসছিল বিমান। ফ্লাইট শুরুর বিষয়ে জাপান সরকারের অনুমোদনও বেশ আগেই পায় বিমান। সে সময়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বছরের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরকে ঘিরে ফ্লাইট শুরুর পরিকল্পনা সাজানো হয়েছিলো। তবে সফরটি বাতিল হওয়ায় তা হয়নি। সে সময় ফ্লাইট শুরুর প্রস্তুতির জন্য এ বছরের মার্চ পর্যন্ত সময় চেয়েছিলো জাপান কর্তৃপক্ষ।
জাপানে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে বিমানকে ফিফথ ফ্রিডম সুবিধা দিয়েছে দেশটি। অর্থাৎ ঢাকা ও নারিতার মধ্যবর্তী একটি বিমানবন্দর থেকে যাত্রী নিয়েও এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা যাবে।
বিমানের আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী জাপান এয়ারের সঙ্গে কোড শেয়ার চুক্তিতে যাওয়ার কথা সংস্থাটির। দুটি এয়ারলাইনসের মধ্যে এ ধরনের চুক্তি থাকলে একজন যাত্রী কোনো একটি এয়ারলাইনসের টিকিট কেটেই অন্য এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারেন।
বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারলাইনস এ ধরনের চুক্তির ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করলেও এটিই হবে বাংলাদেশের প্রথম উদ্যোগ। অবশ্য শুরুতেই এ ধরনের চুক্তি হওয়ার আশা ক্ষীন।
১৭ বছর পর নারিতায় আবারও ফ্লাইট পরিচালনার সব প্রস্তুতি শেষ হলেও এখনও যাত্রীদের ভাড়া নির্ধারণ হয়নি। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম বলেন, রুটটি আমাদের আগেও ছিলো। কিন্তু কোনো না কোনো কারণে বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের বিশ্বাস যে এই রুটটি ভালো করবে।
বর্তমানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্যে পয়েন্ট টু পয়েন্ট সেবা দিয়ে থাকে বিমান। একসময় অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বিমানের ফ্লাইট চলাচল করলেও এখন সেæগুলো বন্ধ। বিমানের বহরে লম্বা দূরত্বে উড়তে সক্ষম অন্তত ১০টি উড়োজাহাজ থাকলেও রুট না থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই সেগুলোর সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি বোয়িং সেভেন এইট সেভেন ও চারটি বোয়িং ট্রিপল সেভেন মডেলের উড়োজাহাজ। এর প্রত্যেকটি টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম।
এতদিন বিমানের লম্বা দূরত্বের ফ্লাইট চালু ছিল শুধু লন্ডন রুটে। টরন্টোতে ফ্লাইট শুরুর পর এটিও যোগ হয় লম্বা দূরত্বের রুটের তালিকায়। এবার সে তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে নারিতা। ঢাকা থেকে সরাসরি আকাশপথে নারিতা যেতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে ৮ ঘণ্টা।
টরন্টোতে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করায় ভারত, নেপালসহ আশপাশের বিভিন্ন দেশের যাত্রীদের মধ্যে রুটটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। বিমান আশা করছে নারিতা রুটেও মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক যাত্রী পাওয়া যাবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন বিমান প্রতিমন্ত্রী মো মাহবুব আলী বলেন, ‘বিমান বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে, উন্নত দেশগুলোতে যাবে। এর ধারাবাহিকতায় কিন্তু আমরা আজ টরন্টো যাচ্ছি, নিউইয়র্ক যাবো, নারিতা যাচ্ছি।’
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন বলেন, ‘জানি না এটার ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি কতটুকু হয়েছে। আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে কিন্তু এই ফ্লাইট চলতো। কিন্তু মাঝখানে এটা কেন বন্ধ করলো? এটা ক্ষতিয়ে দেখতে হবে আমাদের।’