সেনজেন ভিসা কি:
অস্ট্রিয়া, আইসল্যান্ড, ইতালি, এস্তোনিয়া, গ্রিস, চেক রিপাবলিক, জার্মানি, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, বেলজিয়াম, মাল্টা, লুক্সেমবার্গ, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, স্পেন, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, হাঙ্গেরি -এই দেশগুলো সেনজেন দেশ। এসব দেশে সেনজেন ভিসা ব্যবহার করে যাওয়া যায়। ১৯৮৫ সালে লুক্সেমবার্গের সেনজেন শহরে একটি চুক্তি সাক্ষর করে এই ইউরোপীয় দেশগুলো। এটি মূলত ছিলো দেশগুলোকে একীভূত করে নানা উন্নয়ন কার্য সম্পাদন করার উদ্দেশে। এই চুক্তির ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি হয় ‘সেনজেন ভিসা’। সেনজেন ভিসার মেয়াদ ৯০ দিনের। অর্থাৎ এ কয়দিনের মধ্যে বেড়ানো বা ব্যবসা সংক্রান্ত প্রয়োজনে ইউরোপ ঘুরে আসা যায়।
সেনজেন ভিসা পাওয়ার উপায়: সেনজেন ভিসা প্রাপ্তির জন্য অনেক কাগজপত্রের পাশাপাশি প্রয়োজন ধৈর্য ও সচেতনতার।
দূতাবাসে যোগাযোগ: ইউরোপের যে সকল দেশের দূতাবাস আমাদের দেশে আছে, সেখানে যোগাযোগ করতে হয়। ফ্রান্সের ওভারসীজ টেরিটরি মনাকো এবং এন্ডোরা এবং বুরকিনা ফাসো, মধ্য আফ্রিকা, ডি জিবুতি, গ্যাবন, আইভরি কোস্ট, মৌরিতানিয়া, সেনেগাল, টগো এসব দেশে যেতে চাইলে ফ্রান্স দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। চেক রিপাবলিকের ভিসার জন্য দিল্লীতে চেক রিপাবলিকের হাই কমিশনে যোগাযোগ করতে হবে। জার্মানি ভ্রমণের জন্য জার্মান দূতাবাসে যোগাযোগ করতে হবে।
ইতালি, গ্রিস ও মাল্টা ভ্রমণের জন্য ইতালি দূতাবাসে যোগাযোগ করতে হবে। সুইডেন, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, পোল্যান্ড, লাটাভিয়া, নেদারল্যান্ড এবং স্লোভেনিয়া ভ্রমণের জন্য সুইডেন দূতাবাসে যোগাযোগ করতে হবে।
ভিসার ফর্ম পূরণ: ভিসার আবেদন ফরমের দু’পাশে প্রতিটি ঘর পূরণ করতে হবে অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে। চাইলে এজেন্সির সাহায্যও নেওয়া যেতে পারে। নিজে করতে চাইলে নির্দিষ্ট দেশটির দূতাবাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: সাম্প্রতিক তোলা দুই কপি ছবি। ভ্রমণ শেষ হওয়ার পরও অন্তত ছয় মাস মেয়াদ আছে এমন পাসপোর্ট জমা দিতে হবে।
জমা দেয়া প্রতিটি কাগজের মূলকপির সাথে একটি করে ফটোকপি দিতে হবে। কোন কাগজ বাংলায় থাকলে সেটার সাথে ইংরেজি বা জার্মান অনুবাদ যুক্ত করতে হবে। ভ্রমণ ভিসার ক্ষেত্রে হোটেল বুকিং কনফার্মেশনের প্রমাণ দেখাতে হয়।
ভ্রমণকারী কোন কোন জায়গায় ভ্রমণ করতে চলেছেন তার বিস্তারিত জানাতে হয়। ম্যারেজ সার্টিফিকেট, বার্থ সার্টিফিকেট এবং সন্তান সন্ততির তথ্য প্রদান করতে হয়। ব্যক্তিগত হিসাব বিবরণী দেখাতে হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে বাবা-মা বা বৈধ অভিভাবকের অনুমতিপত্র জমা দিতে হবে। এছাড়া শিশুদের ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে বাবা-মা বা অভিভাবকে অবশ্যই দূতাবাসে উপস্থিত থাকতে হবে। বিজনেস ভিসার জন্য অতিরক্তি হিসেবে জমা দিতে হবে কোম্পানির আমন্ত্রণ পত্র, হিসাব বিবরণী, ট্রেড লাইসেন্স ইত্যাদি।
ভিসা ফি
প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য -৫০০০ টাকা।
৬-১২ বছরের জন্য -২৯০০ টাকা।
০-৬ বছরের জন্য ভিসা প্রয়োজন নেই।
প্রতি আবেদনের ক্ষেত্রে ভ্যাটসহ অতিরিক্ত ১৭ ইউরো পরিমাণের ১৪১৭ টাকা সার্ভিস চার্জ প্রযোজ্য। ঢাকায় অবস্থিত সুইডেন ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টারের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বুথে এই টাকা জমা দেওয়া যায়।
ভিসা প্রাপ্তির সময়: সাধারণত ৭-১০ কার্যদিবস, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এক মাস (বা তারও বেশি) পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
তবে আবেদন করার আগে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। সেনজেন দেশগুলোর দূতাবাসগুলো প্রতিটি ভিসা অ্যাপ্লিকেশন
পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পরীক্ষা করে এবং আবেদনকারীর সাথে সংশ্লিষ্ট নানা ধরনের অসংখ্য ডকুমেন্টস জমা দিতে হয়। আবেদনকারীর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানকে সুস্পষ্ট করা এবং তার ভিসা আবেদনের যৌক্তিকতা তুলে ধরার জন্য তাই সেনজেন দেশগুলোর দূতাবাসগুলো আবেদনকারীর সাথে একটি ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করে। এম্বাসিতে এই ইন্টারভিউটা আত্মবিশ্বাসের সাথে সম্পন্ন করা জরুরি। ইংরেজি সহ অন্য কোন ভাষায় দক্ষতা থাকলে ভিসা পাওয়া সুবিধাজনক।
এছাড়া সেনজেন এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রতিটি ভিসার জন্য ৬০ ইউরো সমপরিমাণ টাকা এডমিনিস্ট্রেশন ফি হিসেবে জমা দিতে হয়। ভিসা সাক্ষাৎকারের পরপরই এই ফি জমা দিতে হয়।