1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
সুন্দরবনের কটকা ভ্রমণ
বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

সুন্দরবনের কটকা ভ্রমণ

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৯ জুলাই, ২০২১
এখানকার আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় খাল। এসব খালে নৌকা নিয়ে ভ্রমণ করা খুবই মজাদার। খালের ধারে দেখতে পাবেন দলে দলে চড়ে বেড়ানো চিত্রা হরিণের দল। এছাড়া বানর, উদবিড়াল ও বন মোরগও দেখা যায়। মাঝে মাঝে বাঘের গর্জনও শোনা যায় এখানে। অন্ধকার রাত নেমে আসলে লাখো-কোটি জোনাকির আলোর মেলা মুগ্ধ ও বিমোহিত করবে সবাইকে। বন কার্যালয়ের পেছন দিক থেকে সোজা পশ্চিমমুখী কাঠের তৈরি টেইলের উত্তর পাশের খালটির ভাটার সময় ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদের ঘন শ্বাসমূল  দেখা যায়। এছাড়া একটু শান্ত থাকলে বা নিরিবিলি যেতে পারলে এখানে দেখা মিলতে পারে চিত্রা হরিণেরও। ট্রেইলের শেষ মাথায় হাতের ডানে সোজা দক্ষিণে মিনিট হাঁটলে পাবেন টাইগার টিলা। এই টিলায় প্রায়ই বাঘের ছাপ দেখতে পাওয়া যায় বলেই টিলাটির এমনতর নামকরণ। টাইগার টিলা থেকে সামান্য পশ্চিমে বয়ার খাল। দুইপাশে কেওড়া, গোলপাতা আর নানান পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে জায়গাটি। জেটির উত্তরে খালের চরজুড়ে থাকা কেওড়ার বনেও দেখা মিলে দলবদ্ধ চিত্রা হরিণ, বানর আর শূকরের। এখানেই আপনি দেখতে পাবেন সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় পাখি হিসেবে স্বীকৃত মদনটাক পাখিকে। আবার শীতের সময় ভাগ্য ভাল থাকলে দেখা মিলতে পারে লোনা জলের কুমিরেরও। 

সুন্দরবনের কটকা ভ্রমণছবি : সংগৃহীত

কটকা বন কার্যালয়ের ঠিক ওপারে একটি ছোট খাড়ি চলে গেছে সোজা পূর্বদিকে। এই পথে কিছু দূর যাওয়ার পরে হাতের ডানে পাবেন ছোট্ট একটি জেটি এবং ওপরে ওয়াচ টাওয়ার। এই ওয়াচ টাওয়ারটি চারতলা বিশিষ্ট। ৪০ ফুট উঁচু এই টাওয়ার থেকে উপভোগ করতে পারবেন সুন্দরবনের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। একটি সুন্দর সমুদ্র সৈকত আছে এখানে। ওয়াচ টাওয়ার হতে ফেরার সময় হেঁটে বীচের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। পূর্বে দীর্ঘ বন আর মাঝে মিঠা জলের পুকুর। এই পুকুরের পানি পান করেন কর্মরত কোস্ট গার্ড, ফরেস্ট অফিসার ও স্থানীয় জেলেরা। এখান থেকে আশেপাশে তাকালে দেখা মিলে সুন্দরবনের প্রায় বিপন্ন প্রাণীদের। এছাড়া ওয়াচ টাওয়ার থেকে খানিকটা সামনে এগোলে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি খালের মাঝেও দেখতে পাবেন বিপুল সংখ্যক বন্যপ্রাণী। কটকা ওয়াচ টাওয়ারকে পিছু ফেলে সোজা উত্তরে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে গেলে জামতলা সমুদ্র সৈকত। এটিই কটকা সমুদ্র সৈকত যা স্থানীয়দের কাছে জামতলা সমুদ্র সৈকত হিসেবে পরিচিত। এই সৈকতটি নির্জন এবং পরিচ্ছন্ন। বেলাভূমিজুড়ে শুধুই দেখা যায় কাঁকড়াদের শিল্পকর্ম। কোথাও কোথাও দেখতে পাবেন জোয়ারের ঢেউয়ে ধুয়ে যাওয়া গাছের শেকড়। সৈকতটি সোজা পুবে গিয়ে শেষ হয়েছে কচিখালীতে।

খরচ :

কটকা অভয়ারণ্য এলাকায় প্রত্যেক দেশি পর্যটকের প্রতিদিনের ভ্রমণ ফি-১৫০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রী-৩০ টাকা, বিদেশি পর্যটক-১ হাজার ৫০০ টাকা। অভয়ারণ্যের বাইরে দেশি পর্যটক-৭০ টাকা ও বিদেশী পর্যটক-১০০০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রী-২০ টাকা, গবেষক-৪০ টাকা। করমজলে দেশী পর্যটক-২০ টাকা, বিদেশী পর্যটক-৩০০ টাকা। হেলিকপ্টার/সী প্লেন এককালীন ৩০ হাজার টাকা, নবায়ন ফি ১০ হাজার টাকা। ১০০ ফুটের ঊর্ধ্বের লঞ্চ ১৫ হাজার টাকা, নবায়ন ফি ৪ হাজার টাকা, লঞ্চ ৫০ ফুট থেকে ১০০ ফুট এককালীন ১০ হাজার টাকা, নবায়ন ফি ৩ হাজার টাকা। ৫০ ফুটের নিচে সাড়ে সাত হাজার টাকা ও নবায়ন ফি আড়াই হাজার টাকা, ট্রলার ৩ হাজার টাকা ও নবায়ন ১৫০০ টাকা। স্পিড বোট ৫ হাজার টাকা ও ২ হাজার টাকা। জালিবোট (টুরিস্ট বোট) ২ হাজার টাকা ও ১ হাজার টাকা। বন বিভাগের নির্দিষ্ট ভ্রমণ ফি ছাড়াও প্রতিদিন গাইড ফি ৫০০ টাকা, লঞ্চ ক্রু ফি ৭০ টাকা, নিরাপত্তা গার্ড ফি ৩০০ টাকা, টেলিকমিউনিকেশন ফি ২০০ টাকা।সুন্দরবনের কটকা ভ্রমণছবি : সংগৃহীত

যেভাবে যাবেন কটকা :

কটকায় যাবার প্রধান ও একমাত্র মাধ্যম হলো লঞ্চ। আর পর্যটকদের নিয়ে এই লঞ্চ নোঙ্গর করা হয় কটকা খালে। রাজধানী ঢাকার গাবতলি ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে প্রথমে খুলনা বা বাগেরহাট গামী বাসে করে খুলনা আসতে হবে আপনাকে। ঢাকা থেকে সরাসরি বাগেরহাটে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে মেঘনা পরিবহন, সাকুরা পরিবহন, পর্যটক পরিবহন, সোহাগ পরিবহন। খুলনা থেকে রূপসা বা বাগেরহাটের মংলা বন্দর থেকে লঞ্চ পাবেন সুন্দরবন যাওয়ার। এছাড়া বাগেরহাটের মংলা, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা থেকেও সুন্দরবন যাওয়ার নৌযান পাওয়া যায়।

যেখানে থাকবেন : টুরিস্ট ভেসেল বা নৌযান ছাড়াও সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে হিরণ পয়েন্টের নীলকমল এবং টাইগার পয়েন্টের কচিখালী ও কটকায় বন বিভাগের রেস্ট হাউজে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। যার ফি নীলকমলে দেশি পর্যটকদের জন্য প্রতি কক্ষ তিন হাজার টাকা, চার কক্ষ বার হাজার টাকা। কচিখালী প্রতি কক্ষ তিন হাজার টাকা, চার কক্ষ দশ হাজার টাকা। কটকা প্রতি কক্ষ দুই হাজার টাকা, দুই কক্ষ চার হাজার টাকা। এছাড়া সুন্দরবনের পাশে সাতক্ষীরা শহরে সাধারণ মানের হোটেল ও শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে এনজিও সুশীলনের রেস্ট হাউজ ও ডরমিটরিতে একক, পরিবার ও গ্রুপ নিয়ে থাকার সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও মংলায় থাকতে চাইলে আছে পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল, পশুর বন্দরেও আছে সাধারণ মানের হোটেল। খুলনা মহানগরে আছে হোটেল রয়েল, ক্যাসেল সালাম, হোটেল টাইগার গার্ডেন, হোটেল ওয়েস্ট ইন, হোটেল সিটি ইন ইত্যাদি মানসম্পন্ন হোটেল ও কিছু সাধারণ মানের হোটেল।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com