মুক্তাদানার মতো বালু চিকচিক করছে। এরই মাঝে বিশাল বিশাল এক একটা ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে তীরে।
চরটি দেখতে অনেকটা ডিমের মতো বিধায় একে ডিমের চর বলা হয়। আবার অনেকেই বলে থাকেন এখানে পাখিরা ডিম পেড়ে পক্ষীর চরে চলে যায় তাই এ চরের নাম ডিমের চর। লাল কাঁকড়ার খুনসুটির মনোমুগ্ধকর এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে এ চরে। শুধু লাল কাঁকড়াই নয়, বন্য প্রাণী, বাঘ, হরিণসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর বসবাস এ দ্বীপ চরে। জীববৈচিত্র্য খুব কাছ থেকে দেখতে ডিমের চরে ভিড় করেন দেশি-বিদেশি ভ্রমণপিপাসুরা।
এখানে ঘুরতে আসা অনেক পর্যটক বলেন, সুন্দরবন ভ্রমণে এসে সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জনের এমন অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য না দেখলে হয়তো বন দেখার আসল স্বাদটাই মিটতো না।
এমভি দি ওয়েভ ক্রুজ জাহাজে করে সুন্দরবনে ঘুরতে আসা পাকিস্তানি নাগরিক জিব্রান বাংলানিউজকে বলেন, ডিমের চরে না এলে সুন্দরবনে আসা বৃথা যেত। এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। এ বিচের সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে গেছি।
ময়মনসিংহ থেকে স্ত্রীকে নিয়ে সুন্দরবনে ঘুরতে আসা সরকারি কর্মকর্তা কায়সার উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ডিমের চরে এসে আমার খুব ভালো লাগছে। এখানে এসে জানতে পারলাম ডিমের মতো আকৃতি হওয়ায় এটার নাম না কি ডিমের চর।
বনপ্রহরী জি এম মাহতাব উদ্দিন বলেন, প্রথম যখন চরটি ওঠে তখন নাম দেওয়া হয়েছিল পক্ষীর পর। পরে পাখি যখন এ চরে ডিম পারতো তখন এ চরে প্রচুর ডিম দেখা যেত, সেই থেকে নাম হয়েছে ডিমের চর। এ চরেও বাঘের আনা-গোনা আছে। প্রায় বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যায়।
যেভাবে যাবেন ডিমের চর
ঢাকার মতিঝিল, আরামবাগ, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে বিভিন্ন এসি/নন এসি বাস খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। এছাড়া সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন বাস খুলনা, বাগেরহাট ও মোংলার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। খুলনায় ট্রেনে ও যশোর পর্যন্ত বিমানে যাওয়া যাবে। পাশাপাশি নৌপথেও আসা যায়। যেকোনো পথে খুলনায় আসার পর বন বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ডিমের চরে যাওয়া যায়। বর্তমানে সুন্দরবনে বেড়াতে আনা পর্যটকদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে ডিমের চর।
যেখানে নির্জনতা আছে, আছে ভয়। অতিপ্রাকৃত, অপার্থিবও এ চর। কটকা থেকে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লঞ্চে চরে ডিমের চরের মোহনায় পৌঁছাতে হয়। কটকা থেকে খুবই কাছে ডিমের চরের অবস্থান। এ সৈকতটি নির্জন। বেলাভূমিজুড়ে শুধুই দেখা যায় কাঁকড়াদের শিল্পকর্ম। অন্য পাশে বিশাল বন। সন্ধ্যায় এখান থেকে বিচিত্র এক আকাশের দেখা মেলে। কটকা সি-বিচ ভেঙে যাওয়ায় পর্যটকরা এখন ডিমের চরের বিচে বেশি আসছেন। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য এ সুন্দরবনের ডিমের চরে আছড়ে পড়েছে। মূলত সকালের দিকে ডিমের চরে যেতে হয়। তাহলে প্রকৃতির আসল রূপ দেখতে পাওয়া যায়।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন কর্মকর্তা (এসিএফ) দ্বীপন চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে বলেন, মূলত ডিমের চর কচিখালী অভয়ারণ্যের আওতাধীন একটি চর। পাখির ডিমের মতো আকৃতি হওয়ায় এ চরের নাম ডিমের চর। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিমুগ্ধ হওয়ার মতো। যে কারণে চরটি ভীষণ পছন্দের পর্যটকদের কাছে।