‘ভুটান যাবা? খালি বলে দেখ এবার, জ্যান্ত পুঁতে ফেলব’, ফোনে ফাহমিদার হুঙ্কার। জ্যান্ত মরার ভয়ে, নাকি খুব দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছা করছিল ঠাহর করে বলতে পারছি না শুধু ঈদের ছুটি শুরুর দু’দিন আগের এক দুপুরে নিজেকে আবিষ্কার করলাম দ্রুক এয়ারলাইন্সের এক ছোট্ট বিমানে; সঙ্গী রেহনুমা আপু, তানজিবা আর ফাহমিদা। জানালা দিয়ে নিচে তাকাতেই দেখি সাদা মেঘের ঝোপ। ওখানে নেমে খানিক গড়াগড়ি খেয়ে আসার পরিকল্পনা করতে করতেই দেখি নীলচে পাহাড় সারি। পাইন গাছেরা রাজকীয় সবুজ পোশাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে আছে। পাহাড়কে ডানা দিয়ে প্রায় স্পর্শ করে বিমান থামল পারো বিমানবন্দরে। ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের হলকা থেকে ৫০ মিনিটের মধ্যে ২৩ ডিগ্রির হালকা শীতল স্পর্শে আমাদের ‘পার ক্যাপিটা হ্যাপিনেস’ বেড়ে গেল। সুখী মানুষদের দেশে নেমেছি বুঝতে হবে তো!
কারুকার্যময় পারো বিমানবন্দরের বাইরেই গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল আমাদের পরের ৬ দিনের সঙ্গী নরবু। বিমানবন্দর থেকে আমাদের গন্তব্য রাজধানী থিম্পু; রাস্তায় বের হতেই ছিপছিপে তন্বী ‘পারো চু’র সঙ্গে দেখা; ভারি ইচ্ছে হচ্ছিল ওর ঝকঝকে স্বচ্ছ জলে পা ডুবিয়ে পাথরের ওপর বসে থাকি। এইবেলা বলে রাখি কোনো প্যাকেজ ছাড়া ভুটান গেলে দেশ থেকে ট্যাক্সি বা গাড়ি ঠিক করে যদি যান সময় বাঁচাতে পারবেন অনেকখানি। সেই সময়টা বরং ঘোরাঘুরির পেছনে ব্যয় করুন। যাহোক, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি মসৃণ পথ ধরে ছুটে চলেছি আমরা, একপাশে উঁচু পাহাড়ের পাথুরে শরীর; আর অন্য পাশে জলজ শিলা বুকে নিয়ে গর্বিত ছন্দে বয়ে চলা ‘পারো চু’; মনে মনে গান ভাজতে থাকি- ‘তুই লাল পাহাড়ের দেশে যা, রাঙ্গামাটির পথে যা’।
পথেই ‘পারো চু’-এর ওপরে লোহার ঝুলন্ত সাঁকো; তার ওপাশে ‘তামচোগ মোনাস্ট্রি’।
এ যেন হঠাৎ রূপকথার রাজ্যে চলে আসা অথবা টাইম মেশিনে চড়ে অতীতে পাড়ি জমানো; বুঝে উঠতে পারছিলাম না কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখব- রুক্ষ পাহাড়, রোদ্দুর মেখে ছুটে চলা ঝিকিমিকি নদী নাকি অচিন দেশের অদ্ভুত সুন্দর ধর্মশালা।
ঘোর কাটতে না কাটতেই পৌঁছে যাই সিলভার পাইন হোটেলে। আমরা আগে থেকে বুকিং করে আসিনি; অফ সিজন বলে লোকজন তেমন নেই; মনুষ্যশূন্য হোটেলে থাকার ঝুঁকি তাই আর নিলাম না। শুনলাম ওয়াইফাইও নেই। এ যুগে আর যা-ই হোক ইন্টারনেট ছাড়া কি দিন কাটে! থিম্পু শহরের ভেতরে পিসফুল রিসোর্টে আমাদের নিয়ে গেল নরবু; দামাদামি করে হোটেল ভাড়াটাও কমিয়ে দিল। শান্তি হোটেলে শান্তিতে দু’দিন থাকব ঘোষণা দিয়ে আমরা নিজেদের বাক্স-পেঁটরা রেখে থিম্পু শহরে গেলুম খাবারের সন্ধানে।
ভুটানে খাবার খেতে হয় নির্দিষ্ট সময়ে; ওই সময়ের বাইরে মাথা খুঁড়লেও খাদ্যদ্রব্য পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই সকালের খাবার যে হোটেলে থাকবেন ওখানেই খেয়ে নেয়া ভালো। ওখানে রেস্তোরাঁগুলো সাধারণত পারিবারিক ব্যবসা; পরিবারের সদস্যরাই চালায়, ভুটানি, ভারতীয়, তিব্বতি- সব ধরনের খাবার পাওয়া যায়। তবে ভুটান যাবেন আর সুগন্ধি লাল চালের ভাতের সঙ্গে ‘এমা দাতসি’, ‘কেওয়া দাতসি’, ‘জাশামারো’, ‘ফাকশাপা’ অথবা ‘ মোমো’ না খেয়ে চলে আসবেন তা তো আর হয় না।
রাতের থিম্পু শহরটাও দেখার মতো। উঁচুতে দাঁড়িয়ে আলো ঝলমলে জং দেখে শান্তি হোটেলে ফিরলাম আমরা ক্লান্ত চতুষ্টয়।
পারো শহর
পরদিন সকাল সকাল নাশতা সেরেই ছুটলাম মেমোরিয়াল চর্তেন বা কিংস মেমোরিয়ালে। লোকজন এখানে প্রধান মন্দিরের চারপাশে চক্রাকারে ঘোরে আর মন্ত্র পড়ে। চত্বরে আছে অসংখ্য পায়রা। আমরাও সবার সঙ্গে একটা চক্কর দিয়ে, পায়রা উড়িয়ে বুদ্ধ দরদেনমা স্ট্যাচু বা বুদ্ধ পয়েন্টে গেলাম। ধ্যানী বুদ্ধ শহরের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়টির ওপরে মেঘের চাদর জড়িয়ে সবাইকে পাহারা দিচ্ছেন। ওখান থেকে গেলাম চাঙ্গাংখা লাখাং-এ; থিম্পুর সবচেয়ে পুরনো দুর্গমন্দির এটা। বাচ্চাদের নাম রাখা আর আশীর্বাদ করার জন্য নিয়ে আসা হয়। এখানে, প্রধান বেদিতে মেয়েরা নিষিদ্ধ তাই খানিক মনের আনন্দে প্রার্থনা হুইল ঘুরিয়ে দুটো ভুটানি বাচ্চার গাল টিপে আদর করে আর ছবি তুলে ছুটলাম দুপুরের খাবার খেতে। এরপর ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে ভিজে গেলাম মোনাস্ট্রিতে। এর পা ঘেঁষে চলা পাথুরে নদীর অধীর ঢেউ, পানিতে সবুজ বনানীর ছায়া, কিনারের ভেজা পাথরে বসে থাকা আনমনা আমাদের চোখে কী যে স্বপ্ন এঁকে দিচ্ছিল তা শুধু আমরাই জানি।
পথে রয়্যাল টেক্সটাইল একাডেমি দেখে বিকেলে গেলাম তাশিচো জংয়ে। ওখানে তখন আমাদের রাষ্ট্রপতি আসবেন বলে তুমুল প্রস্তুতি চলছে। আমাদের একটু আলাদা খাতির করল বাংলাদেশ থেকে এসেছি বলে। জংয়ের পাশেই ওদের পার্লামেন্ট হাউস আর প্রাসাদ। প্রাসাদ বলতে ছোট্ট সুন্দর একটা বাড়ি। কেউ বলে না দিলে বোঝাই যাবে না ওটা প্রাসাদ। রাজা-রানী ওখানটাতেই থাকেন। কী জানি তাদের সম্মানেই কিনা জং চত্বরের মাথায় হ্যাট, হুডি বা ছাতা নিয়ে হাঁটা নিষেধ। বৃষ্টিতে ভিজে একশা হয়ে তাদের সম্মান অথবা নিরাপত্তা রক্ষা করলাম।
ভুটানের শহর আর পথঘাট মুগ্ধ করার মতো। উঁচু-নিচু পথ, দু’ধারে প্রাচীন রীতির বাড়ি। একে পরিচ্ছন্ন তাতে যানজট নেই। ট্রাফিক পুলিশ ১০০ বছর আগের মতো হাতের ইশারায় নিয়ন্ত্রণ করে যানবাহন। আরো আশ্চর্যের ব্যাপার পুরো সময়ে কোনো হর্নের শব্দ শুনিনি। তবে কোলাহল যেমন নেই, তেমনি একটা টং দোকানও খুঁজে পেলাম না তন্ন তন্ন করেও, এক কাপ চা খাবার জন্য।
তৃতীয় দিনে আমাদের গন্তব্য দো-চুলা পাস হয়ে পুনাখা ভ্যালি। দো-চুলা পাস থেকে হিমালয়ের কয়েকটা চূড়ার দেখা মেলে রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনগুলোতে। আমরা যখন রাস্তায় পাহাড় ধস এড়িয়ে দো-চুলা পাসে পৌঁছলাম তখন মেঘের ঢেউ জলে আর মেঘ পাহাড়ের আলিঙ্গনের আগুনে গলে গলে পড়ছে আমাদের ওপরে। মেঘের হিমে আচ্ছন্ন পথে চলতে চলতে নামার সময় লাল কাদায় গাড়ির সামনের অংশ ঢেকে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় গাছগুলো ঝুলে আছে রাস্তার ওপরে। পথে ঝিরঝিরে একটা ঝরনাও পড়ল, একেই বুঝি বলে ভয়ঙ্কর সুন্দর।
পথে লাম্পেরিতে রয়্যাল বোটানিক্যাল পার্কে ঢুকলাম। মনে হলো হঠাৎ পথ ভুলে ‘হ্যারি পটার’-এর জাদুর জগতে চলে এসেছি। এক্ষুনি সামনে ঝোপের আড়াল থেকে কেউ বেরিয়ে আসবে। যাহোক কেউ বেরোয়নি। দিব্যি হেঁটে চলে এসেছি; ভাবি একটা লাল পান্ডা বেরিয়ে এলে মন্দ হতো না।
হোটেল লোবেসাতে বাক্স-পেঁটরা রেখে দে দৌড় পুনাখা জংয়ে। পাহাড়ের ঢালে পোচু নদ আর মোচু নদীর সঙ্গমে ফুলে ফুলে ঢাকা এই অসম্ভব সুন্দর মন্দির দুর্গ। এখানে না এলে ফণিমনসার ফুল আছে আর সেটা দেখতে এত সুন্দর তা আমার জীবনে জানাই হতো না। এই মন্দির চত্বরেই রাজা-রানীর বিয়ের অনুষ্ঠান হয়, সব রাজকীয় পূজাও এখানে হয়। নদীতে র্যাফটিং করা যায়, খরচ ৭০০০ রুপি। একে খরচ তাতে আমার সঙ্গে তিনজনের একজনও সাঁতার জানে না; পড়লে আমাকেই চেপে ধরার আশঙ্কায় সবাইকে নিরুৎসাহিত করেছি। হা হা হা!
কিংস মেমোরিয়াল
পরদিন আবার সেই দো-চুলা পাস হয়ে থিম্পু হয়ে পারোতে; যেতে অনেকটা সময় লাগে। পারো পৌঁছে বিকেলে গেলাম ভুটানের জাতীয় জাদুঘরে। তারপর সেদিনের মতো বিশ্রাম। পরেরদিন কাল বাঘের ডেরায় যেতে হবে কিনা! পারো চু’র পানির অবিরাম বয়ে চলার শব্দ শুনতে শুনতে কখন ঘুমিয়েছি জানি না। সকালে সবার মধ্যেই উত্তেজনা; টাইগার’স নেস্টে যাব; ছবি তুলতে তুলতে পাহাড়ের নিচে থেকে যাত্রা শুরু। পথে দেখা হলো পুনর্জন্ম নেয়া শিশু (!) যাজকের সঙ্গে। জাপানি-ভারতীয়-চীনা-নেপালি-আমেরিকান-বাঙালি কে নেই যে যাচ্ছে না সেখানে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা-বাচ্চা কাঁধে ভারী ব্যাগ নিয়ে যেমন তরতর করে উঠে যাচ্ছিল আমার নিজের ৫ মিনিটে একবার জিরিয়ে নেয়াটা কিছুটা লজ্জার ব্যাপারই হয়ে দাঁড়াল। সে যাহোক, অমন উঁচুতে মন্দির বানানোর বুদ্ধি যার মাথায় এসেছে তার মপাত করতে করতে আর পাহাড়ের ওপর থেকে পারো উপত্যকার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে উঠেই পড়লাম পাহাড়ের চূড়ায়। ‘একেবারে চূড়ায়; মাথার খুব কাছে আকাশ, নিচে বিপুলা পৃথিবী, চরাচরে তীব্র নির্জনতা’।
এরপরেই খাড়া সিঁড়ি বেয়ে নেমে নিচের ঝরনায় ভিজে আবার উঠলে তবেই মন্দির। ওঠার পর মনে হলো এই মন্দির স্রেফ একটা ছুতো। এমন অদ্ভুত রোমাঞ্চকর একটা পথ বেয়ে চলাটাই মুখ্য উদ্দেশ্য। সেদিন বিশেষ পূজা চলছে, বাচ্চা মঙ্কদের হাসির পেছনে ভীত, বিষণœ মুখগুলো দেখে কেমন অসহায় লাগছিল; ওরা কি ইচ্ছে করে এই কঠিন জীবন বেছে নিয়েছে? কতটুকু দেখেছে ওরা জীবনের?
ফিরবার সময় পথ যেন আর ফুরোয় না। যখন নিচে পৌঁছলাম, আর এক পা হাঁটার শক্তি অবশিষ্ট নেই আমাদের, তবু মুখে পাহাড় জয়ের হাসি। ফেরার দিন চলে এলো। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে একই বিমানে করে দেশের মাটিতে পৌঁছলাম; মনে হলো আমরা আর আগের আমরা নেই; বদলে গেছি; সুখী মানুষের দেশে ঘুরে আমাদের মনেও উড়ছে সুখের প্রজাপতি।
ভুটান যাওয়ার আগে জেনে নিন কিছু টুকিটাকি
সময়: আগস্ট থেকে অক্টোবর- এই তিন মাস ভুটানে ঘোরার উৎকৃষ্ট সময়। শীতকাল বা বর্ষাকাল ভুটান বেড়ানোর খুব একটা উপযুক্ত সময় নয়।
মুদ্রা: ভুটানে ইন্ডিয়ান রুপি আর গুলট্রাম দুটোই চলে। রুপি আর গুলট্রামের মান সমান। বিমানবন্দর অথবা বর্ডার থেকে ডলার ভাঙাতে পারবেন। তবে কিছু দোকানেও ডলার ভাঙানো যায়, ট্যাক্সিওয়ালাকে বললেই দেখিয়ে দেবে। এক্ষেত্রে দাম কিছু বেশিই পাবেন। ভাঙিয়ে রুপি নিয়ে গেলেও কোনো সমস্যা নেই।
ভিসা: সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ভুটানে যেতে ভিসার দরকার হয় না। কেবল টিকিট কাটুন আর চলে যান। দ্রুক এয়ারওয়েজ ভুটানের একমাত্র বিমান সংস্থা; বাংলাদেশ থেকে কেবল দ্রুক এয়ারওয়েজেই ওখানে যাওয়া যায়। টিকিটের মূল্য ২২ হাজার টাকার মতো।
সড়ক পথে যেতে চাইলে প্রথমে ভারতীয় ট্রানজিট ভিসা নিতে হবে। কারণ বাংলাদেশ থেকে আপনাকে ভারত হয়েই ভুটানে প্রবেশ করতে হবে। টিকিটের মূল্য ৩-৪ হাজার টাকা। ভারতীয় ভিসা পাওয়ার ব্যাপারটা একটু ঝক্কির। তবে এটুকু কষ্ট ভুটানের সৌন্দর্যের তুলনায় কিছুই না। ঢাকা থেকে বাস লালমনিরহাট হয়ে শিলিগুড়ির উদ্দেশে ছেড়ে যায়। শিলিগুড়ি পৌঁছানোর পর সেখান থেকে অন্য আর একটি বাসে জয়গাঁ সীমান্ত এবং সেখানে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রবেশ করবেন ভুটানের ফুন্টসলিং।
এরপর আপনার যাত্রা থিম্পু অথবা পারোর দিকে। বিমানে বা সড়কপথে যেভাবেই যান, ওরা পাসপোর্টে এন্ট্রি পারমিশনের সিল দিয়ে দেবে, তবে এই পারমিশন শুধুমাত্র থিম্পু, পারো আর ফুন্টসলিংয়ের জন্য। অন্য কোথাও যেতে বা থাকতে হলে থিম্পু থেকে পারমিশন নিতে হবে।
যাতায়াত: ভুটানের বেশিরভাগ গাড়িই ছোট; ৮-৯ জন বসা যায় এমন গাড়ি বা মাইক্রোবাস অবশ্য ভাড়া পাওয়া যায়। চারজনের দল হলে একটা গাড়ি ভাড়া করে নেবেন, খরচ কম লাগবে। শেয়ারের ট্যাক্সিতেও ঘুরতে পারেন কিছু জায়গাতে। ভুটানের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে পারেন; কিন্তু এগুলো নির্দিষ্ট কিছু টাইমে ছাড়ে, তাই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে খুব একটা সুবিধা হবে না। এছাড়া এগুলো সব ট্যুরিস্ট স্পটে যায়ও না। গাড়ি ভাড়া করলে ড্রাইভারের থাকা-খাওয়ার খরচ সে নিজেই বহন করবে। আসলে ভুটানের প্রায় সব হোটেলেই ড্রাইভারদের থাকা-খাওয়া ফ্রি।
ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় বেশ কিছু ট্যুর অপারেটর রয়েছে যারা ভুটানে ট্যুর পরিচালনা করে। ঈদ উপলক্ষে এরা আকর্ষণীয় অফার দেয়। চার থেকে পাঁচ দিন ভুটান ভ্রমণের প্যাকেজের মূল্য বিমানে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা, সড়কপথে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। আমি অবশ্য পরামর্শ দেব বিমানে ও নিজেদের মতো করে যেতে; এতে বেশি জায়গায় নিজের মতো করে ঘুরতে পারবেন।
হোটেল: হোটেল আগে থেকে বুকিং করে রাখা ভালো। তবে পিক সিজন না হলে থিম্পু বা পারো পৌঁছেও যে কেউ হোটেল ঠিক করতে পারেন। ভুটানে মোটামুটি ভালো মানের হোটেলগুলো ই-মেইলে রুম বুক করে। এদের ভাড়া ২০০০ থেকে ৩০০০ রুপির মধ্যে। অফ সিজনে সব হোটেলই অনেক ছাড় দেয়।
কেনাকাটা: ভুটানে সবকিছুরই দাম অবিশ্বাস্য। ওদের নিজেদের পণ্য নেই বললেই চলে। সব ভারতীয়, চীনা, তিব্বতি বা নেপালি। তবু নতুন দেশে গিয়ে কিছু কিনবেন না তা তো আর হয় না। তাই কিনতে পারেন হাতে বোনা কাপড়, কাঠের জিনিসপত্র, পাথরের গয়না অথবা মুখোশ। থিম্পুতে একটা রাস্তায় হস্তশিল্পের দোকান বসে। স্ট্যাম্প সংগ্রহের শখ থাকলে সেগুলোও কিনে নিতে পারেন। সস্তায় কিছু জিনিস কিনতে চাইলে স্থানীয় কারো কাছ থেকে ঠিকানা জেনে নিতে পারেন অথবা টাইগার’স নেস্ট যাওয়ার পথে কিছু জিনিস পাওয়া যায়, তবে মান খুব একটা ভালো হবে না।
সতর্কতা: ভুটানের মানুষ ধর্ম, সংস্কৃতি এবং আইনের ব্যাপারে খুব সংবেদনশীল। অনেক কিছু দেখে আপনার কালচারাল শক লাগতেই পারে; তবু ওদের মনে আঘাত লাগতে পারে এমন কিছু এড়িয়ে চলুন। ভুটানের রাস্তাঘাটে অনেক বেওয়ারিশ কুকুরের দেখা মিলবে। কারণ ওরা প্রাণী হত্যা করে না। তবে কুকুরের কাজ কুকুর ঠিকই করে। এক হোটেলের কর্মচারী মাত্র পাঁচবার কামড় খেয়েছে! সুতরাং ‘কুকুর হইতে সাবধান’।
তো এবার মাথায় সাদা ক্যাপ পরে, কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে নেমে পড়ুন রাজপথে! হয়ে যাক এবারই!! শুভযাত্রা!