সুইডেনে আকাশছোঁয়া খাবারের দাম নিয়ে ক্ষুব্ধ ভোক্তারা। প্রতিবাদে তারা দেশের সবচেয়ে বড় সুপারমার্কেটগুলো বয়কট কর্মসূচি পালন করেছেন এক সপ্তাহের জন্য।
গত সপ্তাহে সোমবার থেকে শুরু হওয়া ‘বয়কট সপ্তাহ ১২’ নামের এই প্রতিবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ওঠে এবং তা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়।
প্রতিবাদকারীরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য একচেটিয়া বাজার ব্যবস্থায় ব্যবসায়ীদের মুনাফাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া এবং কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার অভাবকে দায়ী করেছেন। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, যুদ্ধ, ভূরাজনীতি, কৃষিপণ্যের দাম ও জলবায়ু সংকটের মতো বৈশ্বিক কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
স্টকহোমের কেন্দ্রীয় ট্রেন স্টেশনের কুপ সুপারমার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে এক সুইডিশ বলেন, “দাম তো বেড়েছেই।” ২১ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থী চকলেট আর চিপসের দাম নজরে রাখছিলেন, দেখলেন—দুটোরই মূল্য ‘আকাশ ছুঁয়েছে’।
সুইডেনের অনেক ভোক্তারই একই অভিজ্ঞতা। সুইডেনের সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থার হিসাব বলছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে একটি পরিবারকে বছরে ৩০ হাজার ক্রোনা (প্রায় ২,২৯০ পাউন্ড) বেশি খরচ করতে হচ্ছে শুধু খাবারের জন্য। এক প্যাকেট কফির দাম শিগগিরই ১০০ ক্রোনা ছোঁবে, যা গত বছরের শুরুর দিক থেকে ২৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
দুই বছরের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে খাদ্য দ্রব্যের মূল্য সবচেয়ে বেশি বাড়ার পর গত সপ্তাহে বড় সুপারমার্কেটগুলো বয়কট শুরু করে হাজার হাজার মানুষ।
তবে কেবল সুইডেনেই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এমন বিক্ষোভ দেখা গেছে। গত মাসে বুলগেরিয়ায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বড় বড় খুচরা বিক্রেতাদের বয়কট করা হলে তাদের বিক্রি প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায়। জানুয়ারিতে ক্রোয়েশিয়ায় শুরু হওয়া বর্জন আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে বসনিয়া ও হারজেগোভিনা, মন্টিনিগ্রো ও সার্বিয়ায়।
সুইডেনে ‘বয়কট সপ্তাহ ১২’ (কারণ- এটি ছিল বছরের ১২তম সপ্তাহ) কর্মসূচির আওতায় ভোক্তাদের বলা হয়েছিল লিডল, হেমচ্যোপ, ইকা, কুপ ও উইলিসের মতো বড় সুপারমার্কেট থেকে এক সপ্তাহ কেনাকাটা না করতে। বার্তায় বলা হয়, “আমাদের হারানোর কিছু নেই, কিন্তু পাওয়ার আছে অনেক কিছু।”
গবেষণা প্রতিষ্ঠান মাতপ্রিসকলেনের তথ্য বলছে, গত মাসে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চকোলেটের দাম— ৯.২ শতাংশ। রান্নার তেল ৭.২ শতাংশ, পনির ৬.৪ শতাংশ এবং দুধ-ক্রিমের দাম ৫.৪ শতাংশ বেড়েছে।