কয়েক দশক ধরে মানসম্পন্ন জীবনধারণের মূর্ত প্রতীক হয়ে আছে পশ্চিম ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ড। শেনজেনভুক্ত দেশটির নানা অঙ্গনজুড়ে অসামান্য সমৃদ্ধি করবে ঘোষণা করে আসছে সর্বোচ্চ স্তরের শিক্ষাব্যবস্থার কথা। চলুন জেনে নেওয়া যাক সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষায় আবেদনপ্রক্রিয়া, স্টুডেন্ট ভিসা ও অধ্যয়ন খরচ, স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে।
গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স অনুসারে, টানা ১৩ বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ভাবনী দেশের মর্যাদা পেয়ে আসছে সুইজারল্যান্ড। এর নৈপথ্যে রয়েছে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবধর্মী গবেষণা ও সৃজনশীলতা চর্চা। কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ১০০-এর মধ্যে থাকা বিদ্যাপীঠগুলো হলো—ইটিএইচ জুরিখ (৭), ইকোল পলিটেকনিক ফেডারেল ডি লোস্যান (৩৬) ও ইউনিভার্সিটি অব জুরিখ (৯১)।
জীবনযাত্রা যথেষ্ট ব্যয়বহুল হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের অষ্টম শিক্ষার্থীবান্ধব শহরটি হচ্ছে সুইজারল্যান্ডের বৃহত্তম নগরী জুরিখ। প্রতিবারের মতো ২০২৪-এও পৃথিবীর শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষ ১০-এ রয়েছে সুইজারল্যান্ড (৬)। বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত জীবনযাত্রার দেশগুলোর মধ্যে পঞ্চম সুইজারল্যান্ড।
এ ছাড়া পরিবেশের দিক থেকেও এগিয়ে স্থলবেষ্টিত দেশটি। মাত্র ২৩ দশমিক ৩ পলিউশন ইনডেক্স নিয়ে নিরাপদ দেশের তালিকায় ১০ নম্বরে সুইজারল্যান্ড।
ইটিএইচ জুরিখ, ইকোল পলিটেকনিক ফেডারেল ডি লোস্যান, ইউনিভার্সিটি অব জুরিখ, ইউনিভার্সিটি অব ব্যাসেল, ইউনিভার্সিটি অব বার্ন, ইউনিভার্সিটি অব জেনেভা, ইউনিভার্সিটি অব লোস্যান, ইউএসআই ইউনিভার্সিটি ডেলা স্ভিজ্জেরা ইতালিয়ানা, ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট গ্যালেন ও ইউনিভার্সিটি অব ফ্রিবুর্গ।
হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট, বিজনেস অ্যান্ড ফাইন্যান্স, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিসিন অ্যান্ড হেলথকেয়ার, আইন, অ্যাপ্লাইড ম্যাথমেটিকস ও সাংবাদিকতা।
প্রধানত দুটি মৌসুমে ভর্তির কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। একটি হচ্ছে ফল ও অপরটি স্প্রিং। ফলের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হয় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এরপর এ আবেদনগুলো যাচাইয়ের ভিত্তিতে ভর্তি শুরু হয় সেপ্টেম্বর থেকে। অপর দিকে মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন নেওয়া হয় স্প্রিং-এ, যার প্রক্রিয়া পরিপূর্ণ হয় ফেব্রুয়ারি থেকে ভর্তি শুরুর মাধ্যমে। দুটি ভর্তি মৌসুমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে ফল। কেননা এ সময় অন্য সময়ের তুলনায় আবেদনের জন্য বেশিসংখ্যক বিষয় পাওয়া যায়। এ আবেদনগুলো কোনো কেন্দ্রীয় সিস্টেমের মাধ্যমে নেওয়া হয় না। শিক্ষার্থীদের সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।
সুইস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ মেয়াদে পড়াশোনার জন্য ডি–টাইপ ভিসার আবেদন করতে হয়। এই ভিসা ক্যাটাগরিতে ৯০ দিন বা ৩ মাসের বেশি সময় সুইজারল্যান্ডে থাকার অনুমতি মেলে। আবেদনপত্রসহ সমুদয় কাগজপত্র জমা প্রদানের জন্য সশরীর সুইস দূতাবাসে উপস্থিত হতে হয়। সেখান থেকে নথিগুলো যাচাইয়ে সুইজারল্যান্ড ক্যান্টন অভিবাসনকেন্দ্রে পাঠানো হয়।
* ভিসা ডি–টাইপের মেয়াদ নির্বাচিত প্রোগ্রামের সময়কালের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকে। যেমন স্নাতকের ক্ষেত্রে ১ থেকে ৪ বছর এবং স্নাতকোত্তরের জন্য ২ থেকে ৬ বছর। এ অনুমতির মধ্যে কিন্তু অন্য শেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণের সুবিধা আওতাভুক্ত নয়। তার জন্য আলাদা করে শেনজেন ভিসা নিতে হবে, যার ক্যাটাগরি হচ্ছে সি-টাইপ। নিম্নের লিঙ্ক দুটিতে থাকা ফর্মের যেকোনোটিতে ভিসা ডি-এর জন্য আবেদন করা যাবে:
https://www.sem.admin.ch/dam/data/sem/einreise/visumantragsformulare/visumantrag-visumd-en-de.pdf
অথবা
https://www.sem.admin.ch/dam/data/sem/einreise/visumantragsformulare/visumantrag-visumd-fr-en.pdf
ভিসার যাবতীয় নথি জমা দিতে যাওয়ার আগেই মেইলের ([email protected]) মাধ্যমে দূতাবাসে সাক্ষাতের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। ঠিকানা: বে’স এজওয়াটার, অষ্টম তলা, প্লট ১২, নর্থ এভিনিউ, গুলশান ২, ঢাকা-১২১২।
·নথিগুলো যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ঠিক সেভাবেই ক্রমানুসারে সাজিয়ে একসঙ্গে ক্লিপ করতে হবে (স্ট্যাপল করা যাবে না)। কাগজপত্রের এক সেট আসল এবং দুই সেট ফটোকপি মিলে মোট তিন সেট জমা দিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ মূল কাগজগুলো যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থীকে ফেরত দেওয়া হবে।
ভিসা নিয়ে সুইজারল্যান্ড পৌঁছার প্রথম ১৪ দিনের মধ্যে রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। এ পারমিটের ওপর ভিত্তি করে পরে সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, বাসস্থান নির্ধারণসহ দৈনন্দিন জীবনযাত্রার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।
রেসিডেন্স পারমিট নিতে হবে শিক্ষার্থী যে শহরে থাকবেন, সেখানকার স্থানীয় ক্যান্টন অভিবাসন অফিস থেকে। বিভিন্ন বিদেশি নাগরিকদের জন্য এই পারমিটের ক্যাটাগরি ভিন্ন হয়ে থাকে। সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বি–টাইপের জন্য আবেদন করবেন। পারমিটের মেয়াদ থাকে সাধারণত এক বছর এবং তারপর এটি নবায়ন করা যায়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অধ্যয়নের বিষয়–নির্বিশেষে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য প্রতি সেমিস্টারে খরচ হতে পারে গড়ে ৭৩০ থেকে ৯৫০ ফ্রাঙ্ক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি ১ লাখ ৩ হাজার ২৬ টাকা থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ টাকার মতো।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর ও মাস্টার্সের জন্য বার্ষিক অধ্যয়ন ফি গড়ে ১ থেকে ২ হাজার ফ্রাঙ্ক। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ফি হতে পারে ১০ থেকে ২০ হাজার ফ্রাঙ্ক।
পিএইচডির জন্য বাজেট রাখতে হবে (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে) ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ফ্রাঙ্ক। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ব্যয় গিয়ে দাঁড়াবে ৫ থেকে ১০ হাজার ফ্রাঙ্কে।
জীবনযাত্রার খরচের নিরীখে পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ সুইজারল্যান্ড। অবশ্য দেশটির বিভিন্ন শহরে এই বাজেটের তারতম্য ঘটে। সবচেয়ে দামি শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে জুরিখ ও জেনেভা। অন্যদিকে বার্ন ও লোসানে জীবনযাত্রার খরচ মোটামুটি সাশ্রয়ী।
লিপস্কলার (ভারতীয় ওভারসিজ এডুকেশন কনসালটেন্স) এবং নাম্বিও (ওয়ার্ল্ড স্ট্যাটস ডেটাবেজ) অনুসারে, প্রধান সুইস শহরগুলোতে গড়পড়তায় মাসিক জীবনযাত্রার খরচ হতে পারে—
বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ, অনুদান ও আর্থিক সহায়তা হিসেবে সুইস সরকার প্রতিবছর প্রায় ২০০ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক বরাদ্দ রাখে। লিপস্কলারে তথ্যমতে, এগুলোর মধ্যে প্রসিদ্ধ স্কলারশিপগুলো হলো—
স্টুডেন্ট ভিসার আওতায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সেমিস্টার চলার সময়ে প্রতি সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি পান। আর নানা উপলক্ষে ছুটির দিনগুলোতে ফুলটাইম কাজ করা যায়। লিপস্কলারের তথ্যানুসারে, সর্বাধিক চাহিদাসম্পন্ন খণ্ডকালীন চাকরি ও ঘণ্টাপ্রতি মজুরির তালিকা—
তথ্যসূত্র: ইউএনবি