নাদিরের সঙ্গে দেখা হলে কখনো তাঁর মুঠোফোন নম্বর চাইবেন না। চাইলেও অবশ্য পাবেন না। কারণ, তাঁর নির্দিষ্ট কোনো মুঠোফোন নম্বর নেই। তার চেয়ে বরং চাইতে পারেন হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর। কারণ, এই মাধ্যমেই সহজে তাঁকে পাওয়া যায়। গত বছর মালদ্বীপ থেকে ফেরার বিমানে যখন তাঁর সঙ্গে আড্ডা জমে, ফোনের পেছনের কভার খুলে দেখালেন এক ডজনের বেশি সিমকার্ড। বললেন, ‘যখন যে দেশে যাই, অল্প সময়ের জন্য এসব নম্বর তখন সচল হয়।’
পুরো নাম নাদির নিবরাস। তবে ট্রাভেল ভ্লগ দুনিয়ায় সবাই তাঁকে ‘নাদির অন দ্য গো’ নামেই চেনেন বেশি। ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলা ও ইংরেজি ভ্লগ বানিয়ে এরই মধ্যে তিনি হয়ে উঠেছেন দারুণ জনপ্রিয়। ২০১৬ সালে ইউটিউবে চ্যানেল খুলে ভিডিও আপলোড শুরু করলেও সেটা ছিল নিতান্তই শখের কাজ।
২০২০ সালে করোনার ঘরবন্দী সময়ে মনোযোগ দেন ট্রাভেল চ্যানেলে। এর পর থেকেই পরিচিতি পেতে শুরু করেন। গত বছর সেরা ট্রাভেল ভ্লগ বিভাগে নাদির পেয়েছেন ব্লেন্ডারস চয়েস-দ্য ডেইলি স্টার ওটিটি অ্যান্ড ডিজিটাল কনটেন্ট অ্যাওয়ার্ড ২০২১।
যাঁরা ভ্রমণ ভালোবাসেন, তাঁরা তো বটেই, ইতিহাসপ্রেমীরাও দেখেন নাদিরের ভিডিও। কারণ, কোনো দেশ বা জায়গা নিয়ে ভিডিও বানানোর সময়, সেখানকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সহজ ও সঠিকভাবে উপস্থাপন করেন নাদির। আর এই কাজ করতে বিস্তর পড়াশোনা করতে হয় তাঁকে। অনেক সময় পর্যটকদের ১০০–২০০ দেশ ভ্রমণের খবর শোনা যায়। কিন্তু এ রকম ভ্রমণে সেই দেশ বা অঞ্চলের গভীরে যাওয়া যায় না। নাদির একটি দেশে গেলে সেখানে দীর্ঘদিন থাকার চেষ্টা করেন। এতে করে সেই অঞ্চলের প্রকৃতি ও মানুষকে নিবিড়ভাবে জানা ও বোঝার সুযোগ ঘটে। এ কারণেই নাদিরের ভিডিওগুলো হয় বিশেষ। একই সঙ্গে তাঁর সাবলীল উপস্থাপনা আর সহজ-সরল হাসি মুগ্ধ করে দর্শকদের। নাদিরের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টার জন্যও যাঁরা মিশবেন, তাঁরাও স্বীকার করবেন, তাঁর মধ্যে একধরনের সারল্য আছে, ভ্লগেও যা দেখা যায়।
নাদিরের জন্ম দিনাজপুরে। তবে এখন মা, বাবা ও বোন থাকেন ঢাকায়। ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে ও এবং এ লেভেল করে ২০১০ সালে নাদির চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে যন্ত্রকৌশলে স্নাতক ও ডেটা সায়েন্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন। পিএইচডি শুরু করলেও এখন আর শেষ করার ইচ্ছা নেই। এখন ভ্রমণেই তাঁর সব ধ্যান–জ্ঞান। ছোটবেলা থেকে মা–বাবার সঙ্গে দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করেছেন, এখন ঘুরছেন একা।
মাস দুই আগে ফিলিপাইনে গেছেন নাদির। থাকবেন জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এরপর যাবেন ইউরোপে। সেখানেই বিভিন্ন দেশ আর শহরে নভেম্বর পর্যন্ত কাটিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা। সেখান থেকে বছরের শেষ দিকে আবার ফিরবেন দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয়। বাংলাদেশে কবে আসবেন, সেটা এখনো নির্দিষ্ট নয়। যাঁর পায়ের তলায় শর্ষে, তাঁকে দেশে পাওয়ার জন্য তো এমন অপেক্ষা করতেই হবে।
প্রথম আলো