যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বৈধ ভিসাধারী বিদেশিদের জন্য নতুন এক কঠোর অভিবাসন নীতি ঘোষণা করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ‘Catch and Revoke’ বা ‘ধরো এবং বাতিল করো’ শীর্ষক এই নীতির আওতায় বিদেশি নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আইন লঙ্ঘন করলে, এমনকি সামান্য ট্রাফিক লঙ্ঘনের মতো অপরাধ হলেও তাদের ভিসা তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করা হতে পারে। এই ঘোষণা দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি ২ মে নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন :
এখন থেকে একবার অপরাধ করলেই ভিসা বাতিল-এই এক স্ট্রাইক নীতি কার্যকর। সরকার যখনই কোনো বিদেশিকে আমাদের আইন ভঙ্গ করতে ধরবে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভিসা রদ করব।
এই নীতির বিস্তারিত প্রথম প্রকাশ পায় ৩০ এপ্রিল রুবিওর স্বাক্ষরিত এক নিউজলেটারে। সেখানে বলা হয়, গৃহসহিংসতা, শারীরিক হামলা ইত্যাদি গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত অভিবাসীদের লক্ষ্য করে এই নীতি প্রণয়ন করা হলেও এতে অন্যান্য সাধারণ অপরাধের কথাও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। কিন্তু প্রশাসন এখন পর্যন্ত অপরাধের নির্দিষ্ট তালিকা প্রকাশ করেনি, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিবাসন বিশ্লেষকেরা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও আরও বলেন, ভিসা হলো একটি সুযোগ, এটি অধিকার নয়। যেসব বিদেশি নাগরিক আমাদের দেশে এসে আইন ভঙ্গ করছেন, তারা এই সুযোগের যোগ্য নন।
এই নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা, পর্যটন ও বিনিয়োগ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কাটো ইনস্টিটিউটের ইমিগ্রেশন স্টাডিজের পরিচালক ডেভিড বিয়ের একে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত অভিবাসন আইনের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই নীতির মাধ্যমে ধনী, শিক্ষিত ও মেধাবী বিদেশিরা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে নিরুৎসাহিত হবেন। যদি একজন বিদেশির জীবন একটি স্পিডিং টিকিট বা রাস্তার পাশে শরবত বিক্রির অভিযোগে ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে কে আসবে এই দেশে?
নতুন এই নীতির বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভিসাধারী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করার ঘটনাও ঘটেছে, এমনকি ট্রাফিক লঙ্ঘনের দায়ে অনেক ছাত্রছাত্রীকে দেশে ফেরত পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয়েছে।
আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো আরন রেইখলিন-মেলনিক বলেন, ‘এখন তারা বলছে, সবাইকেই এই কঠোর নীতির আওতায় আনা হবে। এই প্রবণতা আমাদের অভিবাসন-ব্যবস্থাকে ভয়ংকরভাবে একপাক্ষিক ও অমানবিক করে তুলছে।’
তবে ব্যাপক সমালোচনা ও একাধিক আদালতে মামলা দায়েরের পর প্রশাসন সম্প্রতি সারা দেশে শত শত শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। এই ঘটনাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের আইনি ব্যবস্থা এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর গুরুত্ব আবারও সামনে এনে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করার মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন ভোটারদের একটি কঠোর অবস্থানের বার্তা দিতে চাইছে। তবে অভিবাসী, শিক্ষার্থী এবং বৈধ ভিসাধারীদের জন্য এই নীতি গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা সকল ভিসাধারীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত অবস্থার মুখোমুখি হলে আইনি সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।