মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৬ পূর্বাহ্ন

সামনেই শীত। সময় চুটিয়ে ঘুরতে যাওয়ার

  • আপডেট সময় শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৪

১. মহারাষ্ট্র:  ইতিহাসের পাশাপাশি চাই নাইট লাইফ আর অ্যাডভেঞ্চার? তাহলে এর স্বাদ পেতে গেলে যেতেই হবে মহারাষ্ট্রে। মুম্বইয়ের ‘হ্যাপেনিং’ নাইট লাইফ, পার্টি থেকে শুরু করে মহাবালেশ্বরের অ্যাডভেঞ্চারাস প্যারাগ্লাইডিং, এলিফ্যান্টার অপূর্ব ভাস্কর্যের টানে প্রতিবছরই রোমাঞ্চ-প্রিয় বিদেশি দম্পতিরা ভিড় জমান ভারতের ‘বাণিজ্য রাজধানী’ এই নগরে। তাছাড়া সাগরপাড়ের বলিউড ইন্ডাস্ট্রিকে নিয়েও সকলের মনে রয়েছে অপার কৌতূহল। যুগে-যুগে বহু রাজা-বাদশাহই ভারতের পশ্চিম উপকূলের সমুদ্রপথে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করতে চেয়ে দখল করতে চেয়েছেন এই অঞ্চল। আর প্রতিবারই তাঁরা তাঁদের স্থাপত্য-ভাস্কর্যের মধ্যে দিয়ে দাগ কেটে গিয়েছেন ভারতেতিহাসের পাতায়। এমনই এক স্থান হল মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গাবাদ জেলা। ইউনেস্কোর ওয়র্ল্ড হেরিটেজ তকমাপ্রাপ্ত অজন্তা-ইলোরার গুহাগুলি ছাড়াও এখানে রয়েছে দৌলতাবাদ দুর্গ, বিবি কা মকবারা। এছাড়া টুক করে ঘুরে আসা যায় খান্ডালা-লোনাভালাতেও।

২. তামিল নাড়ু: হিসেব মতে, মহারাষ্ট্রের পরেই বিদেশি পর্যটকেরা পাড়ি জমান ভারতের যে-রাজ্যে, সেটি হল তামিল নাড়ু। রাজধানী শহর চেন্নাই থেকেই অদূরে মেরিনা বিচ ও মহাবলীপুরম তামিল নাড়ুর অন্যতম আকর্ষণ কেন্দ্র। মহাবলীপুরমের বিখ্যাত রথ মন্দিরগুলির স্থাপত্যশৈলীর টানে আজও নানা দেশ থেকে লক্ষ-লক্ষ মানুষ ভিড় জমান এই শহরে। তবে মধুচন্দ্রিমার রোমান্টিকতা-যাপনে বিদেশিরা বেছে নেন তামিল নাড়ুর বিখ্যাত শৈলশহর উটিকে। কোনও অ্যাডভেঞ্চারাস দম্পতি যদি ট্রেকিং, মাউন্টেন বাইকিং, ক্যাম্পিং করতে চান, তাহলে কিন্তু তাঁকে আসতেই হবে এখানে। উটি এর আসল মজা লুকিয়ে বোধহয় নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ের যাত্রাপথে। পাহাড়ের গা চিরে বানানো এই রেলপথের টানেল ভরা যাত্রাপথের দৃশ্য এককথায় অনবদ্য। এখানকার আর এক আকর্ষণ হোম-মেড চকোলেট। প্রকৃতির মজা শান্তিতে উপভোগ করার জন্য নব্যবিবাহিত বিদেশি দম্পতিদের কাছে কোদাইকানালও খুব জনপ্রিয়। তামিল নাড়ুর অন্যতম আকর্ষণ ‘সিটি অফ টেম্পল’ মাদুরাই।

৩. দিল্লি: ভারতের রাজধানী এই শহর বর্তমানে ‘পলিউশন ক্যাপিটাল অফ দ্য ওয়র্ল্ড’ আখ্যা পেলেও তাতে কিন্তু বিদেশি পর্যটকদের আসা একটুও কমেনি। পুরনো দিল্লির খানদানি বাদশাহি সংস্কৃতি, আদবকায়দা, খানাপিনা চেখে দেখতে প্রতিবছরই তাঁরা শীতকালে দিল্লিতে ভিড় জমান। ইন্ডিয়া গেট, লাল কেল্লা, রাষ্ট্রপতি ভবন, সংসদ ভবন, লোটাস টেম্পল, মুঘল গার্ডেন, হুমায়ুনের সমাধি, লোদি গার্ডেন, জামা মসজিদ, কুতুব মিনার, যন্তর মন্তর, পুরনো কেল্লা, সফদরজংয়ের সমাধি, রাজঘাট, চিড়িয়াখানা, হ্যান্ডিক্র্যাফট মিউজয়ম, চাঁদনি চক, পরাঠেওয়ালি গলি… দিল্লির অলিতে-গলিতে যেন ছড়ানো মধ্যযুগীয় ইতিহাসের এক-একটি কিসসা আর ঔপনিবেশিক শাসনের চিহ্ন। এছাড়া শুধু দিল্লি নয়, এখান থেকে অনেকেই দিন দুয়েকের সফরে পাড়ি দেন অদূর আগ্রায়, তাজমহল, আগ্রা কেল্লা, ফতেপুর সিক্রি দেখতে। কেউ-কেউ আবার মথুরা, বৃন্দাবন, বারাণসীও ঘুরে দেখে ফেলেন।

৪. রঙিন রাজস্থান: বাঙালি মাত্রেই রাজস্থান বললেই মনে আসবে ‘সোনার কেল্লা’র নাম। তবে বাঙালি ব্যতিরেকে বিদেশি পর্যটকদের কাছেও রাজস্থানের পরিচিতি কেল্লার রাজ্য বলেই। রাজস্থান কিন্তু ভীষণ কালারফুল। কেউ যদি হানিমুনে লাক্সারি ভ্যাকেশন কাটাতে চান, তাহলে রাজস্থানই হতে পারে তাঁর প্রথম পছন্দ। রাজস্থানে দেখার জায়গা প্রচুর। তাছাড়া এর সংস্কৃতি, ইতিহাস, তার গ্র্যাঞ্জার রাজস্থানকে অনন্যসাধারণ করে তুলেছে। ‘ব্লু সিটি’ যোধপুর, ‘পিঙ্ক সিটি’ জয়পুর, ‘লেক সিটি’ উদয়পুর… সবক’টিতেই বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা লেগে থাকে। এই রাজস্থানেই রয়েছে ভারতের একমাত্র মরুভূমি থর। জয়সলমেরের ডেজার্ট ক্যাম্পে রাত কাটানো আর উটের পিঠে চড়ে মরুভূমি পাড়ি দেওয়া, এ অভিজ্ঞতাও অনন্য। আবার এই মরুভূমির শুখা রাজ্যেই রয়েছে রণথম্বোর ন্যাশনাল পার্ক, যেখানে ঘন সবুজ অরণ্যে ইতিউতি দেখা মেলে বাঘের। কেউ-কেউ যান অজমেঢ়ের দরগাতেও। রাজস্থানি হাতের কাজ, জুয়েলারি, স্কাল্পচারের চাহিদাও বিদেশিদের কাছে রয়েছে। অনেক বিদেশি কিন্তু শুধুমাত্র ছবি তুলবেন বলেই রাজস্থানে পাড়ি জমান।

৫. কেরল: বলা চলে কেরলের সূত্রেই ইউরোপীয়দের সঙ্গে পরিচয় ভারতের, সেই ১৪৯৮ সালে পর্তুগিজ বণিক ভাস্কো-দা-গামার হাত ধরে। তারপরেই বহু বছর ধরেই বহু ইউরোপীয় বণিকদের নজর ছিল দক্ষিণ ভারতের এই ছোট্ট রাজ্যটির উপর। বর্তমানেও টুরিস্ট স্পট হিসেবে কেরল বরাবরই বিদেশি পর্যটকদের কাছে পছন্দের। মধুচন্দ্রিমায় যারা একটু রোমান্স চান, তাঁরাই ‘ভগবানের আপন দেশ’-কে তাঁদের প্রিয় হানিমুন ডেস্টিনেশন হিসেবে বেছে নেন। আরব সাগরের নীল জলের সঙ্গে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার ঘন সবুজ… অ্যাডভেঞ্চার হানিমুনের জন্যেও কেরল বিদেশিদের কাছে বরাবরের আকর্ষণের। এছাড়া কোচি ও ত্রিবান্দ্রামের বিখ্যাত আয়ুর্বেদিক স্পা-এর টানও যে অমোঘ। আলেপ্পির ব্যাকওয়াটারে হাউস বোটে দিনযাপন, কোল্লাম, কোভালামের সমুদ্রতট, ওয়ানাডের ঘন সবুজ জঙ্গল আর মুন্নারের টি এস্টেট, পেরিয়ার টাইগার রিজার্ভ, আর কেরলের বিখ্যাত মশলার বাগান… সব মিলিয়ে কেরলে দেখার জায়গা নেহাত কম নয়। এছাড়া কথাকলি নৃত্য পরিবেশন দেখতেও পর্যটকেরা কেরল কলামণ্ডলম বা ফোকলোর মিউজয়মের মতো জায়গায় ভিড় জমান। রয়েছে কেরলের মালাবার কুইজিনও। ফলে ঘোরার ফাঁকে ইডিয়াপ্পম, কেরালা প্রন কারি বা মালাবার পরোটায় রসনাতৃপ্ত করতে চাইলে সেটারও অভাব হবে না।

৬. গোয়া:  কথায় বলে, গোয়ায় গেলে আপনি নাকি ভারতীয় টুরিস্টদের চেয়ে বিদেশি টুরিস্টদেরই বেশি দেখতে পাবেন! কথাটা যে নেহাত মিথ্যে নয়, তা দিব্যি টের পাওয়া যায় গোয়ার ক্যালাঙ্গুটে, পালোলেমের মতো বিখ্যাত সি বিচগুলিতে পা রাখলেই। রোম্যান্স আর অ্যাডভেঞ্চার পার্টির মজা উপভোগ করতে হলে গোয়ার মতো জায়গা কিন্তু আর দু’টি নেই। বিদেশি পর্যটকদের কাছে ‘পার্টিহাব’ হিসেবে পরিচিত গোয়া। মহারাষ্ট্র থেকে অনতিদূরেই হওয়ার কারণে পর্যটকরা সহজেই মহারাষ্ট্র সফর সেরে পাড়ি জমাতে পারেন গোয়ায়। বিচের ছোট্ট শ্যাকগুলিতে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্পগুজব, সমুদ্রের ধারে সান বাথ নিয়ে ট্যানড হওয়া ছাড়াও গোয়ার অন্যতম আকর্ষণ হল বিচের নাইট পার্টি। এছাড়া গোয়ার নানারকম দুঃসাহসিক অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের চাহিদাও বিদেশিদের কাছে প্রচুর।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com