শুল্কমুক্ত সুবিধায় সাবেক সংসদ সদস্যদের (এমপি) জন্য আমদানি করা ৪৪টি বিলাসবহুল গাড়ি আটকে দিয়েছে শুল্ক বিভাগ। সরকার পতনের পর তাদের সংসদ সদস্যপদ না থাকায় এগুলো আটকে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খালাসের অপেক্ষায় থাকা এসব গাড়ির জন্য আমদানিকারকরা শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে না। তাদের স্বাভাবিক হারে শুল্ককর পরিশোধ করে এসব গাড়ি খালাস করতে হবে।
আজ শনিবার দেশের অন্যতম জাতীয় দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। এনবিআরের সার্ভারের তথ্য ও সংশ্লিষ্ট তিন কাস্টম স্টেশন কমিশনারদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এনবিআরের তথ্য বলছে, গত ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে সরকার পতনের আগে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ৭টি গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে কাস্টমস। চট্টগ্রাম বন্দর, মংলা বন্দর ও কমলাপুর আইসিডি দিয়ে আমদানি করা এসব গাড়ির খালাসের দায়িত্বে ছিলেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নাভানা লিমিটেড, গোল্ডেন স্টার এজেন্সি এবং ছেরি ইন্টারপ্রাইজসহ ছয়-সাতটি প্রতিষ্ঠান। তবে সেগুলো এখনো সড়ক ও পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে নিবন্ধন করা হয়নি।
এই ৭ গাড়ির বিষয়ে আইন মন্ত্রণায়ের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এগুলো আমদানি করেছেন ক্রিকেটার ও মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের ফয়জুর রহমান, নাটোর-১ আসনের আবুল কালাম, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের মুজিবুর রহমান মঞ্জু এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরি। বাকি দুই সাবেক সংসদ সদস্যের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়নি।
জানা গেছে, বর্তমানে খালাসের অপেক্ষায় থাকা এই ৪৪ গাড়িসহ মোট ৫১ গাড়ির (অধিকাংশই টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ও ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো) আমদানি মূল্য প্রায় ৬১ কোটি টাকা, যার অধিকাংশই জাপান ও সিঙ্গাপুর থেকে আনা হয়েছে। গাড়িগুলোর ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ৩০০০-৪০০০ সিসি। এর মধ্যে সবচেয়ে কম দামের ৩৩৪৬ সিসির ল্যান্ড ক্রুজারটি আমদানি করা হয়েছে প্রায় ৯৮ লাখ টাকায়। গাড়িটির স্বাভাবিক শুল্ককর হার ৮২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। শুল্ক দিতে গেলে গাড়িটির দাম পড়বে ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা।
আইন প্রণেতাদের খুশি করতে ১৯৮৭ সালে এইচ এম এরশাদের শাসনামলে শুল্কমুক্ত গাড়ি সুবিধা চালু করা হয়েছিল। ১৯৮৮ সালের ২৪ মে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর অধীনে সংসদ সদস্যরা প্রতি পাঁচ বছরে একবার শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করতে পারেন। সেভাবেই এতোদিন গাড়ি কিনতেন সংসদ সদস্যরা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সংসদ সদস্যদের গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল এমপিদের গাড়ি আমদানিতে কর মওকুফের কারণে গত ১৫ বছরে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে ৫১৪৭ কোটি টাকা। তবে তা গৃহীত হয়নি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান গৌতম চন্দ্র পাল গণমাধ্যমকে বলেন, এমপি সুবিধায় আনা গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে আমরা এনবিআরের ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাই করি। এনবিআর থেকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ছাড় পেলে আমাদের এখানে রেজিস্ট্রেশন করতে কোনো বাধা নেই। তবে সংসদ ভেঙে দেওয়ায় এখন এমপি সুবিধায় আনা ভিন্ন নামে রেজিস্ট্রেশন হওয়ার সুযোগ আছে। সে বিষয়ে বিআরটিএ সতর্ক থাকবে এবং প্রয়োজনে এনবিআরের মতামত নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান জানান, সম্প্রতি যেসব গাড়ি খালাস হয়েছে তা ৬ আগস্টের আগে শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন ছিল। ফলে আইনানুগভাবে তা আটক করার সুযোগ ছিল না। তবে যেসব গাড়ি ৬ আগস্টের পরে আমদানি হয়েছে তা খালাসের সুযোগ নেই। এ ধরনের গাড়ি খালাস করতে হলে শুল্ককর পরিশোধ সাপেক্ষে খালাস করতে হবে।