সান মারিনো (San Marino) পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রজাতন্ত্র এবং ইউরোপের একটি ক্ষুদ্র দেশ। এটি ইতালির মধ্যে সম্পূর্ণভাবে বেষ্টিত একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিক থেকে এটি একটি অনন্য স্থান।
সান মারিনো দক্ষিণ ইউরোপে, ইতালির উত্তরে অবস্থিত। এটি মাত্র ৬১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি দেশ, যা বিশ্বের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র। চারপাশে রিমিনি, এমিলিয়া-রোমাগ্না এবং মার্কে অঞ্চল ঘিরে রেখেছে। দেশের সর্বোচ্চ স্থান মাউন্ট টাইটানো, যেটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।
সান মারিনোর ইতিহাস শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ৩০১ সালে, যখন এক খ্রিস্টান পাথর কাটার শ্রমিক “সেন্ট মারিনাস” এই পাহাড়ি এলাকায় আশ্রয় নেন এবং একটি ছোট গির্জা প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকেই ধীরে ধীরে একটি স্বাধীন কমিউন গড়ে ওঠে, যা সময়ের সাথে একটি প্রজাতন্ত্রে রূপ নেয়।
বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র যেখানে রাজা, রানী, বা সাম্রাজ্য দ্বারা শাসিত ছিল, সান মারিনো সেখানে একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে টিকে ছিল শতাব্দীর পর শতাব্দী।
সান মারিনো একটি সংবিধানিক প্রজাতন্ত্র। দেশটি পরিচালিত হয় দুইজন ক্যাপ্টেন রেজেন্ট (Captain Regents) দ্বারা, যারা ছয় মাসের জন্য নির্বাচিত হন। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সরকার ব্যবস্থা, যা এখনো কার্যকর রয়েছে।
এছাড়া, দেশের আইন প্রণয়নকারী সংসদকে বলা হয় গ্র্যান্ড অ্যান্ড জেনারেল কাউন্সিল (Grand and General Council), যেখানে ৬০ জন সদস্য রয়েছেন।
সান মারিনোর জনসংখ্যা প্রায় ৩৪,০০০ (২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী)। বাসিন্দারা মূলত ইতালীয় ভাষায় কথা বলেন এবং তাদের সংস্কৃতি, পোশাক ও খাদ্যেও ইতালির প্রভাব রয়েছে। তবে জাতীয় পরিচয়ের ক্ষেত্রে তারা নিজেদের গর্বিত সান মারিনোবাসী বলে মনে করেন।
সান মারিনোর অর্থনীতি প্রধানত পর্যটন, ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক্স এবং হালকা শিল্পের উপর নির্ভরশীল। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এই ক্ষুদ্র দেশটি দেখতে আসেন। এখানে কর হার অনেক কম, তাই আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের কাছে এটি আকর্ষণীয় স্থান।
সান মারিনো ছোট হলেও দারুণ সুন্দর। এর কিছু উল্লেখযোগ্য স্থান:
গুইতা, সেস্টা ও মন্তালে টাওয়ার – মধ্যযুগীয় দুর্গ যেগুলো মাউন্ট টাইটানো পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে।
বেসিলিকা দি সান মারিনো – সেন্ট মারিনাসের স্মরণে নির্মিত গির্জা।
স্টেট মিউজিয়াম – যেখানে প্রাচীন শিল্পকর্ম, অস্ত্র ও ঐতিহাসিক দলিল রয়েছে।
বর্ডারলেস ভিউ – পাহাড় থেকে ইতালির বিস্তৃত অঞ্চল দেখা যায়।
সান মারিনোবাসীরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও স্বাধীনতার ইতিহাস উদযাপন করেন বিভিন্ন উৎসবে। সবচেয়ে বড় উৎসব হলো:
সান মারিনো জাতীয় দিবস (৩রা সেপ্টেম্বর) – দেশটির স্বাধীনতার দিন, উৎসব ও ঐতিহ্যবাহী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।
সান মারিনো একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হলেও ইতিহাস, স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক গৌরবে ভরপুর। ইউরোপের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই দেশটি তার গর্বিত ইতিহাস ও রাজনৈতিক পরিপক্বতা দিয়ে বারবার প্রমাণ করেছে, আকারে ছোট হলেও জাতিগত চেতনায় তারা বিশাল।