যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, জার্মানি, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া ছয় রাষ্ট্রদূতের চুক্তি বাতিল হচ্ছে। এরই মধ্যে তাঁদের দেশে ফিরতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মালদ্বীপে প্রেষণে নিযুক্ত হাইকমিশনারকে দেশে ফিরতে বলা হয়েছে।
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা প্রজ্ঞাপনে সাত রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই ছয়টি দেশ ছাড়াও আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ছয়টি দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পদ খালি হচ্ছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারত, যুক্তরাজ্য, নিউইয়র্কে জাতিসংঘে স্থায়ী মিশন, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের অবসরে যাওয়ার কথা। সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র গতকাল প্রথম আলোকে জানিয়েছে, ওই ছয় মিশনে দায়িত্বপালনরত পেশাদার কূটনীতিকদের চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না।
সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়েছিল। তারই আলোকে চুক্তিতে থাকা ছয় রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট্রসচিব
কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, গত সপ্তাহে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে খালি হতে যাওয়া এসব মিশন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই দ্রুত এসব পদ পূরণ করা দরকার।
প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ১১ আগস্ট বিভিন্ন পদে থাকা চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যেসব নিয়োগ নিয়ে বেশি বিতর্ক আছে, সেগুলো শিগগিরই বাতিল করা হবে। আর পর্যায়ক্রমে সব চুক্তি বাতিল করা হবে।
দেশে ফেরার নির্দেশ পাওয়া ছয় রাষ্ট্রদূতের চুক্তি বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়েছিল। তারই আলোকে চুক্তিতে থাকা ছয় রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল হচ্ছে বলে ধরে নেওয়া যায়।
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ডি এম সালাহ উদ্দিন মাহমুদ স্বাক্ষরিত পৃথক প্রজ্ঞাপনে রাষ্ট্রদূতদের ঢাকায় ফেরার এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে ফিরতে বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, রাশিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর পেশাদার কূটনীতিক। স্বাভাবিক চাকরির মেয়াদ শেষে চুক্তিতে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
জাপানের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমদ ও জার্মানির রাষ্ট্রদূত মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ছিলেন সরকারের সাবেক সচিব। সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক। এ ছাড়া প্রেষণে মালদ্বীপে হাইকমিশনার হিসেবে নিযুক্ত নৌবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত আসতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া আলাদা আদেশে কয়েকজন কর্মকর্তাকে দেশে ফিরতে বলা হয়েছে। তাঁরা হলেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রেষণে নিযুক্ত আরিফা রহমান রুমা এবং একই দূতাবাসে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া অহিদুজ্জামান নুর, কানাডা হাইকমিশনে অপর্ণা রানী পাল ও মিথিলা ফারজানা।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নতুন করে কাউকে চুক্তিতে নিয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় চুক্তি ও চাকরির স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ হচ্ছে এমন ১০ রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফেরানোর প্রস্তুতি চলছিল। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জার্মানিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও জাপানের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমদকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে সরকার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। তাঁদের চুক্তি এক বছর করে বাড়ানোও হয়। ফলে বাকিদের ফেরানোর প্রক্রিয়া থেমে যায়।
রাষ্ট্রদূতদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও নিয়মিত চাকরি শেষে দায়িত্বের মেয়াদ বাড়ানোর ফলে মাঝারি পর্যায়ের কূটনীতিক, বিশেষ করে রাষ্ট্রদূত পদে দায়িত্ব পালনের জন্য অপেক্ষমাণদের ওপর প্রভাব পড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে ২০১৭ সাল থেকে নিয়মিত চাকরি শেষে দায়িত্বের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর ধারাটি মোটামুটি স্থায়ী হতে শুরু করে। এতে প্রায় সবার মধ্যে চাকরির মেয়াদ শেষে দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার একধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়।
সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন কূটনীতিক এই প্রতিবেদককে চাকরি শেষে দুই বছরের চুক্তিতে রাষ্ট্রদূতদের দায়িত্ব রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের মতে, এভাবে রাষ্ট্রদূতদের চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়ায় যাঁরা রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগের অপেক্ষায় থাকেন, তাঁদের পদায়ন বিঘ্নিত হয়। অর্থাৎ চাকরির মেয়াদ শেষে অতিরিক্ত দুই বছরের চুক্তি না হলে অপেক্ষমাণ কূটনীতিকদের স্বাভাবিক নিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়।