যাত্রাটা শুরু হয়েছিল শিকাগো থেকে, শেষও হয়েছে সেই শিকাগোয় এসে। আর এই পরিক্রমায় পার হয়েছে ১০৮ দিন, ১২ ঘণ্টা এবং ১২ মিনিট। এ সময়ে লায়েল উইলকক্স নামের এক নারী পাড়ি দিলেন ২৯ হাজার ১৬৯ কিলোমিটার বা ১৮ হাজার ১২৫ মাইল। বিমানে, ট্রেনে বা গাড়িতে নয়, উইলকক্স এই পথ পাড়ি দিয়েছেন সাইকেলে করে। যা তাঁকে জায়গা করে দিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। উইলকক্সই এখন সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে বিশ্ব প্রদক্ষিণ করা নারী সাইক্লিস্ট। শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পথে এই আলট্রা-এনডিউরেন্স সাইক্লিস্ট পেছনে ফেলেছে স্কটল্যান্ডের জেনি গ্রাহামকে। বিশ্ব প্রদক্ষিণে যার সময় লেগেছিল ১২৪ দিন ১১ ঘণ্টা।
আলাস্কার ৩৮ বছর বয়সী উইলকক্স শিকাগো থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন এ বছরের ২৮ মে। এরপর চার মহাদেশের ২১ দেশ ঘুরে তিনি আবার শিকাগোয় পৌঁছান গত বুধবার স্থানীয় সময় রাত ৯টায়। যাত্রাপথে তিনি দৈনিক ১৪ ঘণ্টা সাইকেল চালিয়েছেন, যা এখন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্তর্ভুক্তির জন্য যাচাই–বাছাই করা হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে আলট্রা-এনডিউরেন্স সাইক্লিস্টরা এক দিনে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার ক্যালরি পর্যন্ত খরচ করেন।
সাইক্লিং উইকলি ম্যাগাজিনের উত্তর আমেরিকা সম্পাদক অ্যান-মেরি রুক বলেন, ‘তাঁর শারীরিক সহনশীলতা, মানসিক দৃঢ়তা এবং বাইরে বেরিয়ে এই কঠোর প্রচেষ্টাগুলো সম্পন্ন করার যে সংকল্প তা অবিশ্বাস্য। টানা ১০৮ দিন একইভাবে সাইক্লিং করতে অবিশ্বাস্য রকম চেষ্টার প্রয়োজন।’
উইলকক্স যে এমন কিছু করতে পারেন, সেটির প্রমাণ প্রথম দেন ট্র্যান্সঅ্যাম প্রতিযোগিতা জিতে। প্রথম নারী সাইক্লিস্ট হিসেবে ৪ হাজার মাইলের এই প্রতিযোগিতা জেতেন উইলকক্স। ট্র্যান্সঅ্যাম জিততে দুর্গম রকি মাউন্টেন পর্বতের মতো পথও পাড়ি দিতে হয়েছিল তাঁকে।
বিশ্ব পরিভ্রমণ করে উইলকক্স সর্বশেষ যে রেকর্ডটি গড়েছেন, সেটির জন্য গিনেসের কিছু শর্ত মানতে হয়েছে। গিনেসের শর্তানুযায়ী যেখানে শুরু সেখানেই শেষ করতে হয় সাইক্লিং। আর পুরোটা সময় একই দিকে চলতে হয়। একজন রাইডারকে বিমানযাত্রা, ফেরিযাত্রাসহ সব মিলিয়ে ৪০ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। বিষুবরেখা বরাবর পৃথিবীর পরিধি এটাই। সবচেয়ে বড় শর্তটা হলো এই পথে কমপক্ষে ২৮ হাজার ৯৭০ কিলোমিটার সাইক্লিং করতেই হবে।
শিকাগো থেকে সাইকেল চালিয়ে শুরু করে নিউইয়র্ক পর্যন্ত যাওয়ার পর বিমানে করে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে পর্তুগাল যান উইলকক্স। পর্তুগাল থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে যাত্রা করে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম পর্যন্ত যাওয়ার পর দিক পরিবর্তন করে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে যাত্রা করেন। জার্মানি হয়ে আল্পস পাড়ি দিয়ে বলকান উপত্যকা পেরিয়ে তুরস্ক হয়ে জর্জিয়া যাওয়ার পর আবার উড়াল দেন উইলকক্স। জর্জিয়া থেকে বিমানে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে নামার পর অস্ট্রেলিয়ার উপকূল ধরে ব্রিসবেন পর্যন্ত গিয়ে বিমানে তাসমান সাগর পেরিয়ে নিউজিল্যান্ডের এ মাথা থেকে ও মাথা পাড়ি দেন। সেখান থেকে আবারও উড়াল পথে নিজের শহর অ্যাঙ্করেজে যাওয়ার পর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল ধরে দক্ষিণে লস অ্যাঞ্জেলেসের পথ ধরেন উইলকক্স। হলিউড নগরী থেকে এরপর বিখ্যাত ‘রুট ৬৬’ ধরে শিকাগোতে পৌঁছান তিনি।
রেকর্ড গড়া পুরো যাত্রাপথেই সঙ্গী হিসেবে থাকা পার্টনার রুজিল ক্যালাডাইটের সহযোগিতায় নিয়মিতই ভিডিও বানিয়ে ও পডকাস্ট করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিয়েছেন উইলকক্স।
তবে এত কষ্ট করে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েও সেটি খুব বেশি দিন হয়তো উপভোগ করা হবে না উইলকক্সের। তাঁর রেকর্ড যে হুমকির মুখে পড়ে গেছে। ভারতের ২৫ বছর বয়সী আলট্রা সাইক্লিস্ট বেদাঙ্গি কুলকার্নি যে ৬৫ দিনেই ৭ হাজার ৭০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছেন। ভারতীয় এই নারী সাইক্লিস্টও ১১০ দিনের কমে বিশ্ব পরিক্রমণ করাকে পাখির চোখ করেছেন।