গল্পের আগা-মাথা নেই, অভিনয় তথৈবচ। চিত্রনাট্যের মা-বাপ নেই, যখন যা খুশি, হয়ে যাচ্ছে। এমন যেকোনো সিনেমা দেখার পর মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়, ‘এ তো সস্তা বাংলা সিনেমা’।
বাংলা তো বটেই, অনেক দক্ষিণি বা বলিউডি সিনেমা দেখেও এমন মন্তব্য করা দর্শকের সংখ্যা কম নয়। তবে বাংলার চেয়ে বাজেটে কয়েক গুণ এগিয়ে থাকা ফরাসি সিনেমা দেখেও যে বহুল চর্চিত কথাটি কথা মনে আসবে, কে জানত! তা–ও আবার নেটফ্লিক্সের অ-ইংরেজিভাষী সিনেমার বৈশ্বিক তালিকার শীর্ষে আছে ছবিটি!
একনজরে
সিনেমা: ‘অ্যাড ভিতাম’
পরিচালক: রোডলফি লাউগা
অভিনয়ে: গিওম ক্যানে, স্টেফানি কাইয়া
স্ট্রিমিং: নেটফ্লিক্স
ধরন: অ্যাকশন, থ্রিলার
দৈর্ঘ্য: ৯৬ মিনিট
হচ্ছিল ‘অ্যাড ভিতাম’-এর কথা। ১০ জানুয়ারি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। অ্যাকশন থ্রিলার ঘরানার সিনেমা, দৈর্ঘ্যও বেশি নয়। এই সিনেমায় ‘গভীর’ কিছু থাকবে না, সেটা জানা কথাই। তবে হলিউডের চেনা ছকের বাইরে অন্য রকম থ্রিলার দেখার আশা নিয়েই দেখতে বসা। কিন্তু পরিচালক বলা যায় ‘শিক্ষা’ দিয়ে ছেড়েছেন।
ছবিটি বানিয়েছেন রোডলফি লাউগা, প্রধান চরিত্রে ফ্রাঙ্ক হিসেবে পর্দায় দেখা গেছে গিওম ক্যানেকে। গল্প সেই চর্বিতচর্বণ। অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনার জেরে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে চাকরি হারান ফ্রাঙ্ক। তিনি জানতেন না, তাঁর চাকরি খোয়ানোর পেছনে আছে কুখ্যাত এক অপরাধী দল, যাদের হাত ‘অনেক লম্বা’। তবে ঘটনাচক্রে অপরাধীদের একটা মোক্ষম প্রমাণ এসে পড়ে ফ্রাঙ্কের হাতে। সেটি হাতিয়ে নিতে ফ্রাঙ্কের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে অপহরণ করে অপরাধী চক্র। এই ধাঁচের গল্প নিয়ে সারা দুনিয়ায় যে কত সিনেমা হয়েছে, সেটা বোধ হয় গুনে বের করাও কঠিন হবে। সংখ্যাটা এতই বেশি।
নির্মাতা হয়তো ‘জেমস বন্ড’, ‘মিশন: ইমপসিবল’-এর মতো কিছু একটা বানানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সেটা হয়ে গেছে ‘সস্তা বাংলা সিনেমা’।
‘অ্যাড ভিতাম’-এর আক্ষরিক বাংলা করলে হয় ‘জীবনের জন্য’। পরিবারের জন্য একজন মানুষ কতটা মরিয়া হতে পারেন, সেটাই হয়তো দেখাতে চেয়েছেন নির্মাতা। সে চেষ্টায় তিনি যে সর্বতোভাবে ব্যর্থ হয়েছেন বলাই বাহুল্য।
ছবিতে ফ্রাঙ্ক চরিত্রটিই মুখ্য, তিনি প্রায় সব দৃশ্যেই আছেন। সে চরিত্রে গিওম ক্যানের অভিনয়ও মনে রাখার মতো কিছু নয়। মুক্তির পর সমালোচকদের রায়েও ছবিটির দুরবস্থার প্রমাণ মেলে। রটেন টোমাটোজে মাত্র ৪২ শতাংশ সমালোচক ইতিবাচক রেটিং দিয়েছেন, গড় রেটিং ৪ দশমিক ৫।
তবে সমালোচকেরা যা–ই বলুন, সাধারণ জনতা ঠিকই পছন্দ করেছেন সিনেমাটি। নেটফ্লিক্সের অ-ইংরেজিভাষী সিনেমার বৈশ্বিক তালিকার শীর্ষে এখনো আছে ‘অ্যাড ভিতাম’! সহজ-সরল গল্পের কারণেই হয়তো সারা দুনিয়ার দর্শক এতটা পছন্দ করেছেন ছবিটি। দৈর্ঘ্য কম, সেটাও একটা কারণ হতে পারে। এটা ছবির সবচেয়ে ইতিবাচক দিকও বটে। এমন সিনেমা আর কতক্ষণ সহ্য করা যায়।