 
														
							 
                    গত পাচঁ ছয় বছরে হঠাৎ করে বেড়েছে বাংলাদেশের মানুষের ঘুরে বেড়ানোর হার। সেটা দেশের ভিতরে বা বাইরে। সবখানেই বেড়েছে। আগামীতে আরো বাড়বে বলে আশা করা যায়। শুধুমাত্র দেশের মধ্যে নয়, বিদেশে বেড়াতে যাওয়ার প্রবনতাও বেড়েছে। বিশেষ করে প্রতিবেশি দেশগুলোতে। বাংলাদেশীদের মধ্যে বেড়ানোর জন্য দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি মানুষ যাচ্ছেন ভারতে। বছরে এ দেশ থেকে প্রায় ২০ লাখ মানুষ ভারত বেড়াতে যায়। এছাড়া, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, মিশরে যাচ্ছেন অনেকে। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের তথ্যমতে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ৩০ লাখের বেশি মানুষ দেশের বাইরে ঘুরতে যান। দিন দিন বেড়ানোর প্রবনতা বাড়ছে। আশা করা যায় আগামী পাচঁ বছরে সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
বাংলাদেশের বেড়ানোর প্রবণতা বাড়লেও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি বাংলাদেশে বেড়াতে আসা বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা। যেটা বাড়াতে পারলে বিদেশি আয়ের সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বাংলাদেশের পর্যটনকে। বর্তমানে দেশের আয়ের প্রধান খাত যে তৈরী পোশাক শিল্প সেটাকে বদলে দিতে পারে পর্যটন খাত। আয়ের বিকল্প এই খাতকে আরও গুরুত্ব দেওয়া বেশি প্রয়োজন। দেশে বিদেশি পর্যটকদের আসা যাওয়া দিন দিন বাড়ছে। বিদেশি পর্যটকদের বাংলাদেশ সম্পর্কে আগ্রহ বাড়াতে বিউটিফুল বাংলাদেশ ক্যাম্পেইনের মতো নতুন নতুন প্রচার প্রচারনা চালাতে হবে।আমাদের দেশে এত মিশ্র সংস্কৃতিক (মাল্টি কালচার) লোকজনের বসবাস যে সহজেই একজন বিদেশি পর্যটককে আকর্ষন করা যায়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দেশে বিদেশে প্রচার প্রচারনা বাড়াতে হবে। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে দ্রæত এসব প্রচার প্রচারনা দেশে বিদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।
ভ্রমন পিপাসুদের মধ্যে একটা বড় অংশ মধ্যবিত্ত শ্রেনী। একটা সময় আমাদের দেশের শুধুমাত্র উচ্চ বিত্তরাই ভ্রমন করতো। এখন সব শ্রেনী পেশার বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ-তরুনীদের মধ্যে বেড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে। আগে শুধুমাত্র শীতকালেই মানুষ বেড়াতে যেতো। এখন সারা বছরই বেড়ানোর মৌসুম। এখন উইক এ্যান্ডে বা ২-১ দিনের ছুটি পেলেই অনেকে যাচ্ছে বেড়াতে।
আবিষ্কৃত হচ্ছে নতুন নতুন স্পট। দেশের মধ্যে এখনো মানুষ সবচেয়ে বেশি বেড়াতে যায় কক্সবাজার। এরপর সুন্দরবন, বান্দরবন, রাঙামাটি, সেন্টমার্টিন, সাজেক, সিলেট, জাফলং। পর্যটনকে আরো বেশি জনপ্রিয় করতে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো ভাল করার পাশাপাশি ভালো মানের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়া ট্যুরিষ্ট স্পটের আবিষ্কারকদের ট্যুরিষ্ট এক্টিভ গাইড হিসেবে প্রশিক্ষন দিতে হবে। রেষ্টুরেন্ট এবং রিসোর্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশে সাধারনত তিন ধরনের ট্যুরিষ্ট হয়।
১। ডমেষ্টিক ট্যুরিজম: দেশের মানুষ দেশের মধ্যে বেড়ানো।
২। আউটবাউন্ট ট্যুরিজম: দেশের মানুষের বিদেশে বেড়াতে যাওয়া।
৩। ইনবাউন্ড ট্যুরিজম: বিদেশি পর্যটকদের দেশে বেড়াতে আসা।
বাংলাদেশি মানুষের জীবন মান উন্নত হওয়ার বেড়ানোর প্রবনতাও বেড়েছে। দূরে কোথাও যাওয়া সম্ভব না হলেও খাবার কাছাকাছি ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ, নরসিংদি যাচ্ছেন ইউক এন্ডে। প্রিয়জনকে নিয়ে শুক্র শনিবারে ছুটি কাটিয়ে রোববার আবার কাজে যোগ দিচ্ছেন। শুধুমাত্র গাজীপুরেই গড়ে উঠেছে প্রায় ৫০ টিরও বেশি রিসোর্ট। যার মধ্যে আছে বেশ কিছু পাচঁতারকা মানের।
এছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় গড়ে উঠেছে আধুনিক সুযোগ সুবিধাসহ রিসোর্ট। মূলত ট্রাভেল এবং ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠান এসব জায়গায় ট্যুর অপারেট করে। এছাড়া ফেসবুক ভিত্তিক নানা রকম ট্রাভেল গ্রæপ তৈরী হচ্ছে। যেখানে পরিচিত, অপরিচিত, স্বল্প পরিচিত দলবেধে ঘুরতে যাচ্ছেন। গত কয়েক বছর এর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। তরুনরা এসব গ্রæপ অর্গানাইজ করছে। এতে বেড়ানোর খরচটাও কম। তরুন তরুনীরা বিশেষ করে স্কুল কলেজের ছেলে-মেয়েরা বেড়াতে যাচ্ছে নিয়মিত।
সব মিলিয়ে পর্যটনে গত দশ বছরে একটা বিপ্লব ঘটে গেছে। এখন দরকার এই ধারাটা ধরে রাখা। এক্ষেত্রে সরকারি উদ্যেগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যেগের প্রয়োজন। প্রয়োজন যথাযথ গবেষণা করে বাংলাদেশের ট্যুরিজম সেক্টরকে আরো আধুনিক করা। সময় এসেছে পর্যটকনকে ঢেলে সাজাবার
বিশ্বাস ফজলুল হক
সম্পাদক