শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, ঢাকা থেকে ইউরোপে কার্গো এয়ারফ্রেইট প্রতি কিলোগ্রামে ৬–৬.৫ ডলার পর্যন্ত উঠেছে, যা গত ডিসেম্বরেও ছিল মাত্র ২ ডলার।
একইভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও কিলোগ্রাম প্রতি শিপিং খরচ বেড়ে এখন ৭.৫–৮ ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল কেবল ৩ ডলার।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফএ) পরিচালক নাসির আহমেদ খান টিবিএসকে বলেন, “লোহিত সাগর সংকটের পর গত এপ্রিলে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ বেড়ে যায়। এখনো ওই সমস্যার সমাধান না হওয়ায় খরচ কমেনি। এছাড়া, ঢাকা এয়ারপোর্টের ক্যাপাসিটি চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। যে কারণে এয়ারলাইনগুলো বেশি চার্জ করে এবং অনেক ব্যবসায়ী দিল্লী হয়ে কার্গো এক্সপোর্ট করছেন।”
চলতি সপ্তাহে চাহিদা কিছুটা কমতির দিকে জানিয়ে তিনি বলেন, “বছরে যে পরিমাণ রপ্তানি হয়, সেটা এ সময়ে প্রায় অর্ডার শেষের দিকে আসে। তাই এখন চাহিদা কমায় চলতি সপ্তাহে দাম কিছুটা কম হবে বলে মনে হচ্ছে।”
বিএফএফএ এর তথ্যমতে, ঢাকা বিমানবন্দরের দৈনিক কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা আট মাস আগের ১৫০-২৫০ টন থেকে বেড়ে ৫০০-৬০০ টন হয়েছে।
বিএফএফএ আরও জানিয়েছে, দেশের এয়ার কার্গোর চাহিদা প্রতিদিন ১,০০০-১,২০০ টন; যদিও বর্তমান সক্ষমতা এই চাহিদার তুলনায় অর্ধেকেরও কম।
বিশ্বজুড়ে এয়ারফ্রেইট পরিস্থিতি
ওয়ার্ল্ডএসিডি-এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান দেখা যায়, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সামগ্রিক এয়ারফ্রেইট রেট আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এয়ারকারগোনিউজ এ শুক্রবারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সময়ে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে ভাড়া বেড়েছে ২৪ শতাংশ এবং মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়া (এমইএসএ) অঞ্চল থেকে বেড়েছে ৫৬ শতাংশ।
এমইএসএ অঞ্চলে ভাড়া বাড়ার নেতৃত্বে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত এবং দুবাই; ওই প্রতিবেদনে এমনটিই জানানো হয়েছে।
ওয়ার্ল্ডএসিডি বলেছে, ভারত থেকে ইউরোপে গড় স্পট রেট সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কিলোগ্রাম প্রতি প্রায় ৩.৩০ ডলারে নেমে এসেছে; এর আগে, এপ্রিলে এই রেট উঠেছিল সর্বোচ্চ ৪ ডলারে। তবে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে স্পট রেট বেড়েই চলেছে, গত তিন সপ্তাহ যাবত প্রতি কিলোগ্রামের ভাড়া ৫ ডলার ছাড়িয়েছে; মূলত রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং লজিস্টিক সুযোগ-সুবিধা ব্যাহত হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ওয়ার্ল্ডএসিডি।
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ভাড়া আরও তীব্রভাবে বেড়েছে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রতি কিলোগ্রামেআর ভাড়া ৭.৪৯ ডলারে পৌঁছেছে— যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তিনগুণেরও বেশি।
বিকল্প পথ
খরচ বেড়ে যাওয়ায়, বাংলাদেশের রপ্তানিকারক এবং তাদের আন্তর্জাতিক ক্রেতারা গত কয়েক মাসে ধরে খরচ বাঁচতে বিকল্প রাস্তা হিসেবে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকে ঝুঁকছে।
অন্যদিকে, বিমানবন্দরের ধারণক্ষমতা কম হওয়ার পাশাপাশি মার্চের শেষের দিক থেকে হুথি হামলায় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হাওয়ায় বড় সামুদ্রিক ফ্রেইট কোম্পানিগুলোও এখন লোহিত সাগর ও সুয়েজ খালের পরিবর্তে আফ্রিকা দিয়ে দীর্ঘ সমুদ্রপথই বেছে নিয়েছে।
বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম সমুদ্রপথ লোহিত সাগরে যোগাযোগ বিঘ্নিত হওয়ায় ক্রমবর্ধমান এয়ারফ্রেইটের (বাড়তি বিমান ভাড়া) সম্মুখীন হচ্ছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। গত ৮ মাসে এই রুটের বিমান ভাড়া দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে বলে জানা গেছে।