ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সমলিঙ্গের বিবাহ বা সমকামী বিয়েকে বৈধতা দেয়ার আবেদন নাকচ করে দিয়েছে।
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের এই রায় এসেছে বেশিরভাগ বিচারপতির রায়ের ভিত্তিতে।
আদালত এটাও বলেছে যে এ ধরনের বিবাহকে বৈধতা দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই, বরং আইন তৈরি করার ক্ষমতা সংসদের।
বিচারপতিরা সমকামী দম্পতিদের রেশন কার্ড, পেনশন, গ্র্যাচুইটি এবং উত্তরাধিকারের মতো ব্যবহারিক সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য একটি কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
ভারতের সরকার এবং ধর্মীয় নেতারা সম-লিঙ্গের বিবাহের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন।
সাংবিধানিক অধিকার হিসাবে ভারতের সম-লিঙ্গের বিবাহ করতে চেয়ে ১৮ জন সমকামী দম্পতির পিটিশন এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলা একত্র করে শুনানি করেছিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। সেই শুনানির ভিত্তিতে এই রায় হলো।
রায়ের পরে সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি অধীশ আগরওয়ালা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, “সুপ্রিম কোর্ট যে সম-লিঙ্গের বিবাহতে অনুমতি না দিয়ে যে রায় দিয়েছে, তাকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি।
“কিছু ব্যক্তি ভারতীয় ব্যবস্থাটাকে নষ্ট করে দিতে চাইছিল। কিন্তু আমি খুশি যে সরকার যেটা বলেছিল যে সম-লিঙ্গের বিয়ের অধিকার দেওয়ার ক্ষমতা আদালতের নেই, সেটাই মেনে নিয়েছে আদালত। এই অধিকার শুধু সংসদেরই রয়েছে,” মন্তব্য মি. আগরওয়ালার।
দেশ জুড়ে সমকামী, রূপান্তরকামী সহ সব ধরণের প্রান্তিক যৌনতার মানুষরা মঙ্গলবার অপেক্ষা করেছিলেন আদালতের রায়ের।
রায় দেয়া শুরু হওয়ার পরে প্রধান বিচারপতি যে পৃথক রায় দিচ্ছিলেন, তখনও তাদের মনে আশা জাগছিল যে হয়তো শেষমেশ সম-লিঙ্গের বিবাহতে অনুমোদন দিয়ে দেবে।
কিন্তু সংখ্যাগুরু রায়ের পরে সেই অনুমোদন না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা।
যাদের পিটিশনের ভিত্তিতে এই মামলাগুলি চলছিল, তাদেরই অন্যতম, সমাজকর্মী অঞ্জলি গোপালন জানিয়েছেন, “আমরা বহুদিন ধরে লড়াই করছি, আরও করব। শিশু দত্তক নেওয়ার ব্যাপারেও কিছু বলা হল না। প্রধান বিচারপতি দত্তক নেওয়ার ব্যাপারে যেটা বলেছেন, সেটা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক ছিল, কিন্তু দুঃখের ব্যাপার অন্য বিচারপতিদের সঙ্গে তার রায়ে ঐকমত্য হল না। এটা গণতন্ত্র, কিন্তু আমাদের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার দিতেও তো অস্বীকার করা হচ্ছে।“
বিশেষ বিবাহ আইন, বিদেশী বিবাহ আইন এবং হিন্দু বিবাহ আইনের অধীনে সম-লিঙ্গের বিবাহ করতে চেয়ে ১৮ জন সমকামী দম্পতি ২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পিটিশন করেছিলেন। আবেদনকারীরা সংবিধানের ১৪, ১৯ এবং ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে জীবন, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং মর্যাদার অধিকারের উপর ভিত্তি করে বৃহত্তর সাংবিধানিক অধিকারের দাবি জানিয়েছিলেন।
বিভিন্ন হাইকোর্টেও এ সংক্রান্ত মামলা ছিল।
সুপ্রিম কোর্ট সম্পর্কিত সব মামলা একত্রিত করে এ বছরের মার্চ মাসে শুনানি শুরু করে। তার আগে সরকারকে তাদের মতামত জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
কেন্দ্র সরকার সম-লিঙ্গের বিবাহের বিরোধিতা করে একটি হলফনামা দাখিল করেছিল। তাদের যুক্তি ছিল যে ভারতীয় পরিবারের যে ধারণা চলে আসছে যেখানে একজন পুরুষ এবং এক নারীর মধ্যে মিলন ঘটে। পরিবারের এই ধারণাটির সঙ্গে ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতিও জড়িত।
বিভিন্ন রাজ্য সরকারও সম-লিঙ্গের বিবাহে অনুমতি না দেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করে।
মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠানো হয়। সেই বেঞ্চই মঙ্গলবার রায় দিল।
সুপ্রিম কোর্ট যদি সম-লিঙ্গের বিবাহকে বৈধতা দিত, তাহলে ভারত বিশ্বের ৩৫টি দেশের মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠত।
নেদারল্যান্ডস ২০০১ সালে প্রথম সম-লিঙ্গের বিয়েতে অনুমতি দিয়েছিল।
এশিয়ার মধ্যে সম-লিঙ্গের বিয়েতে প্রথম অনুমোদন দেয় তাইওয়ান, ২০১৯ সালে।
বিবিসি বাংলা