শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০২ পূর্বাহ্ন

সবুজ শহর রাজশাহী, সুফল পাচ্ছে নগরবাসী

  • আপডেট সময় সোমবার, ১২ জুন, ২০২৩

পরিচ্ছন্ন, গোছালো, সবুজে মোড়া শহর হিসেবে আলাদা খ্যাতি আছে রাজশাহীর। পরিবেশ উন্নয়ন ও দূষণ কমানোয়ও রয়েছে বিশেষ নাম। ২০১৬ সালে দূষণ কমানোয় বিশ্বের অগ্রবর্তী শহরের প্রথমে ছিল উত্তরের এ বিভাগীয় শহর। রাজশাহী সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পরিবেশ উন্নয়নে নেওয়া হয় নিয়মিত পদক্ষেপ। লাগানো হচ্ছে গাছ। সবশেষ গত সাড়ে চার বছরে বিভিন্ন ধরনের প্রায় ১২ লাখ বৃক্ষরোপণ করেছে নগর কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিটি করপোরেশনের এ উদ্যোগের কারণে একদিকে যেমন নগরীর সৌন্দর্য বেড়েছে, তেমনি মিলছে নির্মল পরিবেশ। আবার মাত্রাতিরিক্ত গরম থেকেও কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন নগরবাসী।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) তথ্যমতে, গত সাড়ে চার বছরে দুই লক্ষাধিক স্থায়ী বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে নগরজুড়ে। এছাড়া ১০ লাখ হেজজাতীয় (লতাপাতা) বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। ৩৫ কিলোমিটার সড়কে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ লাগিয়ে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। মিলেছে এসবের স্বীকৃতিও। ২০১২ সালের ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে প্রথমবারের মতো পরিবেশ পদক লাভ করে রাসিক। ২০০৯ সালেও বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার পায় তারা। এছাড়া পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে রাজশাহী অর্জন করেছে ‘এনভায়রনমেন্ট ফ্রেন্ডলি সিটি অব দ্য ইয়ার-২০২০’ সম্মাননা।

বিপুল সংখ্যক বৃক্ষরোপণসহ বহুমুখী উদ্যোগের কারণে ২০১৬ সালে বাতাসে ক্ষতিকারক ধূলিকণা কমানোয় বিশ্বের সেরা শহর নির্বাচিত হয় রাজশাহী। সবশেষ ২০২২ সালের ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে দ্বিতীয়বারের মতো পরিবেশ পদক দেন।

সিটি করপোরেশনের উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও সাধারণ মানুষ এখন গাছ লাগাতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। রাজশাহীর প্রতিটি বাড়ির ছাদে ও বাড়ির পাশে মানুষ এখন গাছ লাগাচ্ছে।

সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর প্রধান সড়ক বিভাজক, সড়কদ্বীপ ও ফুটপাতে লাগানো হয়েছে সৌন্দর্যবর্ধক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। সবুজ হয়েছে প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তার সড়ক বিভাজক ও চত্বর। নগরীর বারো রাস্তার মোড়, মোল্লাপাড়া গোল চত্বর, রাজিব চত্বর, ভদ্রা মোড়, তালাইমারি মোড় ও রানিবাজার ঢোপকল চত্বরসহ বিভিন্ন মোড় ও চত্বর পরিকল্পিতভাবে ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছে। বাহারি ফুলের আকর্ষণীয় রং পথচারীদের দৃষ্টি কাড়ছে। নগরীর সবুজ রূপ ধরে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিবেশকর্মীরা।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিবেশ উন্নয়ন কর্মকর্তা সৈয়দ মাহমুদ উল ইসলাম বলেন, আমরা সাড়ে চার বছরে দুই লাখ বড় গাছ ও ১০ লাখ ছোট গাছের পাশাপাশি শীতকালীন সাত লাখ ফুলের গাছ রোপণ করেছি। গত বছরই ফুলের গাছ ছিল দুই লাখ ৫৩ হাজার।

তিনি বলেন, যত বেশি গাছ লাগাবেন তাপমাত্রা তত কমে আসবে। গাছ অক্সিজেন দেয়, এছাড়া কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে। ফলে নির্মল বাতাস পাই আমরা। গাছ তাপমাত্রা কমায়, গাছের কারণে বৃষ্টিও হয়। আমাদের নিজেদের সাড়ে চার বিঘা জমিতে নার্সারি আছে। এখানে আমরা গাছের চারা তৈরি করি। গত তিন-চার বছর থেকে গাছ কিনি না। দাতা সংস্থাও আমাদের দেয়।

এই পরিবেশ উন্নয়ন কর্মকর্তা বলেন, নগরবাসীকে উৎসাহ দিতেই আমরা কার্যক্রম চালাচ্ছি। অনেকেই এখন ছাদকৃষি করছে। রাজশাহীতে ছাদবাগান অন্য জেলার ছাদবাগানের চেয়ে বেশি। গাছপালা লাগিয়ে আমরা সামান্য কিছু তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারোয়ার জাহান বলেন, রাজশাহীতে গাছ লাগানো হচ্ছে। এর সুফল পাচ্ছে নগরবাসী। তবে তাপমাত্রার বিষয়টি অঞ্চলভিত্তিক। রাজশাহীর এই তাপপ্রবাহ হয় নেপাল, বিহার ও রাজস্থান থেকে। এ কারণে শুধু এখানে গাছ লাগালেই তাপমাত্রা কমবে না। সবাইকে মিলেই লাগাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহীর পদ্মার বালির যে তাপ হয়, তাতে এটুকু গাছ লাগিয়ে সমাধান সম্ভব নয়। অন্য নগরের ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা। রাজশাহীতে সড়ক ও বিল্ডিং বাড়ছে। একটি শহরের জিওগ্রাফি ও ফিজিওগ্রাফি মিলিয়ে তাপমাত্রা নির্ধারণ হবে। ব্যাপক হারে গাছপালা লাগানোর ফলে এটি দৃষ্টিনন্দন ও সুন্দর পবিবেশ দেবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com