শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫০ পূর্বাহ্ন

সবুজ গালিচার গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত ডাকছে পর্যটকদের

  • আপডেট সময় শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৪

সমুদ্র পাড়ে সবুজ গালিচা বিছানো এক বিস্ময়কর স্থান গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত। চারপাশে বিস্তৃত জলরাশি। অন্যদিকে কেওড়া বন। এর মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট ছোট খালের চারদিকে কেওড়া গাছের শ্বাসমূল বেড়িয়ে আছে।

এই কেওড়া বন সমুদ্রের অনেকটা গভীর পর্যন্ত চলে গেছে। এর পরিবেশ সোয়াম্প ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ বনের মতো। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, সৈকতজুড়ে সবুজ গালিচা বিছানো। সমুদ্রপাড়ের এই মনোরোম সৌন্দর্য বোধ হয় অন্য কোথায় দেখতে পাবেন না!

এ কারণেই গুলিয়াখালী সৈকতে হাজারও পর্যটক গিয়ে ভিড় জমায়। সবুজ গালিচা বিছানো ছোট ছোট গাছের টিলার মাঝখান দিয়ে এঁকে-বেঁকে গেছে সরু নালা। এই নালাগুলো জোয়ারের সময় পানিতে ভরে উঠে।

সবুজ গালিচার গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত ডাকছে পর্যটকদের

কলকল ধ্বনিতে জোয়ারের ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ আছড়ে পড়ছে সৈকতে। আর আঁকাবাঁকা মাটির ভাঁজে জমছে পানি। মাটির ওপর সবুজ ঘাস ঢেউয়ে পানিতে ভিজে যেন সতেজ হচ্ছে।

মনে হবে সৈকতজুড়ে কেউ যেন বিছিয়ে রেখেছে সবুজ ঘাসের গালিচা। ম্যানগ্রোভ বনে মাঝেমধ্যে দেখা মেলে হরিণের উঁকিঝুঁকি, কখনো কখনো ছুটে চলা লাল কাঁকড়া।

সবুজ গালিচার গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত ডাকছে পর্যটকদের

এ দৃশ্য দেখা যায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতে। মনে হবে যেন কল্পনায় শিল্পীর তুলিতে আঁকা প্রাকৃতিক দৃশ্য। সবুজ গালিচার এই সৈকতে অনায়াসে বেড়িয়ে আসতে পারেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দলে দলে দর্শনার্থীরা আসছেন। কেউ হেঁটে, আবার কেউ নৌকায় চড়ে। সৈকতে আছে দর্শনার্থীদের জন্য ওয়াশ ব্লক, আছে দোকানপাটও। বেড়িবাঁধের পাশে আছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা ও ওয়াশব্লক। পুরোনো খাবারের দোকানের পাশাপাশি নতুন করে নির্মিত হচ্ছে একাধিক রেস্তোরাঁ।

সবুজ গালিচার গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত ডাকছে পর্যটকদের

জানা গেছে, গুলিয়াখালী সৈকতটি দাঁড়িয়ে যায় ২০১৪ সাল থেকে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) একদল শিক্ষার্থী সৈকতটিতে ঘুরতে এসে কিছু ভিডিও ও ছবি ফেসবুক, ইউটিউবে আপলোড করেন। এরপর সৈকতটির সৌন্দর্যের কথা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।

সবুজ গালিচার গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত ডাকছে পর্যটকদের

২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতকে পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করেছে সরকার। উপকূলীয় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ২৫৯ দশমিক ১০ একর জায়গার সৈকতটিকে পর্যটক স্পট হিসেবে স্বীকৃতি দেয় বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

সৈকতে কথা হয় চাকরীজীবি ফখরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, ছুটিতে শহরের যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি পেতে তিনি গুলিয়াখালী সৈকতে এসেছেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে এসে খুব ভালো লাগছে তার।

সবুজ গালিচার গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত ডাকছে পর্যটকদের

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক জানে আলম বলেন, ‘সীতাকুণ্ড পৌর সদরের বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রীদের নিয়ে গুলিয়াখালী সৈকতের বেড়িবাঁধ পর্যন্ত যান। এতে জনপ্রতি ভাড়া নেন ৩০ টাকা। প্রতি অটোরিকশাতে পাঁচজন যাত্রী নেওয়া হয়।’ এ পথে ১২০টি অটোরিকশা আছে বলে জানান তিনি।

গুলিয়াখালী সৈকত ব্যবস্থাপনায় আছে জেলা প্রশাসন। সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সারা বছর গুলিয়াখালী সৈকতে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। বিকেল হলেই দর্শনার্থীরা সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন।’

সবুজ গালিচার গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত ডাকছে পর্যটকদের

‘দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে গাড়ি পার্কিং ও শৌচাগারের ব্যবস্থা আছে। তবে অনেক সময় দেখা যায়, দর্শনার্থীদের কেউ কেউ যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ নোংরা করেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি দিতে তিনি পর্যটকদের প্রতি অনুরোধ জানান।’

সবুজ গালিচার গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত ডাকছে পর্যটকদের

কীভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে কেউ যেতে চাইলে চট্টগ্রামের বাসে করে সীতাকুণ্ড বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে যেতে চাইলে নগরের অলংকার থেকে ৮ ও ১৭ নম্বর বাসে করে সীতাকুণ্ড স্টেশনে নামতে হবে।

সবুজ গালিচার গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত ডাকছে পর্যটকদের

একইভাবে ট্রেনে সীতাকুণ্ড স্টেশনে নামতে হবে। এরপর নামারবাজার সড়কের সেতু এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডে এসে অটোরিকশা ভাড়া করে গুলিয়াখালী বেড়িবাঁধে আসতে হবে।

সবুজ গালিচার গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত ডাকছে পর্যটকদের

থাকা ও খাওয়া

থাকা খাওয়ার জন্য সীতাকুন্ডে বেশ কয়েকটি খাবারের হোটেল ও আবাসিক হোটেল রয়েছে। এছাড়া সীতাকুন্ড পৌর সদর থেকে মাত্র ৪০ মিনিটের পথ চট্টগ্রাম শহরের একেখান ও অলংকারে আছে ভালো মানের থাকা ও খাবারের রেস্টুরেন্ট আছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com