যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দা লেক্সি অ্যালফোর্ডের বয়স মাত্র তেইশ। তবে এই কাঁচা বয়সেই অসাধ্যকে সাধন করেছেন তিনি। আরও দুই বছর আগেই পৃথিবীর সবকয়টি দেশ ঘুরে এই দুরূহ কাজ করা কনিষ্ঠতম ব্যক্তি হিসেবে রেকর্ড বইয়ে স্থান করে নিয়েছেন লেক্সি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেক্সির ইউজারনেম ‘লেক্সি লিমিটলেস’। আসলেই যেন সীমাহীন প্রাণশক্তি আর অনুপ্রেরণার আধার এই তরুণী।
মায়ের ট্রাভেল এজেন্সি থাকার সুবাদে খুব অল্প বয়সেই ভ্রমণ শুরু হয় তার। মাঝে মাঝেই স্কুল ফাঁকি দিয়ে তাকে এখানে সেখানে বেড়াতে নিয়ে যেতেন ভ্রমণপিপাসু মা। আর সেখান থেকেই ভ্রমণের পোকা বাসা বাঁধে লেক্সির মস্তিষ্কে। বয়স ১৮ পেরোনোর আগেই ৭০টি দেশ ঘুরে ফেললেন লেক্সি।
তবে ১২ বছর বয়স থেকে যে স্বপ্ন তার মাথায় ঘুরপাক খেত, তা হলো গোটা একটা বছর পড়াশোনা ও কাজকর্ম থেকে নিজেকে দূরে রেখে কেবল ঘুরে বেড়ানো। সে স্বপ্ন পূরণের জন্য অনেক দিন ধরে একটু একটু করে টাকা পয়সা জমাচ্ছিলেন তিনি। বয়স ১৮ হতে হতে জমিয়েও ফেলেন যথেষ্ট টাকা। এরপরই তার মাথায় আসে নতুন এক আইডিয়া। পৃথিবীর সব দেশ ঘুরে দেখতে পারলে কেমন হয়?
যেই ভাবা সেই কাজ। গুগল ঘেঁটে বের করলেন সবচেয়ে কম বয়সে সব দেশ ভ্রমণ করা ব্যক্তির নাম। জেমস অ্যাস্কুইথ মাত্র ২৪ বছর বয়সে এই কাজ করে দেখিয়েছিলেন। লেক্সি ভাবলেন, ৭০ দেশ তো ঘুরেই ফেলেছি। বয়স ২৪ হওয়ার আগে কি বাকিগুলো দেখা সম্ভব হবে না?
সম্ভব হোক বা না হোক, অন্তত একবার চেষ্টা করে দেখতেই হবে, ভাবলেন লেক্সি। আর এরপরই শুরু হলো তার যাত্রা।
অল্প বয়স থেকে মায়ের এজেন্সিতে কাজ করতে করতে ভ্রমণ সম্পর্কে অনেক খুঁটিনাটি জ্ঞান অর্জন করেছিলেন লেক্সি। কীভাবে অল্প পয়সায় অনেক কিছু ঘুরে দেখা যায় সে ব্যাপারে বেশ ভালো অভিজ্ঞতা হয়ে গিয়েছিল তার। এই অভিজ্ঞতাই তাকে সাহায্য করেছে সম্পূর্ণ নিজের টাকায় সব দেশ ঘুরতে। আর এই ঘোরাফেরার মাঝেই নিজের ব্যবসাও দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন তিনি।
ঘুরতে ঘুরতে নানা ধরনের মানুষের সাথে নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন। ঘোরাফেরার ছবি তুলে আর সে অভিজ্ঞতা নিজের ব্লগে লিখে সেই থেকেই আয়ের উৎস বানিয়ে ফেলেছেন লেক্সি। এখন তার কাজ তরুণদের মধ্যে ভ্রমণের ব্যাপারে আগ্রহ জাগিয়ে তোলা।
অনিরাপত্তায় ভরা এই পৃথিবীতে মেয়েদের একা একা ভ্রমণের ব্যাপারে লেক্সি বলেন, শুরুতেই যে একদম আলাদা সংস্কৃতির দূরদেশে বেড়াতে যেতে হবে এমনটা নয়। প্রথমে নিজের দেশের ভেতরেই বা আশেপাশের দেশে বেড়িয়ে সাহস আর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। একসময় শিখে যাবেন কি করে সম্পূর্ণ অপরিচিত জায়গায় গিয়ে একা একা মানিয়ে নেয়া যায়।
আর ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সবাইকে একা ঘুরতে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তার মতে এটি এমন একটি অভিজ্ঞতা, যা মানুষকে আত্মনির্ভরশীল হয়ে এই অদ্ভুত পৃথিবীকে চিনতে শেখায়। আর শেখায় নিজের জীবনে আশেপাশের মানুষের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে।
নিজের ভ্রমণ করা সবচেয়ে প্রিয় জায়গাগুলোর একটা তালিকাও বানিয়েছেন লেক্সি। তার মধ্যে আছে ভেনিজুয়েলা, পাকিস্তান, মিশর ও আইসল্যান্ড। আর অপ্রিয় জায়গার কথা আসলে তিনি বলেন, ঠিক মানুষের সাথে বেড়াতে পারলে যেকোনো জায়গায় ভ্রমণের অভিজ্ঞতাই হয়ে ওঠে উপভোগ্য আর মূল্যবান।