শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৭ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি, কাল বসছে প্রাণের মেলা

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি তথা ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত মাসটি এলেই বাঙালি বইপ্রেমী, লেখক-প্রকাশকরা উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন এক বিশেষ উৎসবকে কেন্দ্র করে। এই উৎসব ‘বাঙালির প্রাণের মেলা’খ্যাত অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বছর ঘুরে আবারও ভাষার মাসের শুরুর দিনে আগামীকাল পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসছে এই মেলার আয়োজন। ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে কাল বুধবার খুলে যাবে একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৩ এর দুয়ার। এদিন বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলা উদ্বোধন করবেন। এর পর সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে মেলা।

করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলা রং হারিয়েছিল। গত বছর তো প্রথা অনুযায়ী পহেলা ফেব্রুয়ারিতে মেলা শুরুই করা যায়নি। কিন্তু এ বছর করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় মেলার আয়োজনে কোনো কমতি রাখছে না বাংলা একাডেমি। এবার বইমেলা হচ্ছে সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট আয়তনজুড়ে। মেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি স্টল ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উভয় প্রাঙ্গণেই থাকবে ৩৮টি প্যাভিলিয়ন। লিটলম্যাগ চত্বরে ঠাঁই পাবে ১৫৩টি স্টল।

বাংলা একাডেমি এবার ৭টি নতুন বই মেলার প্রথম দিনেই প্রকাশ করবে, যেগুলোর মোড়ক উন্মোচন করবেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন বাংলা একাডেমি ঘোষিত সাহিত্য পুরস্কারও দেবেন তিনি। একাডেমি জানিয়েছে, এবার ৩টি প্যাভিলিয়ন ও শিশু-কিশোরদের উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য তাদের একটি স্টল থাকবে মেলায়। যথারীতি প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত থাকবে শিশুপ্রহর।

গতকাল সোমবার অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৩ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। এতে উপস্থিত ছিলেন একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা, পরিচালক ও বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম, জনসংযোগ-তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক সমীর কুমার সরকার, মেলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশের সিএমও মীর নহবত আলী ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠান ক্রসওয়ার্ক কমিউনিকেশনের এমডি এম এ মারুফ।

কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জানান, বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঝে মেট্রোরেলের কাজ চলমান থাকায় এবার বইমেলায় প্রবেশের গেটের সংখ্যা কমানো হয়েছে। টিএসসি গেট, রমনা কালীমন্দির ও দোয়েল চত্বরে প্রবেশপথ রাখা হয়েছে তিনটি। পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে এবার কোনো প্রবেশপথ নির্মাণ করা হবে না। বইমেলায় আসা পাঠক ও ক্রেতাদের দোয়েল চত্বর হয়ে প্রবেশ করতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানান তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘বইমেলায় পাইরেসি বড় ইস্যু। অনেক সময় দেখা যায়, একই বিষয় নিয়ে ১০-১২টা বই মেলায় আসে। বিশেষ করে অনূদিত বইগুলোর বিষয়ে লেখক-প্রকাশকরা তো মূল প্রকাশক বা লেখকের অনুমতি নেন না। এসব বিষয়ে টাস্কফোর্স কাজ করছে। তবে বলতে হয়, ভালো লেখা, নির্ভুল সম্পাদনার বই এখনও কম। এ জন্য লেখক, প্রকাশকদের আরও সহযোগিতা প্রয়োজন।’

বড় প্রকাশনীগুলো মেলার তথ্যকেন্দ্রে তাদের সব নতুন বইয়ের কপি জমা দিতে চান না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তথ্যকেন্দ্রের বইগুলো বিশ্নেষণ করে আমরা মানসম্মত বইয়ের সংখ্যাটি মেলা শেষে জানাই। মানসম্মত বইয়ের সংখ্যা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। সেটা নিয়ে দায় প্রকাশকদের। তারা সহযোগিতা করলে, সুসম্পাদিত বইগুলো তথ্যকেন্দ্রে জমা দিলে নিশ্চয় মানসম্মত বইয়ের সংখ্যা বাড়বে।’

মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মুজাহিদুল ইসলাম জানান, বইমেলার বিশেষ টাস্কফোর্স ১৯টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনেছে। বাংলা একাডেমি তাদের সতর্ক করেছে। এছাড়া মেলার নিরাপত্তায় প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করবে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। মেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে।

জানা গেছে, এবার মেলায় নতুন-পুরোনো মিলিয়ে ১৩৬টি বই প্রকাশ করবে বাংলা একাডেমি। তার মধ্যে প্রথম দিনে ‘শেখ মুজিবুর রহমান রচনাবলী’, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী- পাঠ বিশ্নেষণ’, ‘আমার দেখা নয়াচীন-পাঠ বিশ্নেষণ’, ‘কারাগারের রোজনামচা-পাঠ বিশ্নেষণ’, হাসান আজিজুল হকের ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’ উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ ‘দ্য লেটার অব সাবিত্রী’র মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি থেকে এবার রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের আত্মজীবনী ‘আমার জীবন, আমার রাজনীতি’ প্রকাশিত হবে। প্রধানমন্ত্রী এই বইটিরও মোড়ক উন্মোচন করবেন।

সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া মেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। তবে দর্শক, ক্রেতা, পাঠকদের রাত সাড়ে ৮টার পর মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মেলার দ্বার খুলবে সকাল ১১টায়; চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। একুশে ফেব্রুয়ারি মেলা খুলবে সকাল ৮টায়।

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সেরা প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’; ‘শৈল্পিক বিচারে’ সেরা বই প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’; শিশুতোষ গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। পাশাপাশি এ বছরের মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হবে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’। এ পুরস্কারগুলো বইমেলার শেষ দিন প্রদান করা হবে।

এদিকে কাল থেকে মেলা শুরু হওয়ার আগে এখন বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্মিত স্টল-প্যাভিলিয়নগুলোয় চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, নির্মাণকর্মীরা কেউ স্টল নির্মাণ করছেন; শিল্পীরা কেউ কাঠামো নির্মাণ শেষে রং-তুলিতে করছেন সাজসজ্জার কাজ। কোনো কোনো প্রকাশনীর স্টলের সামনে প্রকাশক নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দিচ্ছেন নির্দেশনা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিজ প্রকাশনীর স্টলের সামনে অন্বেষা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন বলেন, স্টল নির্মাণের কাজ শেষ; এখন চলছে সাজসজ্জার কাজ। মেলার প্রথম দিন থেকেই পাঠকদের হাতে বই তুলে দিতে পারব আমরা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com