রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে স্থানান্তর হচ্ছে না সচিবালয়। পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে নির্মাণ করা হবে পার্ক। স্থপতি লুই আই কানের নকশা অনুযায়ী ফাঁকা স্থানে লেক, সবুজ স্থান এবং শিশুদের জন্য রাইড, বিশ্রামের জন্য বসার স্থানসহ নান্দনিকভাবে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য ১০৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর। প্রস্তাবটি নিয়ে আগামী ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। সেখানে বিভিন্ন ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ-২) মো. হামিদুর রহমান রোববার বলেন, আমি আগে কিছুদিন এই প্রকল্পটি নিয়ে কাজ করেছি। এখন অন্য দায়িত্বে আছি। তাই বিস্তারিত বলতে পারছি না। এটুকু বলতে পারি আমি যখন থেকে এর দায়িত্ব পেয়েছিলাম তখন থেকেই পার্ক করার সিদ্ধান্ত ছিল। পার্ক তৈরি করাটা নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ।
সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বেশ কয়েকবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে সচিবালয় স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়। এজন্য দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পও তৈরি করা হয়েছিল। চার লাখ ডলার খরচ করে বিশ্বখ্যাত মার্কিন স্থপতি লুই আই কানের জাতীয় সংসদ ভবনসহ পুরো শেরেবাংলা নগরের মূল নকশা দেশে আনা হয়েছিল। ওই সময়ের প্রকল্প অনুযায়ী শেরেবাংলা নগরে ১৪ তলার ভিতের ওপর ৯ তলাবিশিষ্ট চারটি মূল ভবন করার কথা ছিল। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় মিলনায়তন, সম্মেলন কেন্দ্র, মসজিদ, ব্যাংক, ডাকঘর, এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিল। কিন্তু এসব পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে সরকার। এর কারণ হিসাবে জানা যায়, সচিবালয়ে এখন মোট ১১টি ভবন আছে। নতুন করে ভেতরে ৪২০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে । যার একটি ২০ তলা, অন্যটি ১৫ তলা। এছাড়া সচিবালয়ের ভেতরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আরও নানা অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয় এরই মধ্যে। সেই সঙ্গে প্রচুর অর্থের সংস্থান এবং নিরাপত্তার একটি বিষয়ও আছে। এসব মিলেই বাদ দেওয়া হয়েছে সচিবালয় স্থানান্তরের পরিকল্পনা।
গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ খুবই ভালো। কিন্তু কথা হলো যে প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে সেটি যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়। ঝুলিয়ে রেখে ব্যয় বাড়িয়ে জনগণের অর্থ অপচয় করা যাবে না। এছাড়া পার্কের রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার বিষয়টিতে বিশেষ নজর দিতে হবে। সেটি করা না হলে মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পের আওতায় ২০ হাজার গ্যালনের দুটি ভূগর্ভস্থ জলাধার নির্মাণ বাবদ ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৫২ লাখ ৪২ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি গ্যালন ১৩১ টাকা ধরা হয়েছে। পিডব্লিউডি রেট শিডিউল ২০২২ (সংশোধিত) অনুসারে প্রতি গ্যালনের দাম হওয়ার কথা ১১৭ টাকা। সে হিসাবে মোট ৪৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয় ধরার কথা ছিল। এ বিষয়ে পিইসি সভায় প্রশ্ন তোলা হবে। এছাড়া ব্যায়াম ও বাচ্চাদের খেলার সামগ্রী বাবদ এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এইচটি কেবল ও আনুষঙ্গিক কাজে থোক ধরা হয়েছে আরও এক কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এগুলো রেট শিডিউলবহির্ভূত আইটেম হওয়ায় ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির মাধ্যমে বাজারদর বাছাই করে ধরার প্রয়োজন ছিল।
এ বিষয়েও প্রশ্ন তুলবে পরিকল্পনা কমিশন। এছাড়া ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ৩২ থেকে ২১৯নং পৃষ্ঠা পর্যন্ত বিভিন্ন মূলধন খাতের ব্যয় ধরা হয়েছে। কিন্তু কোথাও কোনো প্রাক্কলন প্রণয়নকারী কর্মকর্তার স্বাক্ষর নেই। এ নিয়ে জানতে চাওয়া হবে। এছাড়া পিডব্লিউডির রেট শিডিউল-২০২২ অনুযায়ী স্পেশাল টাইপ ভবনের জন্য অভ্যন্তরীণ পয়ঃনিষ্কাশন বাবদ প্রতি বর্গমিটারের ব্যয় হওয়ার কথা দুই হাজার ৬৯৫ টাকা। কিন্তু প্রস্তাবিত প্রকল্পে ধরা হয়েছে আট হাজার ৯০ টাকা করে। এটি অধিক বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি দুটি সার্ভিস ব্লক ৭৮৪ দশমিক ৮৪ বর্গমিটার নির্মাণ বাবদ তিন কোটি ৯৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এই ব্যয় প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে প্রিলিমিনারি কস্ট এস্টিমেট অনুসরণ করা হয়েছে কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেবে পিইসি সভায়। দুই টন ওজনের ৬টি এসির প্রস্তাব করা হয়েছে।
কিন্তু এ বিষয়ে পার্কের কোথায় এসি বসবে সে বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি। এ সম্পর্কেও জানতে চাওয়া হবে। প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, শেরেবাংলা নগর এলাকায় স্থপতি লুই আই কানের মাস্টারপ্ল্যানে নির্দেশিত মোট ২৯ দশমিক ৭৯ একর উন্মুক্ত জায়গায় পরিকল্পিত ল্যান্ড স্কেপিং ও পার্কের সুবিধাদি স্থাপনের মাধ্যমে সামগ্রিক পরিবেশের উন্নতি ঘটানো হবে। এর মধ্যে ওয়াকওয়ে, খেলার মাঠসহ রমনা পার্কের মতো পার্ক তৈরি করা হবে।