ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাতে সেখানে থেকে কোনো ধরনের বক্তৃতা-বিবৃতি দিতে না পারেন, তা নিশ্চিতে জোর দিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ওমানের মাস্কাটে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গে বাংলাদেশে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সম্ভাব্য বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে ঢাকার। এ ছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপকে যে ভালোভাবে দেখা হচ্ছে না, সেটিও জানানো হবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে।
ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি অনলাইনে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বক্তব্য প্রচার করলে তা ঘিরে দেশে নতুন করে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে শেখ পরিবারের সম্পত্তি ধ্বংসের পাশাপাশি শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও কার্যালয়ের ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চলে। পরে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় ভারত। এমন প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনাকে ‘ফুল স্টপ’ করাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তৎপর হয়ে উঠেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, আগামী ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি ওমানের মাস্কাটে ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর যোগ দেবেন। কনফারেন্সের সাইড লাইনে তাদের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র বলছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপকে যে ভালোভাবে দেখার সুযোগ নেই, তা বৈঠকে এস জয়শঙ্করের কাছে তুলে ধরবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। পাশাপাশি ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনা যেন বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না করে, সেজন্য ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানানো হবে। মূলত শেখ হাসিনাকে ‘ফুল স্টপ’ করানোতে জোর দেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায়, সেই বার্তাও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। শেখ হাসিনাকে থামানোর পাশাপাশি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত দিতেও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বান জানাতে পারেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। এর বাইরে সীমান্ত, ভিসা, তিস্তা ও গঙ্গা চুক্তি নবায়নসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে।
মাস্কাটে ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার। এ ছাড়া কনফারেন্সে যোগ দেওয়া আরও কয়েকটি দেশের মন্ত্রীদের সঙ্গেও তার বৈঠক হতে পারে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।