বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২০ অপরাহ্ন

শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পণ করতে চাইলে কী করতে পারে ভারত

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০২৪

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তাকে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে চাইতে পারে।

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের বর্তমান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন একথা জানান।

তিনি বলেন, হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র এবং আইন মন্ত্রণালয় যদি সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে বাংলাদেশে তাকে ‘ফিরে আসতে’ হবে। একইসাথে তৌহিদ হাসান জানিয়েছেন যে এই ধরনের পরিস্থিতি কূটনৈতিকভাবে ভারতকে বিব্রত করতে পারে। তৌহিদের আশা, ভারত বিষয়টির প্রতি ‘নজর দেবে।’

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কি প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে?

ভারত এবং বাংলাদেশ ২০১৩ সালে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। ২০১৬ সালে ওই চুক্তি সংশোধন করা হয়েছিল। যেন দুই দেশের মধ্যে পলাতক বন্দীদের বিনিময় সহজ এবং দ্রুত হয়। এই চুক্তিটি বেশ কিছু ভারতীয় পলাতক, বিশেষ করে উত্তর পূর্বের বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে চাপে ফেলেছিল। ওই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো তার আগে বাংলাদেশে লুকিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে কাজ করতো। একই সময় বাংলাদেশও জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর মতো সংগঠনগুলোর জেরে সমস্যায় পড়েছিল। জেএমবির অপারেটিভরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামের মতো রাজ্যে লুকিয়ে থাকত। ভারত এবং বাংলাদেশের সেই চুক্তির জেরে ২০১৫ সালে ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম (উলফা)-এর শীর্ষনেতা অনুপ চেটিয়াকে সফলভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রত্যর্পণ করা সহজ হয়। তারপর থেকে প্রত্যর্পণের চুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশ আরো একজন পলাতককে ভারতের কাছে হস্তান্তর করেছে।

সূত্রের খবর, ভারতও এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের পলাতক কয়েকজনকে ওই দেশের কাছে হস্তান্তর করেছে।

চুক্তি অনুযায়ী, যাদের বিরুদ্ধে আইনিপ্রক্রিয়া চলমান বা যাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ আনা হয়েছে অথবা যারা আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন অথবা যাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা রয়েছে বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের গ্রেফতারের জন্য খুঁজছে অথবা যারা প্রত্যর্পণ করার মতো অপরাধ করেছেন বলে আদালত গণ্য করবেন, সেসব ব্যক্তিকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাবে বাংলাদেশ ও ভারত।

চুক্তি অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির ন্যূনতম এক বছর সাজা হলে ওই ব্যক্তি প্রত্যর্পণযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। আর্থিক অপরাধও এর মধ্যে গণ্য হবে। চূড়ান্তভাবে প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধ এমন হবে যে ওই অপরাধ দুই দেশেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

চুক্তিতে আরো বলা হয়েছে, ‘কোনো অপরাধ করার চেষ্টা বা অপরাধে সহযোগিতা, প্ররোচনা দেওয়া, উসকানি দেওয়া অথবা সহযোগী হিসেবে কাজ করাও’ প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

এই নীতিমালার কি ব্যতিক্রম আছে
জবাব হচ্ছে, হ্যাঁ। এই চুক্তিতে বলা হয়েছে, অপরাধের মধ্যে ‘রাজনৈতিক ধরন’ থাকলে প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে। তবে অপরাধের ধরনের সীমা বিবেচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। ‘রাজনৈতিক’ বলে বিবেচনা করা যায় না, প্রত্যর্পণের এমন অপরাধের তালিকাই বরং দীর্ঘ।

হাসিনাকে কি বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করা যাবে
হাসিনা একজন রাজনৈতিক খেলোয়াড় এবং তিনি ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে পারেন। অবশ্য যেসব অপরাধের অভিযোগ এনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, সেগুলোকে প্রত্যর্পণ চুক্তিতে রাজনৈতিক অপরাধের সংজ্ঞা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হত্যা, জোরপূর্বক গুম ও নির্যাতনের ঘটনা।

২০১৬ সালে চুক্তির ১০ (৩) অনুচ্ছেদ সংশোধনের ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ওই অনুচ্ছেদে আগে ছিল, কোনো ব্যক্তির প্রত্যর্পণের জন্য অনুরোধ করা দেশকে সংঘটিত অপরাধের প্রমাণ সরবরাহ করতে হবে। সংশোধনের পর এখন একটি গ্রহণযোগ্য আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেই প্রত্যর্পণপ্রক্রিয়া শুরু করা যাবে।

অনুরোধ এলে ভারত কি হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে
ভারত চাইলে না–ও পাঠাতে পারে। এই চুক্তিতে প্রত্যর্পণের অনুরোধ যাচাই-বাছাই করে প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ রয়েছে। চুক্তির ৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো দেশের প্রত্যর্পণের অনুরোধ অন্য দেশ প্রত্যাখ্যান করতে পারে, যদি ওই ব্যক্তির প্রত্যর্পণসংক্রান্ত অপরাধের বিচার তিনি যে দেশে আছেন, সেখানে করার কোনো সুযোগ থাকে। তবে শেখ হাসিনার মামলার ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না।

তাহলে ভারত কী করবে
ঢাকায় যে–ই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, ভারতকে সেই সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। একই সঙ্গে নয়াদিল্লির দীর্ঘদিনের বন্ধু ও মিত্র শেখ হাসিনার পাশেও অবশ্যই তাদের থাকতে হবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) সাবেক এক কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার মধ্যেই কি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ নিহিত? না, মোটেই তা নয়। চুক্তির বৈধতা কোনো বিষয় নয়। উভয় পক্ষের আইনজীবী রয়েছেন।

সূত্র :  দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com