বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৮ অপরাহ্ন

শুভ্র কাশফুলের স্নিগ্ধতায় সেজেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪

ষড়ঋতুর এই বাংলায় যে দুটি ঋতু নিয়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি থাকে তা হলো শরৎ ও বসন্ত। প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য নিয়ে উপমার হেরফের খুবই সামান্য হলেও ভালোলাগার ব্যাপারগুলো নিতান্তই আপেক্ষিক। তবে শরতের কাশফুলের সৌন্দর্য ও স্নিগ্ধতার মায়ায় জড়ায়নি এমন মানুষ মেলা ভার।

গোলাপ, জবা, কৃষ্ণচূড়ার লাল, কদম, গাঁদার হলুদ, পাতাবাহার, রজনীগন্ধা, কাঠগোলাপের সৌন্দর্য ছাপিয়ে সাদা কাশফুল অবিরাম বাংলার যাপিত সৌরভের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

সেই নির্মল কাশফুলের মায়ায় জড়িয়ে আছে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কোল ছুঁয়ে বহমান ব্রহ্মপুত্র নদ। সেই স্নিগ্ধতায় সেজেছে বাকৃবি ক্যাম্পাসও। নিয়ম ভেঙে এবার শরতের শেষ বেলায় এসে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে এই ফুলটি। নামে ফুল থাকলেও এটি মূলত এক ধরনের বন্য ঘাস, যার গোড়া সহজে পচে না। ফলে প্রতিকূল পরিবেশে সুপ্ত অবস্থায় থাকে, কিন্তু অনুকূল পরিবেশে নতুন করে জন্মায়।

বাকৃবির উদীচী ঘাট সংলগ্ন নদের দুই পাড়েই এবার পালকের মতো নরম ও ধবধবে সাদা দোদুল্যমান কাশফুলের সমাহার। ছোটবেলায় কবিতায় পড়া ‘দুই ধারে কাশবন, ফুলে ফুলে সাদা’ পঙক্তির মতোই অনন্য শরত ঋতুরাণী। কাশফুল প্রিয়জনের জন্য উপহার হিসেবে দেওয়ার মতো ফুলও নয়। তবে ক্যাম্পাসের কাশফুলের মধ্যে সবারই অজানা আকর্ষণ রয়েছে। নীলচে আকাশে জলহারা শুভ্র মেঘের পদসঞ্চার, ভরা নদীর জলে ভেসে বেড়ানো পালতোলা নৌকা আর দিগন্তজোড়া কাশফুলের দোল খাওয়ার দৃশ্য নিঃসংকোচে আন্দোলিত করে শূন্য হৃদয়কেও।

শরতের বিকেলটা যেন সত্যিই অন্যরকম চমৎকার। কখনও আলো ঝলমলে রোদ, কখনও মেঘের নিবিড় ছায়া, আবার কখনও বৃষ্টি শেষে সাতরঙা হাসিতে ফুটে ওঠা রংধনু। এই বিস্তীর্ণ আকাশ, ফুরপুরে বিমল হাওয়া, খোলা মাঠ, সূর্যাস্ত আর কাশবন সব মিলিয়ে সঞ্চার করে রোমাঞ্চকর উন্মাদনা। তাই তো কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন-  ‘কাশফুল মনে সাদা শিহরণ জাগায়, মন বলে কত সুন্দর প্রকৃতি, স্রষ্টার কী অপার সৃষ্টি!’

কাশফুলের এই মায়ায় বিমোহিত হয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ছুটে আসেন ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় ও আশেপাশের দর্শনার্থীরা ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে ছুটে আসেন কাশফুলের এই রাজ্যে। কেউ আপন মনে গান গেয়ে, কেউ কবিতা পড়ে, কেউ ভিডিও কিংবা ছবি তুলে মিশে যেতে চান নিখুঁত শুভ্রতায়। পরিবারের সঙ্গে আসা শিশুরা মনের আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে সাদা কাশফুলগুলো সংগ্রহ করছে। সেই কাশফুল হাতে নিয়ে নৌকাভ্রমণ যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা। বিকেল হতেই একরকম বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয় এটি। ঘাটে বাধা সারি সারি নৌকাগুলোর কোনটিই ইঞ্জিনচালিত নয়। বরং বৈঠা হাতে মাঝির খেয়া পারাপার উপভোগ করতে করতে শৈশবের দিনগুলোতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

শুধু ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন খেলার মাঠ, স্টেডিয়ামের পেছনের মাঠেও দেখা মিলেছে ছোট ছোট কাশবনের। বিশেষত ছুটির দিনে এসব কাশবন দেখতে ভিড় করেন বাকৃবির শিক্ষার্থীসহ দর্শনার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. কাউসার আহমেদ বলেন, কাশবনে ঘুরতে এসে খুবই ভালো লাগছে। সাথে বাতাসের চঞ্চলতা আমাকে বিমুগ্ধ করেছে। ইচ্ছে করছে এখানেই থেকে যাই। এখানে এলে সবারই মন ভালো হতে বাধ্য। প্রকৃতি সবসময়ই এমন শুভ্র থাকুক, মায়ায় জড়িয়ে রাখুক।

আরেক শিক্ষার্থী সাদিয়া মীম বলেন, কাশফুলের কাছে এলেই যেন মন জুড়িয়ে যায়। সারাদিনের ব্যস্ততার পর মনের খোরাক মেটাতে আদর্শ একটি জায়গা। শরতের গোধূলী বেলার প্রাণোচ্ছল মুহূর্তগুলো বাকৃবির সবুজ অরণ্যে বারবার ফিরে আসুক।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com