ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট দেশে-বিদেশের সকল পর্যায়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
ই-পাসপোর্টের পাশাপাশি ই-গেট, ই-টিপি ও ই-ভিসা চালু করার প্রক্রিয়াও চলমান। বর্তমানে ৬৪টি জেলার ৭২টি অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। বিদেশের ৮০টি মিশনের ৩২টিতে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চলছে। শীঘ্রই সব মিশনে এর কার্যক্রম চালু করা হবে। এ পর্যন্ত ৯৮ লাখ ৩২ হাজার ই-পাসপোর্ট জনগণের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বিদেশের যেসব মিশনে এখনো ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করা হয়নি, সেসব মিশনে দ্রুত চালু করার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ই-পাসপোর্ট, ই-ভিসা, ই-টিপি (ট্রাভেল পারমিট) এবং স্থল ও বিমানবন্দরগুলোয় ই-গেট স্থাপনসহ বেশ কিছু উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী ওই দিন প্রবাসীদের জন্য ই-পাসপোর্ট চালুর বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন উপলক্ষে সর্বশেষ গত ২০ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নূরুল আনোয়ার জানান, প্রধানমন্ত্রীর সাতটি নির্দেশনার মধ্যে পাঁচটি বাস্তবায়িত হয়েছে। একটি আংশিক হয়েছে। আরেকটি বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় নির্মাণের জন্য শেরেবাংলা নগরে সরকার জমি বরাদ্দ দিয়েছে। সেখানে ১০ কাঠা জমির ওপর ভবন নির্মাণ শেষে সেখানে ডেলিভারি সেন্টার স্থানান্তর করা হবে। সেখানেই ই-ভিসার কার্যক্রম ও ভিসা শাখা চালু করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ই-টিপি রাজস্ব খাত থেকে বাস্তবায়নের জন্য ইনফো টেক লিমিটেডের সঙ্গে ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর চুক্তি সই করা হয়েছে, যা ইতোমধ্যে বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ই-টিপি ডিজাইন গত ১৩ এপ্রিল সুরক্ষা সেবা বিভাগ অনুমোদন দিয়েছে। পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত ডিজাইন অনুযায়ী চূড়ান্ত নমুনা কপি সরবরাহের জন্য ইনফো টেককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ই-ভিসা বাস্তবায়নে সমঝোতা স্মারক সই করেছে। পরে এ বিষয়ে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। ই-ভিসা বাস্তবায়নে এ কমিটি ইতোমধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এ ছাড়া ই-ভিসা কার্যক্রম বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠানো হয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ই-গেট স্থাপন করা হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ইতোমধ্যে দেশের সব পাসপোর্ট অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। বিমানবন্দরে ই-গেট স্থাপন করা হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। শীঘ্রই ই-ভিসা কার্যক্রমও শুরু করা যাবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১৮ দেশে ই-পাসপোর্ট চালু রয়েছে। বাংলাদেশ ১১৯তম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্ট চালু করেছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ই-পাসপোর্ট চালুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। এর আগে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট চালু হয়।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, খুব দ্রুত ও সহজে ভ্রমণকারীরা যাতায়াত করতে পারবেন। ই-গেট ব্যবহার করে তারা যাতায়াত করবেন। ফলে বিভিন্ন বিমানবন্দরে তাদের ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এর মাধ্যমে দ্রুত তাদের ইমিগ্রেশন হয়ে যাচ্ছে। একজন ভ্রমণকারী ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় তথ্যাগারের (পাবলিক কি ডাইরেক্টরি- পিকেডি) সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সম্পর্কে তথ্য জানতে পারবেন।
ই-গেটের নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাঁড়ালে ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। থাকবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের ব্যবস্থাও। সব ঠিক থাকলে তিনি ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবেন। তবে কোনো গরমিল থাকলে লালবাতি জ্বলে উঠবে। তখন সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা হস্তক্ষেপ করবেন। কারও বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলে, সেটিও সঙ্গে সঙ্গে জানা যাবে। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও) এই পিকেডি পরিচালনা করে। ফলে ইন্টারপোলসহ বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য যাচাই করতে পারে।