ইউক্রেন যেন সন্তান তৈরির কারখানা। নিঃসন্তান দম্পতিদের জীবনে সন্তান-সুখের পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি।
অক্ষম দম্পতিরা সারোগেসির (একজন নারীর গর্ভে অন্য দম্পতির সন্তান ধারণের পদ্ধতিকে সারোগেসি বলা হয়) মাধ্যমে সন্তানের স্বপ্নপূরণ করছেন এখানে। অবশ্য তার জন্য কিছু শর্তও মানতে হয়। পরিষেবা বুঝে দিতে হয় দাম। তবে উপযুক্ত মূল্য দিলে সন্তান ধারণের এমন কোনো পরিষেবা নেই, যা পাওয়া যাবে না ইউক্রেনে।
পরিসংখ্যান বলছে, বিদেশি বাবা-মায়েদের জন্য প্রতিবছর সারোগেসি প্রক্রিয়ায় অন্তত আড়াই থেকে তিন হাজার সন্তানের জন্ম হয় ইউক্রেনে
এই বিদেশি বাবা-মায়েদের এক-তৃতীয়াংশই আবার চীনের বাসিন্দা। তথ্যটি দিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএফপি।
তারা এ-ও জানিয়েছে, ভারত এবং থাইল্যান্ড আইন করে বিদেশিদের জন্য সন্তান ধারণের বাণিজ্যিক সুবিধা বন্ধ করে দেয়াতেই ইউক্রেনের এই শিল্পের ভাগ্য খুলেছে।
বাণিজ্যিকভাবে সন্তান ধারণের শিল্প এখন গোটা দুনিয়ায় ৫০০ কোটি ইউরোর। ইউক্রেনের দখলেই তার অধিকাংশ।
ঠিক কত টাকা দিতে হয় সন্তান ধারণের জন্য? কী কী শর্ত পালন করতে হয়? অতিরিক্ত কী পরিষেবা কত টাকা দিলে পাওয়া যায়?
সাধারণত ইউক্রেনে সারোগেসির মাধ্যমে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ন্যূনতম খরচ ২৫ হাজার ইউরো। বাংলাদেশি টাকায় ২৫ লাখেরও বেশি (১ ইউরো ১০০.৩৫ টাকা হিসাবে)। তবে এই খরচ বাড়তে পারে ৭০ হাজার ইউরো পর্যন্ত, যা বাংলাদেশি টাকায় ৭০ লাখের বেশি।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি সারোগেসি ক্লিনিক ‘বায়োটেক্সকম’ জানায়, দেশের অর্ধেক সারোগেসি প্রক্রিয়া ৩৯ হাজার ৯০০ ইউরো বা ৪০ লাখ ৩ হাজার ৮৮১ টাকার মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যায়।
এই সংস্থারই ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, চাইলে পুত্রসন্তান বা কন্যাসন্তানের জন্যও চেষ্টা করতে পারেন সন্তানেচ্ছু বাবা-মায়েরা। সেই সুযোগও দেয় ইউক্রেন। তবে তার জন্য গুনতে হয় বাড়তি টাকা।
কীভাবে এমনটা সম্ভব? বায়োটেক্সকম জানায়, এক্ষেত্রে দুটি বিকল্প রয়েছে। ছেলে বা মেয়ে বেছে নিতে দু
এছাড়াও সারোগেসি প্রক্রিয়ায় সন্তান ধারণের জন্য সন্তানেচ্ছু বাবা-মায়েদের বেশ কিছু শর্ত পালন করতে হয়। ইউক্রেনের নিয়মে কোনো সমকামী দম্পতি এই প্রক্রিয়ায় সন্তান ধারণ করতে পারবেন না। আইনত বিবাহিত নারী-পুরুষ দম্পতিই সারোগেসি প্রক্রিয়ায় সন্তান ধারণের সুযোগ পাবেন। এছাড়া ওই দম্পতি যে সন্তানের জন্ম দিতে অক্ষম তার বৈধ মেডিক্যাল প্রমাণপত্রও থাকতে হবে।
তবে এত নিয়মকানুনের আড়ালে আসল জায়গাতেই নাকি গণ্ডগোল! যে ধাত্রী-মায়েদের ওপর ভর করে ইউক্রেনের এই বাণিজ্যিক সাফল্য তাদের অভিযোগ, সন্তান ধারণের পারিশ্রমিক নাকি মাঝে মধ্যেই বকেয়া থেকে যায়।
রোজগারের লক্ষ্যে গর্ভ ভাড়া দেন এই মায়েরা। তবে তাদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয় বলে সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন ব্রিটেনের এক দম্পতি।
ফেসবুকের একটি বিজ্ঞাপন দেখে ওই দম্পতি ইউক্রেনে গিয়েছিলেন। তারা জানান, সেখানে এই ধাত্রী-মায়েদের থাকার ব্যবস্থা দেখে বিস্মিত হয়েছেন তারা। অভিযোগ, এই মায়েরা শীতাতপহীন বাসায়, অস্বাস্থ্যকর পরিবশে বাস করেন।
সারোগেসি সংক্রান্ত এ যাবৎ হওয়া বহু সমীক্ষায় দেখা যায়, এই প্রক্রিয়া ধাত্রী-মায়েদের শরীর এবং মনের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। তার ওপর তাদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রেখে, তাদের ভালো থাকার বিন্দুমাত্র পরোয়া না করে যেভাবে ইউক্রেন তাদের ব্যবসা বাড়িয়ে চলেছে, তার নিন্দা করেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।